দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি এখন ভাড়া খাটছে। আইডি ভাড়া প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান সাধারণ শিক্ষকদের ফাঁদে ফেলে রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের ইউজার আইডিতে প্রবেশ করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নয়ছয় করছেন। আবার কোনো কোনো তথ্য মুছেও দিচ্ছেন। আর এই চক্রের তত্ত্বাবধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনলাইনে বদলি নিয়ে ব্যপক জালিয়াতি করা হয়েছে। এক শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রীকে বদলির সুযোগ করে দিতে অন্য শিক্ষকদের আইডি থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মুছে দিয়ে ভুল ও মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশিত করা হয়েছে। ফলে ১৩ জন শিক্ষকের বদলি আবেদন বাতিল হয়ে গেছে। এদিকে আবেদন বাতিল হওয়া শিক্ষকরা এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, শিক্ষকদের বদলির সার্ভার খুলে দেয়ার পর জেলার ৬৮৮টি শূন্য পদের বিপরীতে ৩৭৮ জন শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করেন।
এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুরাট ও মাওলানাবাদ ক্লাস্টারে মহা জালিয়াতির তথ্য ফাঁস হয়ে পড়ে। মাওলানাবাদ ক্লাস্টারে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি করেন
এক্ষেত্রে তাকে স্কুলে যেতে হয়না বলেও অভিযোগ। এই তৌহিদুজ্জামান বিভিন্ন প্রধান শিক্ষকের আইডিতে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিলিট করে দিয়ে টাকা দাবি করে থাকেন বলে কথিত আছে। অভিযোগ আছে শিক্ষা কর্মকর্তার স্ত্রী সুরাইয়ার আইডিতে স্কুলের দূরত্ব ছিল ১৩ কিলোমিটার। কিন্তু অনলাইনে বদলির আবেদনের সময় সেখানে দেখানো হয় ২৭ কিলোমিটার। সেশন স্কোর বাড়ানোর জন্য প্রকৃত তথ্য গোপন করা হয়। সুরাইয়া পারভিনের আইডিতে পূর্ববর্তী কর্মস্থল ছিল বাকড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কিন্তু স্কোর বৃদ্ধির জন্য পূর্বের কর্মস্থলের তথ্য সরিয়ে ফেলা হয়। এতে তিনি ২৫ এর মধ্যে ২৫ পেয়ে নজীর সৃষ্টি করেন। সুরাট ক্লাস্টারের একাধিক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, তাদের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড একাধিকবার পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তাদের ‘ভাড়’ হিসেবে পরিচিত পূর্ব তেঁতুলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান এসব অপকর্ম করে থাকেন বলে অভিযোগ। তার কাছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খালেকুজ্জামানের আইডি ও পাসওয়ার্ড থাকার কারণে শিক্ষকদের হয়রানি করেন হরহামেশা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের টিইও শাহাজান রিজু বলেন, তার স্ত্রীকে যথাযথ আইন মান্য করেই বদলির পক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। অনলাইন জালিয়াতির যে তথ্য অন্যান্য শিক্ষকরা করছেন তা সত্য নয় বলে তিনি জানান।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা জানান, এ বিষয়ে তিনজন শিক্ষকের আবেদন পেয়েছি। আমি যাচাই বাছাইয়ের জন্য উপজেলায় পাঠিয়েছি। সেখান থেকে মতামত আসার পরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মসলেম উদ্দীন, ভুয়া ও জালিয়াতি তথ্য দিয়ে স্কোর বাড়ানোর কথা আমি শুনেছি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার অনুমোদন গ্রহণের আগেই অনেক শিক্ষক বদলির ম্যাসেজ পেয়ে যান কীভাবে তাই আমি বুঝতে পারি না। তিনি বলেন, ঝিনাইদহের বদলি নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ আমি পেয়েছি। বিষয়গুলো সুক্ষ্ণভাবে দেখা হচ্ছে। কেউ যদি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তার বদলির আদেশ বাতিল করা হবে বলেও তিনি জানান।