শিক্ষা জাতীয়করণ: একটি মানবিক প্রত্যাশা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষা জাতীয়করণ: একটি মানবিক প্রত্যাশা

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ |

শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে শিক্ষকদের সব প্রচেষ্টার ফলাফল শূন্য। আমি ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দ হতে বাংলাদেশের একটি সুপ্রতিষ্ঠিত কলেজে অধ্যাপনারত। অভিজ্ঞতা বলছে-
ক. কোনো পেশায় কি সবাই একই হারে বাড়িভাড়া পান? নেই পূর্ণাঙ্গ মেডিক্যাল ভাতা?
খ. কোনো পেশায় কি কেউ চারটি উৎসবে একটি উৎসবভাতা পান?
গ. কোনো পেশায় কি পদোন্নতি সীমিত বা নেই?
ঘ. কোনো পেশায় কি বদলি নেই? 
ঙ. কোনো পেশায় কি সরকারের তহবিল থেকে জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী ‘অনুদান’ সুবিধা দেয়া হয়?

এমন পেশায় তুষ্ট, এমপিওভুক্তরা! অথচ, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার, সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতকরণ সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। 

‘শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণে’র প্রত্যাশা শিক্ষকের পেশাগত বঞ্চনার অবসানের জন্যই নয়। বরং মানুষের মৌলিকাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। মানুষের অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনের মতোই ‘শিক্ষা’ একটি মৌলিকাধিকার। সরকারও মৌলিকাধিকারের নিশ্চয়তার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কাজেই, শিক্ষা জাতীয়করণ হলে:

ক. গরিবের শিক্ষালাভের সুযোগ বাড়বে এবং ব্যয় কমবে।
খ. গ্রামের মানুষকে শহরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ভিড় করতে হবে না। 
গ. শিক্ষাক্ষেত্রে গুণগত পরিবর্তন হবে।
ঘ. ভালো প্রতিষ্ঠান, খারাপ প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত ধারণা থাকবে না।
ঙ. সবার জন্য শিক্ষা, নারী শিক্ষা, কর্মমুখী বা কারিগরি শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে প্রভুত উন্নতি সাধিত হবে।

কলেজে অধ্যাপনারতদের সসম্মানে ‘অধ্যাপক’ বলা হলেও তাদের ‘সহকারী’ পর্যন্ত যাবার সামান্য সুযোগ থাকলেও নেই আইনগতভাবে ‘সহযোগী অধ্যাপক’ বা ‘অধ্যাপক’ হওয়ার অধিকার, আর্থিক সুবিধাও নেই! ডিগ্রি কলেজ না হলে, গ্রেড পেলেও সহকারী অধ্যাপকের পদ পাওয়া যায় না, হন ‘সিনিয়র লেকচারার’!

অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ হবার ক্ষেত্রে মাউশি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক বৈপরীত্য। টাকা দেয় সরকার, নীতিমালা দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
এমপিওভুক্ত পিওন হতে প্রিন্সিপাল সবাই পান ১০০০/-বাড়িভাড়া। চিকিৎসাভাতা ৫০০/=, নিতান্তই অপ্রতুল। ‘জাতীয় লজ্জা’ বেসরকারি শিক্ষকরা সম্ভবতঃ বিশ্বের একমাত্র পেশাজীবী যারা সিকিভাগ উৎসবভাতা পান। দৈনন্দিন ব্যয় সামলে চিকিৎসা, সমাজিকতাসহ অনেক বিষয়ে আমরা অসহায়।

‘শিক্ষা জাতীয়করণ’ সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারভুক্ত হওয়া দরকার। মানুষ গড়ার কারিগরদের অভিজ্ঞতা অত্যন্ত গ্লানিকর। ‘শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো’র কল্পনা বাদ রেখে, যেমন আছে তা অব্যাহত রেখে ক্রমশ তার মানোন্নয়ন, ভিত্তি সুদৃঢ়করণ বেশি জরুরি। ‘ঢেলে সাজানো’র কথা বলে শুধু ঢালা হয় সাজানো হয় না! কমিটি গঠন, গবেষণা চলমান রেখেই জাতীয়করণের ঘোষণা আসুক। 

১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্যারিস সন্মেলনে ১৩টি অধ্যায় ও ১৪৬টি ধারা-উপধারায় শিক্ষকের মর্যাদা ও অধিকারের সুপারিশ প্রণীত হয়। যাতে শিক্ষকের চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা, ছুটি বেতন-ভাতা ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বলা আছে (ক) সম্মানজনক পারিতোষিক নিশ্চিতকরণ (খ) যুক্তি সংগত জীবনমান বিধান কল্পে সুবিধাদি নিশ্চিতকরণ (গ) স্কেল অনুযায়ী নিয়মিত বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা (ঘ) জীবনধারনের ব্যয়বৃদ্ধির সঙ্গে বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাস ও বর্ধিত বেতন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা ও শিক্ষকদের স্বার্থে বিনিয়োগ যৎসামান্য এবং শিক্ষকের অধিকার নিম্নগামী। 

জানি না, নানা বঞ্চনায় নিমজ্জিত সাধারণ শিক্ষক কবে বাঁচার ন্যূনতম সুযোগ পেয়ে উৎসবে হেসে ওঠবে? বিনাচিকিৎসায় ধুকবে না? মাথা গোজার ঠাঁইটুকুর জন্য অস্থির হবে না? নন-এমপিওরা ভাগ্যেই বা কী আছে? কে শোনাবে মানুষ গড়ার কারিগরদেরকে আশার বাণী? 

কলেজগুলোতে নেওয়া হয় নন-এমপিও প্রভাষক, এদের অবস্থাও মানবেতর। সরকার দেন না এমপিও, মফস্বলের প্রতিষ্ঠানগুলো পারে না নিশ্চিত করতে এদের সম্মাজনক প্রাপ্তি। 

শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য কাম্য নয়। অথচ, আমাদের শিক্ষার মানোন্নয়নের অন্তরায়:
ক. বেসরকারিতে শিক্ষার্থীর ব্যয় বেশি, শিক্ষকের বেতন কম।
খ. সরকারিতে শিক্ষার্থীর ব্যয় কম, শিক্ষকের বেতন বেশি। 

‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’। মেরুদণ্ড যেমন শরীরের পেছনে থাকে আমরা শিক্ষকসমাজও জাতির সবচেয়ে পেছনেই রয়ে গেছি! জাতিকে খাঁড়া ও সোজা রাখবার শক্তি যোগায় ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ শিক্ষক। তাই কারিগরকে অভুক্ত, অবহেলিত রাখলে জাতি হয়ে উঠবে দুর্বল ও অবনমিত। 


লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, কাপাসিয়া, গাজীপুর  

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040631294250488