শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রনেশিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে

এনামুল হক প্রিন্স, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

আজ সোমবার সকালে শিক্ষা ভবনে ঢুকেই হাবিবুর দেখতে পেলেন সব আনসার সদস্য ব্যস্ত। ভবনের সিড়ি বেয়ে নামা পানি সরাতে ব্যস্ত। হাবিবুর জানতে পারেন শিক্ষা ক্যাডার সমিতির আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গভীর রাত অবধি শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা অফিস করেন। তাদের ফুট ফরমায়েশ খাটতে দুচারজন কানামনা পিওন দরকার হয়। যেহেতু তাদের চাকরি অস্থায়ী তাই তাদেরকে ফ্রিতে থাকতে দিতে হয় শিক্ষা ভবনের বিভিন্ন কক্ষে। 

আনসার সদস্য হালিমের সঙ্গে গত ৫ মে চুক্তি হয় হাবিবুর রহমানের। ঠিক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মূল ভবনে প্রবেশ পথে। এসএসসি পরীক্ষার মূল সনদ হারিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে শিক্ষা ভবনের খোঁজে ঢাকায় এসেছিলেন হাবিবুর। এলাকার পরিচিত কেউ হাবিবুরকে বলেছেন ঢাকার শিক্ষাভবনে গেলেই নতুন সনদের ব্যবস্থা হবে। যেই কথা সেই কাজ। হাবিবুর মেট্রো রেলে প্রেসক্লাব স্টেশনে থেকে নেমে সোজা চলে গেলেন শিক্ষা ভবনে। গেটেই দেখা আনসার সদস্য হালিমের সঙ্গে। হালিমকেই বললেন তার এই কঠিন বিপদের কথা। সব শুনে আশ্বস্ত করলেন হালিম।

আরো পড়ুন: কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে

জানালেন সব সমস্যার সমাধান আছে হালিমের হাতেই। লাগবে মাত্র ৭ হাজার টাকা। সময় এক সপ্তাহ বা সাতদিন। জিডি করা পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞাপন থেকে সব কাজ মাত্র সাত হাজার টাকায়। ব্যস, মিলবে নতুন সনদ। তবে, সাত হাজার ছাড়াও হাবিবুরকে এর জন্য একটা কাজ করতে হবে। হাবিবুরের নিজ স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সইসহ একটা আবেদন নিয়ে আসতে হবে। বাকী কাজ হালিমের। এক হাজার টাকা নগদ দিয়ে ফোন নম্বর নিয়ে গাজীপুরের পথে পা বাড়ানোর সময় হালিমের মনে পড়ে আসল সত্যটা বলার। কানেমুখে হাবিবকে বলেন, ‘কাজটা ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের। এটা শিক্ষা ভবন, এখানে সনদ পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষা বোর্ডে হালিমের ওস্তাদ আছেন। তিনিই সব করে দেবেন। ওস্তাদের সঙ্গে হাবিবুরের সামনেই কথা বললেন হালিম। 

শিক্ষা ভবনে অবস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সার্বিক নিরাপত্তা, শৃঙ্খলাসহ কিছু বিষয় দেখার জন্য মাসিক বেতন ও ফ্রিতে থাকার শর্তে ২০/২৫ জন আনসার সদস্য দুই পালায় ডিউটি করেন শিক্ষা ভবনে। শিক্ষা ভবনে ডিউটি পেতে আনসার দপ্তরের উপরে টাকা দিতে হয় সদস্যদের। আর শিক্ষা ভবনে ডিউটি নিতে পারলে অধিদপ্তরটির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক ও সাধারণ প্রশাসন শাখার দুই স্যারের ফুট ফরমায়েশ খাটা ঠিক থাকলেই কেল্লা ফতে।

২.

