…. এনসিটিবি, শিক্ষাবোর্ড ও মাউশি-সর্বত্রই কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করছেন, নিয়ন্ত্রণ করছেন, কিন্তু শিক্ষকদের হয়রানি কি দূর হয়েছে, ঘুষ বাণিজ্য কি বন্ধ হয়েছে ….
শিক্ষা ক্যাডার সৃষ্টির পূর্বে সরকারি কলেজের শিক্ষকরা জুডিশিয়াল সার্ভিসের মতো শিক্ষা সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আমি মনে করি, শিক্ষকদের মর্যাদা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ক্যাডারভুক্ত করা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬৬টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণের আত্তীকরণ বিধি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে করা হয়। এ বিধির ফলে আত্তীকৃত শিক্ষকরা শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকৃত হন কোনোরূপ পরীক্ষা ছাড়াই। ক্যাডারে আত্তীকৃত হওয়ার পর পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নিয়ে চলে মামলা। ফলশ্রুতিতে ১৯৮৪-১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পদোন্নতি বন্ধ থাকে।
শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকরণ হয়েছে বিভিন্ন সময়ে এবং আত্তীকরণ বিধি ১৯৯৮ ও ২০০০ প্রণয়নের মাধ্যমে বেসরকারি থেকে সরকারি হওয়ার ফলে শিক্ষা ক্যাডারে আত্তীকৃত হয়ে সরাসরি বিসিএস ক্যাডারদের চেয়ে সিনিয়রিটি দাবি করে মামলা করেন আত্তীকৃত শিক্ষকরা। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য এই ক্যাডারে আবারো পদোন্নতি বন্ধ থাকে। আত্তীকরণ বিধি ২০০০ সমঝোতার মাধ্যমে প্রণয়নের পর আত্তীকৃতরা সমঝোতা ভেঙে মামলা করে কেউ কেউ ভূতাপেক্ষভাবে অধ্যাপকও হয়ে যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা সরাসরি বিসিএসদের চেয়ে জ্যেষ্ঠতা পেয়ে বসেন। ফলে, সরাসরি বিসিএসধারীদের অধিকাংশ কর্মকর্তা সহয়োগী অধ্যাপক হয়ে অবসরে চলে যান। কেউ কেউ সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান।
২০০৯ থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ১৮টি বেসরকারি কলেজ জাতীয়করণ হয়। জাতীয়করণের ফলে তারা ২০০০ বিধি বলে আত্তীকৃত হন শিক্ষা ক্যাডারে। এভাবে শুরু থেকেই শিক্ষা ক্যাডার ও আত্তীকৃত শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। পদোন্নতি, গ্রেড, অর্জিত ছুটি নিয়ে অন্যান্য ক্যাডার সার্ভিসের সঙ্গে শিক্ষা ক্যাডারের বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতি গত ২ অক্টোবর একদিনের কর্মবিরতি পালন করেছে। প্রকৃতঅর্থে বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে পদোন্নতি বৈষম্য, কর্তৃত্ব বৈষম্য, আর্থিক সুযোগ-সুবিধার দিকে দিয়ে বৈষম্য, রাষ্ট্রীয় প্রটোকলে, খবরদারি এবং যৌক্তিক ও বৈধ প্রাপ্তিতে বৈষম্য বিদ্যমান। একই পরীক্ষায় একই দিন যোগদান করে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণ করেও কোনো ক্যাডার দ্রুত পদোন্নতিসহ সবককিছু পেয়ে যান, আবার কিছু ক্যাডার এগুলো থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। বলা যায়, শিক্ষা ক্যাডার এ ক্ষেত্রে একেবারেই পেছনের সারিতে অবস্থান করছে।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা বলছেন, শিক্ষা ক্যাডারকে বিলোপের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তারা মনে করেন, শিক্ষা ক্যাডার ক্ষতিগ্রস্ত হলে শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা ক্যাডারবান্ধব নানা সিদ্ধান্ত নিলেও তা বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বাধা সৃষ্টি করছেন। সরকার দাবি না মানলে ১০, ১১ ও ১২ অক্টোবর তিন দিন কর্মবিরতি পালন করবে তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সম্প্রতি সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৯০ জনকে পদোন্নতির বিষয়টি। শিক্ষক নেতারা বলছেন, এটি স্মরণাতীত কালের ’সর্বনিম্ন’ সংখ্যক পদোন্নতি। সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ২৪তম থেকে ২৭তম বিসিএস পর্যন্ত পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। অথচ দুই বছর পদোন্নতি না দিয়ে জট তৈরি করা হয়েছে। পদোন্নতিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার পরিবার হতাশ বলেও মন্তব্য করে তারা বলছেন, গুরুত্ব বিবেচনায় যোগ্য সব কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। প্যাটার্ন অনুযায়ী পদ সৃজন না করে এ পদোন্নতিতে আগের সমস্যাকে আরো তীব্রতর করা হয়েছে। পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের পারিবারিক ও সামাজিক মর্যাদা সমুন্নত এবং কর্মস্পৃহা ধরে রাখার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতির সুযোগ তৈরির একটি নির্দেশনা রয়েছে। বিষয়টি সমিতি বারবার কতৃপর্ক্ষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেটিকেও কোনো বিবেচনায় নেয়া হয়নি। এবারের পদোন্নতিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে সাপ্লিমেন্টারি ডিপিসি সভা করে সব স্তরে যোগ্য কর্মকর্তার পদোন্নতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন নেতারা।
