সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের শিক্ষা আন্দোলনে শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলো বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ, বিএনপিন ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। রোববার রাজধানীর হাইকোর্ট ও শিক্ষাভবন সংলগ্ন শিক্ষা অধিকার চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।
শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে এই শিক্ষা দিবসে। শেখ হাসিনার সরকার বারবারই শিক্ষা দিবসের আলোকে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত করার চেষ্টা করেছেন। সেই কারণে বাজেটের ২০ ভাগের বেশি শিক্ষাখাতে ব্যায় করা হয়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির আওতায় এসেছে। আমাদের তরুণদের স্বপ্নের শিক্ষা ব্যবস্থা স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা, যেটি অর্থনৈতিক রুপান্তরের মধ্য দিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেই লড়াই বেগবান রাখতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা বলেন, ৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বিশেষ দিন। পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ছাত্র সমাজের অধিকার অর্জনের অনুপ্রেরণার দিন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে থেকে দেশে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালু হলেও পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং প্রশিক্ষণের অভাবে এই কার্যক্রমও আলোর মুখ দেখছে না।
ছাত্রদল ঢাবি শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শাখা ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনরাও শহীদদের স্মরণে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের তৎকালীন স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের দুই মাস পর ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ৩০ ডিসেম্বর একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। ‘শরীফ কমিশন’ নামে খ্যাত ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন তৎকালীন শিক্ষা সচিব এস এম শরীফ। ১১ সদস্যের এ কমিশন ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ আগস্ট প্রতিবেদন দেয়। এ কমিশন শিক্ষা বিষয়ে যেসব প্রস্তাব দিয়েছিলো সেগুলো শিক্ষা সংকোচনের পক্ষে ছিলো। আর সে কারণে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিলো এ দেশের ছাত্রসমাজ। সেদিন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম মোস্তফা, বাবুলসহ অনেকে। আটক করা হয় নাম না জানা অনেককেই। শেষ পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দীর প্রচেষ্টায় সরকার ২০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়। সেই থেকে শহীদদের স্মরণে প্রতিবছর এ দিনটিকে ‘শিক্ষা দিবস’ হিসাবে পালন করা হয়।