শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষর দিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষর দিয়ে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, কক্সবাজার |

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা (একাডেমিক সুপারভাইজার) নুরুল আবছার নিজ অফিসে জন্ম নিবন্ধন ফরমে স্বাক্ষর করে সেবা প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের দৃশ্যটি গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত একটি ভিডিয়োতে দেখা যায়। এ ভিডিয়োটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ সহ স্কুলের অভিভাবকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। 

অভিযোগ উঠেছে তিনি টেকনাফ উপজেলার একই পদে প্রায় ১৬ বছর। বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের ফলে ঘুষ, অনিয়ম-দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতায় জর্জরিত হয়ে গেছেন।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নূরুল আবছার বিগত ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে টেকনাফে যোগদানের পর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাথে কৌশলে সখ্যতা গড়ে তোলে একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ালেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে চাপের মুখে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বান্দরবানে শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও কয়েক মাসের মাথায় উখিয়া -টেকনাফের সাবেক এমপি বদির ক্ষমতার প্রভাব কাটিয়ে ফের বদলি হয়ে টেকনাফ ফিরে আসেন।

আরও জানা গেছে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারের নামে উপজেলা মার্কেটে জমি বরাদ্দ নিয়ে দোকান, ঘর বানিয়ে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগে পাশাপাশি সাতকানিয়া, বান্দরবানে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রতিটি ভোটার ও জন্ম নিবন্ধন ফরমের স্বাক্ষরের বিপরীতে ৫০০-১০০০ টাকা হাতিয়ে নেন।

এবং গেলো ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্ব অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগে এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বহিষ্কৃত হলেও পরবর্তীতে সাবেক এমপি বদির সুপারিশে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।গত বছর, উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (এসএডিপি) প্রকল্পের আওতায় ৪৫ লাখ টাকা অনুদান দেয়। ওই বরাদ্দ থেকে উপর মহলের নামে

করে প্রতিটি স্কুলের ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ থেকে সে ৫০ হাজার টাকা করে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ জানিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। এ সংক্রান্ত দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশের পর বেকায়দায় পড়লেও তা আবার সামলে নেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তিনি একাডেমি সুপারভাইজার হলেও তার মূল দায়িত্ব এড়িয়ে গত এক যুগ ধরেই কর্মসৃজন প্রকল্পের ট্যাগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করে সময় পার করছেন। রয়েছেন জন্ম-নিবন্ধন কমিটির সচিবের দায়িত্বে। উপজেলার পরিষদের পেছনে বাসায় বাসা ভাড়া নিয়ে সকাল বিকাল কোচিং সেন্টার নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।এবং জন্ম নিবন্ধনের সেবা প্রার্থী এক ব্যক্তির কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের একটি ভিডিয়োতে দেখা গেছে  সেখানে তিনি ফাইলে স্বাক্ষরের  বিনিময়ে টাকা নিয়ে পকেটে ঢুকাচ্ছেন। এটা তার ঘুষ বাণিজ্যের সামান্য একটি অংশ মাত্র।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, একাডেমির সুপারভাইজার নুরুল আবছার টেকনাফ উপজেলার প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসা  ভিজিটের সময় দুই থেকে তিন হাজার টাকা পরিদর্শন ফি'র নাম করে এ টাকা গুলো আদায় করেন।যা বিভিন্ন স্কুলের ভাউচার  গুলো দেখলে প্রমাণিত হবে। এবং সে যেহেতু শিক্ষা কর্মকর্তা দায়িত্বে তাই প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেনা বলে তিনি জানায়। 

শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি সাইফুল্লাহ জানান, একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছার উপরের মহলের নাম করে সবার কাছ থেকে টাকা আদায় করার ফলে তিনি অনুদানের টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছেন। 

একাডেমিক সুপার ভাইজার নুরুল আবছার ঘুষ গ্রহনের ভিডিয়োটি দেখে সোলতান আহমেদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহনের ভিডিয়ো টা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। এবং সে নিজেইও জন্ম নিবন্ধন ও ভোটারের কাগজের ফরমের স্বাক্ষর নিতে গেলে তাকেও ঘুষের টাকা দিতে হয়েছে।টাকা না দিলে উল্টো ধমক দেয়।

এই ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নুরুল আবছারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসব অভিযোগের ব্যাপারে কিছুই জানিনা। এমনিতেও বদলির জন্য চেষ্টা করছি। ঘুষ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সরাসরি  কথা বলা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ জানান।

মাধ্যমিক শিক্ষা ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক প্রফেসর নারায়ন বলেন, কোচিং ও ঘুষ এবং দায়িত্বের প্রতি অবহেলা এসব ঘটনা ছাড় দেওয়া যায়না। তার বিরুদ্ধে উত্তাপিত অভিযোগ যাচাই -বাচাই করা হবে। সত্যতা পাওয়া গেলে কর্মস্থল থেকে সরিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ করা হবে বলে তিনি জানায়। 

এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, একাডেমি সুপার ভাইজারকে এ ঘটনায় আপাতত তার কর্মস্থলে না যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে এবং এ বিষয়ে ডিসি স্যার সহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। এবং তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানায়।

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033740997314453