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ক্যাডারের মর্যাদার হেরফের হতে পারে না। বিষয়, সনদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ক্যাডারে প্রবেশ হয় না। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য স্মার্ট শিক্ষকের প্রয়োজন এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক পেশাকে সর্বোচ্চ মূল্য দেয়া উচিত। শিক্ষা ক্যাডার সার্ভিস প্রস্ফুটিত করার জন্য যেসব উদ্যোগ নেয়া দরকার সেসব উদ্যোগ নেয়ার পথে বাধা আছে এবং প্রশাসনে যারা আছেন তাদের দিক থেকেই বাধাটা আসে বলে শিক্ষক নেতারা মনে করেন।
এখানে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনও বাস্তবায়ন হয় না। শিক্ষা ক্যাডার বিলোপের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রাথমিক থেকে শিক্ষা ক্যাডারকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে সংগঠনের নেতারা সব সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবকে বিষয়গুলো জানানোর চেষ্টা করেছেন। জনপ্রশাসন, অর্থসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়। দেখা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাজটি সম্পন্ন হলেও অন্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিষয়টি আটকে যায়। যেকোনো ক্যাডার সার্ভিসেরই নিজস্বতা রয়েছে। সে অনুযায়ী সার্ভিসগুলো তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের শীর্ষ পদে শিক্ষা ক্যাডারের বাইরের কেউ থাকায় প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করে মাধ্যমিক পর্যায়ে পৌঁছাতে পারছে না।
একই পরিস্থিতি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরেও। প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসনের ওপরের পদগুলো প্রশাসনিক ক্যাডার দিয়ে দখল করে রাখার কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। বহু বছর বহুবার বিষয়টি নিয়ে লিখেছি। শিক্ষা ক্যাডারের নেতাদেরকে এ বিষয়ে খুব একটা উচ্চবাচ্য করতে শুনিনি। তবে এবার তারা একটু সোচ্চার হয়েছেন। শিক্ষা ক্যাডারের নেতারা যা বলেছেন- অন্য ক্যাডার প্রাথমিক শিক্ষার দেখভাল করে বলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না- সেটিতে একটু কথা আছে। কারণ, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দেখভাল করেন, সেখানেও কিন্তু মানের বিশাল সমস্যা রয়ে গেছে।
তার মানে হচ্ছে, পরিবর্তন প্রয়োজন সর্বত্র। কিন্তু পরিবর্তন হচ্ছে না কোথাও। শুধু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা দায়িত্ব নিলেই যে, শিক্ষার সুদিন ফিরে আসবে, শিক্ষকদের দুর্দশা দূর হবে এমন অনুকরণীয় উদাহরণও কিন্তু আমরা কোথাও এ পর্যন্ত দেখছি না। এনসিটিবি, শিক্ষাবোর্ড ও মাউশি-সর্বত্রই কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করছেন, নিয়ন্ত্রণ করছেন, কিন্তু শিক্ষকদের হয়রানি কি দূর হয়েছে, ঘুষ বাণিজ্য কি বন্ধ হয়েছে? শিক্ষার মানে কোনো অগ্রগতি হয়েছে? কাজেই ওই কথাটি বললে সচেতন মহল মেনে নেবে না। কিন্তু আমরা বিশেষ করে ব্যক্তিগতভাবে আমি চাই, প্রাথমিকে কোনো প্রশাসন বা অন্য কোনো ক্যাডারের লোক নয়, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা থাকতে হবে। সেজন্য তাদের নিজেদের প্রস্তত করতে হবে।
সর্বমোট ৭ হাজার শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু তাদের পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের ৪২৯টি পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু হলেও হয়েছে মাত্র ৯৫টি পদ। শিক্ষা ক্যাডারের ১২ হাজার ৪৪৪টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব দীর্ঘ নয় বছর আটকে আছে। শিক্ষা ক্যাডারের অর্জিত ছুটির বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। শিক্ষা ক্যাডারের তফসিলভুক্ত প্রাথমিকে শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫১২টি পদ শিক্ষা ক্যাডারের তফসিল বহির্ভূত করে নিয়োগবিধি চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি করা হয়েছে যেখানে শিক্ষা ক্যাডারের পদ অন্যরা দখল করেছেন। এ পরিস্থিতিতে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, সুপার