দেশজুড়ে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত রোগটিতে সারাদেশে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মশাবাহী রোগটিতে এ বছর এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৯ জনে। একই সময়ে ১ হাজার ৫০৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ২০৫ জনে।
বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গুবিষয়ক সর্বশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে নতুন আরও ১ হাজার ৫০৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৯০৭ জন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। বাকি ৫৯৬ জন রাজধানীর বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর এই সময়ে নতুন করে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২৯ জনে।
বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ৮ হাজার ৬৭৬ জন ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৫৩টি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৪ হাজার ৮৭০ জন। এছাড়া ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৮০৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম দিন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৪৪ হাজার ২০৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৩০০ জন। আর চলতি বছর এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২২৯ জন।
এদিকে, যত্রতত্র ময়লা ফেলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বকশিবাজার শিক্ষা বোর্ড আবাসিক এলাকার মানুষের অভিযোগের শেষ নেই। যে কারণে এলাকায় বাড়ছে মশার উৎপাতও। এ নিয়ে অনেকটা ডেঙ্গু আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করছেন এ এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, ময়লা দুর্গন্ধ আর মশা দুই বেড়েছে। নাক চেপেও হাঁটার জো নেই। এছাড়া ময়লার ভাগাড়কে কেন্দ্র করে বেশ কিছু সংখ্যক ময়লার ভ্যান গাড়ি রেখে দেয়ায় ও টোকাইদের তৎপরতায় সরু রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচলে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। দ্রুত ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা রোকনুজ্জামান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ স্থানটিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো আবাসিক ভবন রয়েছে। দৈনিক হাজার হাজার মানুষ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই এলাকায় আসা-যাওয়া করেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই আবাসিক এলাকার রাস্তা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। স্থানীয় এ বাসিন্দা আরও বলেন, শুরুতে এখানে এতটা ময়লা ফেলা হতো না। গত কয়েক মাস ছোট পরিসরে ময়লা রাখা হতো। এখন যা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শোনা যাচ্ছে এখানে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন-এসটিএস করা হবে। এখন সেরকম পরিবেশ তৈরি করছে মাত্র।
হানিফ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, এ যুগে এসে উন্মুক্তভাবে ময়লা রাখার ধারণা সিটি করপোরেশন কি করে নেয় মাথায় আসে না। এমনিতেই মশা আতঙ্কে আমরা। তারমধ্যে এখন দিনেও বাসার জানালা খোলা যায় না গন্ধে। বাচ্চাদের রোগ দেখা দিচ্ছে। দুর্গন্ধস্থলে সারাদিন মশা-মাছি ভন ভন করে। নাসিমা সুলতানা নামের একজন অভিভাবক জানান, তার সন্তান স্থানীয় মোত্তালিব স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। প্রতিদিন সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয় তাকে। এ সময় শিক্ষাবোর্ডর পাশের ময়লার ভাগাড়ের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। স্কুল শিক্ষার্থী, শিশুদের জন্য হলেও এই এলাকা থেকে ময়লার স্তূপ সরানো জরুরি।
এলাকাবাসী জানান, বর্তমানে যেখানে ময়লার ভাগাড় বানানো হয়েছে সেখানে কিছুদিন আগেও একটি কমিউনিটি সেন্টার ছিল। হাজী গোলাম মোর্শেদ নামের ওই কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় সময় নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীর জমজমাট পদচারণা থাকতো। কিন্তু সেটি ভেঙে ফেলে ময়লার ভাগাড় বানানোতে এলাকাবাসী বিস্মিত হয়েছে। দুই পাশে দুটি শিক্ষা বোর্ডের মাঝখানের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় ময়লার ভাগাড় বানানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ বলেন, সেখানে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন যে খোলা ময়লাটি দেখা যাচ্ছে এসটিএস নির্মিত হলে সেগুলো আর থাকবে না।
প্রতিবছর বর্ষাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময়ে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা গেছেন।