বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সমিতির আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে ক্যাডারের সার্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গ্রেড-১ কর্মকর্তা অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একটি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন। এর পরপরই সারাদেশের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা একটি প্রভাববিহীন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। সবাই বলাবলি করছেন শিক্ষামন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা শিক্ষাসচিবের কোনো প্যানেলের প্রতি আশীর্বাদ বা বিশেষ কোনো দূর্বলতা নেই। যদিও একজন তস্য জুনিয়র প্রার্থী ও তার সরকারি, বেসরকারি ও অসরকারি একান্ত গয়রহরা গত কয়েকদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন যা মহাকবি আল্লামা ইকবালের ভাষায়, হিন্দুস্তান কা হামারা, পাকিস্তান কা হামারা, চট্রলা কা হামারা, টাঙ্গাইল কা হামারা আওর যশোর কা হামারা। মহাপরিচালকের জুম মিটিংয়ের পর ভোটাররা বুঝতে পেরেছেন ‘আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশী তাকে দেবো।’ ভোটাররা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন, খুব শিগগরিই অধিদপ্তর থেকে একজন বিতর্কিত পরিচালককে ঢাকার বাইরের একটা কলেজে বদলি করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিভিন্ন অধিদপ্তর, দপ্তর, শিক্ষাবোর্ড, সরকারি কলেজ ও মাদরাসায় কর্মরত তিন শতাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে জুম মিটিং করেন মহাপরিচালক। এর আগে এদিন সকালেই সমিতির নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মহাপরিচালককে এই মর্মে অনুরোধ করা হয় যেন তিনি সবাইকে আশ্বস্ত করেন যে, চেয়ারম্যান ও অধ্যক্ষসহ বড় পদে আসীনরা কেউ যেন কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থী বা প্যানেলে ভোট দিতে ভোটারদের প্রভাবিত না করেন। কমিশনের অনুরোধক্রমে মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ বিকেলেই জুম মিটিং আহ্বান করেন। সেখানে তিনি নিজের অবস্থান পরিস্কার করে বলেন, ‘আমি মহাপরিচালক কোনো নির্দিষ্ট প্যানেল বা প্রার্থীর পক্ষে নই। অবশ্যই আমি ভোট দেবো কিন্তু আমার কোনো প্যানেল নেই, কোনো ব্যক্তি বা পদ চয়েস নেই। আমি সব শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান, অধ্যক্ষসহ সবাইকে অনুরোধ করবো সবাই যেন নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে প্রভাবমুক্ত হয়ে ভোট গ্রহণ নিশ্চিত করেন।’
জুম মিটিংয়ে ্অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক আরো বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যম ও ক্যাডার গ্রুপের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি কোনো কোনো কলেজে নোটিস দিয়ে নির্দিষ্ট একটি প্যানেলের পক্ষে ক্যাম্পেইন চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেটা অন্যায়, অসমীচীন । এসব বন্ধ করতে হবে এবং এমনটা যেন আর না হয়।’
অধ্যক্ষদের আরো বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন চায় অধ্যক্ষ মহোদয়রা যেহেতু ভোট গ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেহেতু তারা যেনো কারো পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট না চান বা ভোটারদের প্রভাবিত না করেন।’
মহাপরিচালক নেহাল আহমেদ আরো বলেন, ‘আমি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি যে ভোটারদের মাঝে ছড়ানো হচ্ছে যে আমি কোনো একটি প্যানেলের পক্ষে। আমি দৃঢভাবে বলতে চাই যে এমন প্রচার আসলে অপপ্রচার এবং সবৈব মিথ্যা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা, চাঁদপুর ও চিটাগংয়ের সরকারি কলেজের কয়েকজন অধ্যক্ষ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সমিতির গত নির্বাচনে একজন মন্ত্রী একটি প্যানেলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যেটা ক্যাডারের ইতিহাসে নজিরবিহীন এবং কয়েকমাসের মধ্যেই সেই বিজয়ী প্রার্থীর সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে সেই মন্ত্রী বিরক্ত হয়েছিলেন ও ভুল বুঝতে পেরেছিলেন।‘
অধ্যক্ষদের মতে, এবারের ভোট হবে নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত। ভোট গণনা হবে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। গতবারের মতো ভোটারের চাইতে ভোট কাস্ট বেশি করানোর সুযোগ দেওয়া হবে না। পুরো ক্যাডারকে বিপদাপন্ন করা কোনো গুলিবিদ্ধ ও দাগীকে নেতা নির্বাচন করা হবে না। কোনো তস্য জুনিয়রকেও বড় পদে দেখতে চান না সমিতির সিনিয়ররা।
অধ্যক্ষদের সঙ্গে মহাপরিচালকের জুম মিটিংয়ের সারমর্ম সম্পর্কে জানতে চাইলে জর্জ হার্বার্টের বরাত দিয়ে একজন অধ্যক্ষ বলেন, ‘মিষ্টিভাবে আদেশ প্রদানের মধ্যেও প্রবল শক্তি নিহিত।’