পটুয়াখালীর গলাচিপা থেকে কলেজ প্রশাসন শাখার পরিচালকের কাছে এসেছেন মুহিবু্ল্লাহ। গেটে কর্তব্যরত এক আনসার সদস্যের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে দুরু দুরু বুকে ঢুকেছেন অধিদপ্তরের তৃতীয় তলায়। খুঁজে পেয়েছেন পরিচালকের কক্ষ। কিন্তু বিধিবাম। উপচেপড়া ভীড়। স্যার ব্যস্ত শিক্ষা ক্যাডারদের নির্বাচন নিয়ে। মুহিবুল্লাহ আগেই শুনেছেন বর্তমান পরিচালকই সমিতির বর্তমান সভাপতি। আবারও প্রার্থী। বর্তমান মহাসচিব নিজ কলেজে না থেকে দিনভর থাকেন সভাপতির কক্ষে। ঢাকার আবদুল গণি রোডের শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ২৭৭ কিলোমিটার দুরে দশমিনায় থেকে   মুহিবুল্লাহ যা শুনেছেন এবার নিজ চোখে আঙুল ঢুকিয়ে তার সত্যতা পেলেন। কিছুটা হতাশ মুহিবুল্লাহ তারপর গেলেন সহকারি পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে। চেয়ারে যিনি বসা তিনি ক্যাডার সমিতির বর্তমান কমিটির নেতা। পাঁচ বছর আগে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এসেছিলেন এই পদে। স্যারের দেখা পাওয়া তো দুরের কথা পাশের ছোট্ট স্পোশাল কক্ষেও মাথা ঢোকানোর জো নেই। গিজগিজ করে ক্যাডার। জানলেন স্যারও আসন্ন ৯ জুনের ক্যাডার সমিতির নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হতে যাচ্ছেন।

মুহিবুল্লাহ সাচিবিক বিদ্যার শিক্ষক। ক্যাডারের সংজ্ঞা মুখস্থ করেছিলেন বহু বছর আগে। যতদূর মনে পড়ে ক্যাডার মানে মুষ্টিমেয়। শত শত বা হাজার হাজার না। কিন্তু সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বড় ক্যাডার সংগঠনের সঙ্গে দেখা হলো তার। সভাপতিসহ অন্যপদপ্রার্থীর কক্ষেই কয়েকডজন। মোট ভোটার ১৬ হাজারের মতো। আসছে ৯ জুন ভোট। মনে মনে ভাবেন, শিক্ষা ভবনের অধীনে তিন লাখ এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারী। অথচ বাস্তবে এখানে বেসরকারি শিক্ষকরা অপমান-অপদস্ত হন। শুধু ক্যাডারদের জন্য আলাদা একটা অধিদপ্তর করে সেখান থেকে শুধু সরকারি কলেজ ও স্কুল দেখভাল হবে।    

মলিন বদনে মুহিবুল্লাহ ছোট্ট ব্যাগটি নিয়ে শিক্ষা ভবনের মসজিদের দিকে আগান। নীচতলায় দেখা হয় আনসার হালিমের সঙ্গে। মসজিদের সামনের জামতলায় দেখা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। সাংবাদিক পরিচয় জানার পর আগ্রহ নিয়ে বলতে থাকেন। শেখের বেটির পদ্মা সেতু চালুর পর এবারই তিনি প্রথম বাসযোগে ঢাকায় আসলেন।  আগে লঞ্চে আসতেন। বাসের ঝাঁকুনিতে ঘুম নষ্ট হয়েছে। শরীরে একটু ব্যাথা। তাই মসজিদে একটু বসবেন। পরে কথা হবে আনসার হালিমের সঙ্গে। ভীড় ঠেলে কীভাবে সাক্ষাত পাওয়া যাবে কলেজ প্রশাসন স্যারের তা বাতলে দেবেন হালিম।

মসজিদের পাশের ওজুখানায় পা ফসকে পড়ে গিয়ে কপালে আঘাত পেলেন মুহিবুল্লাহ। ওজুখানা থেকে পানি দিয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে। পরে পাশের দোকান থেকে ঠান্ডা পানির বোতল চেপে ধরছেন কপালে। 

কি কাজে এসেছেন জানতে চাইলে খোলাসা করলেন না। শুধু বললেন পরিচালক স্যারকে পেতেই হবে, যতদিন লাগে। শুধু তার কাছেই বললেন সমস্যার কথা। 

আনসার হালিমের সনদ ব্যবসা আর মুহিবুল্লার ভোগান্তীর ঘটনার বিষয়ে মতামত জানতে চেষ্টা করা হয়েছিলো। পরিচালক, উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) ও সহকারি পরিচালক কাউকেই পাওয়া যায়নি। তারা সবাই ব্যস্ত ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে কথা বলতে।

মহারিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে অফিসে কিংবা ফোনেও পাওয়া গেলো না। তার দপ্তরের একজন জানালেন স্যার ছুটিতে। 

এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039870738983154