নিউমারারি পদে পদোন্নতি, অধ্যাপক পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করা, শিক্ষা ক্যাডারকে নন-ভ্যাকেশন সার্ভিস ঘোষণা করে অর্জিত ছুটি দেয়া, ক্যাডার কম্পোজিশন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, প্রাথমিক ও মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধি বাতিল করা, শিক্ষা ক্যাডারের পদ থেকে শিক্ষা ক্যাডার বহির্ভূতদের প্রত্যাহার ও শিক্ষা ক্যাডারে প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার দাবিও জানানো হয়। এ প্রশাসন কেমন হবে? বর্তমানে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা থাকবেন, তবে তাদের নেতৃত্ব দেবেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। উপজেলা ও জেলার শিক্ষা প্রশাসন গড়ে উঠলে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারি কলেজগুলো তদারকি করতে পারবেন বলে তারা মনে করেন।
কিন্তু আমি মনে করি, উপজেলা পর্যায়ের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার হওয়া প্রয়োজন। আর ক্যাডার হওয়া মানে অধস্তন শিক্ষক আর বেসরকারি শিক্ষকদের ওপর ছড়ি ঘোড়ানো নয়। তাদের সবাইকে কয়েক বছর পরপর সরাসরি শিক্ষকতায়ও সময় কাটাতে হবে। আর এই পদোন্নতিকে মূল্যবান ও সঠিক করার জন্য শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় ও বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা, পাবলিকেশন কিংবা সামাজিক ওয়ার্ক, যথাযথ কর্তৃপক্ষের গোপন প্রতিবেদন ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো চালু করতে হবে। তা না হলে শুধু সার্ভিসের সময়কাল বিবেচনা করে পদোন্নতি দেয়া হলে সেটিকে মূল্যবান মনে হয় না, সঠিক মনে হয় না। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করা দরকার জাতির বৃহত্তর স্বার্থে। আর সেটি দূর করতে হলে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা, পদোন্নতির ধারা সবকিছুতেই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সুযোগ-সুবিধার দিক দিয়েও আন্তঃক্যাডার বৈষম্য প্রকট।
একজন উপসচিব গাড়ি ক্রয়ের জন্য ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ এবং সেই গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাসে ৫০ হাজার টাকা পান। সমমানের অন্যান্য ক্যাডারে এসব সুবিধা নেই। তারা বঞ্চিত বলে জনগণের প্রতি তাদের সেবার মানও সেভাবে হয়। এর সুদূরপ্রসারী ফল হচ্ছে মেধাবীরা অন্যান্য ক্যাডারে ইতোমধ্যে আসা বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা একমাত্র ঠেকায় পড়ে আসছে। অর্থাৎ যোগ্য ও উপযুক্ত কর্মকর্তা পাওয়া দুষ্কর হবে।
আমরা বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে ইতোমধ্যে জেনেছি, ৩৫তম-৪০তম বিসিএসএর প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত এক হাজার ৯৮০ কর্মকর্তার মধ্যে ৩৮৭ জন ছিলেন প্রকোশলী ও চিকিৎক। ৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত ৩২১ জনের মধ্যে ১২৯ জন প্রকৌশলী। প্রকৌশলীরা যদি এসব ক্যাডারে যান তাহলে দেশ গড়বেন কারা? চিকিৎসকরা যদি এসব ক্যাডারে যোগ দেন তাহলে চিকিৎসা করবেন কে? নাকি আমরা ডাক্তার বানাবো এসব ক্যাডারে যাওয়ার জন্য আর চিকিৎসা করাতে যাবে ভারত, সিঙ্গাপুর আর থাইল্যান্ড? আমরা কি সেটাই চাচ্ছি?
শুধু বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের দাবি মেনে নেয়ার মধ্যেই বৈষম্য নিরসন সীমাবদ্ধ নয় বলে কেউ কেউ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। দুয়েক জন বলেছেন, পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই এখন আইসিইউতে রয়েছে। সরকারির মতো বেসরকারি শিক্ষকদেরও বদলিপ্রথা চালু করা উচিত বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।
দেশের আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের প্রভাব পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াশোনায় দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ করে বিশেষায়িত পড়াশুনায় এর প্রভাব সংশ্লিষ্ট সেক্টরের যুগোপযোগী গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে একদিকে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে সেক্টরগুলোতে হতাশা ও ক্ষোভের কারণে মানসম্মত সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ক্যাডারে সুপারনিউমারারি তো দূরের কথা, গ্রেড-২ পর্যন্ত ওঠারও সুযোগ নেই। শিক্ষা ক্যাডারের অবস্থা এখানে যেনো বেশি শোচনীয়। এর আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।
লেখক : মাছুম বিল্লাহ, প্রেসিডেন্ট, ইংলিশ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন- ইটাব