সাবিহা সুমি, দৈনিক শিক্ষাডটকম: বাংলাদেশের তরুণরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত। তাই স্বাধীনতা বিরোধীরা এই মাধ্যমটাই বেছে নিয়েছে। তারা তরুণদের মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করতে চায়। সেজন্য তারা আধুনিক ও যুগোপযোগী নতুন শিক্ষাক্রমকে আঘাত করছে বলে মনে করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।
সম্প্রতি দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের একটা বিরাট নেটওয়ার্ক রয়েছে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন খাতে তারা বিনিয়োগ করেছে। অনলাইন জিহাদে তারা অর্থ ব্যবহার করে। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই শক্তিশালী। আমাদের তরুণ প্রজন্মের মগজ ধোলাই করতে তারা অর্থ ছড়ায়। কিন্তু, শিশুদেরকে শিশুদের তো পারিপার্শ্বিক অবস্থা
শাহরিয়ার কবির বলেন, আমাদের নতুন যে শিক্ষাক্রম তৈরি করা হয়েছে তাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলা হয়েছে। অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধার কথা বলা হয়েছে। সেটা তাদের ভাষায় ইসলাম বিরোধী। এগুলো করে মানুষের, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষার্থদের মনোজগতে তারা একটা উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। বাস্তবে তার প্রতিফলনও আমরা দেখেছি। ব্র্যাকের কিছু ছাত্র নেমে গেলো অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে, যা পাঠ্য বইয়ের গল্পে বলা হয়নি।
তিনি বলেন, সমকামিতার কোনো বিষয়ে পাঠ্যপুস্তকে ছিলো না। সেটাকে অবাঞ্ছিতভাবে এনেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। এসবের মাধ্যমে তারা তরুণ প্রজন্মের মনোজগতে তারা একটা অন্ধকার জগত তৈরি করতে চাইছে। মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতার অন্ধকার। এখান থেকে আমাদের তরুণদেরকে, ছাত্রদেরকে বের করে আনতে হবে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির অন্যতম এই সংগঠক বলেন, পাঠ্যবইয়ে কিছু ভুল-ত্রুটি আছে, বানান ভুল আছে, তারিখে তথ্যগত কিছু ভুল আছে, সেসব সংশোধন করা যেতে পারে। কিন্তু থার্ড জেন্ডার সম্পর্কে পাঠ্যবইয়ে যে ধারণা দেয়া আছে, এটা একটা মৌলিক বিষয়। এখানে হাত দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে মনে করি না।
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জনকারী শহারিয়ার কবির বলেন, বঙ্গবন্ধুর সময়ে যখন কুদরত এ খোদা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিলো তখনও মৌলবাদীরা তার বিরোধিতা করেছে। পরবর্তীকালে তারা তাদের মতো কারিকুলাম তৈরি হয়েছে, বিএনপির জামাত যখন ক্ষমতায় ছিলো। কিন্তু এই সরকার আসার পর আমরা প্রথম থেকেই
বলছি, বঙ্গবন্ধু যে উদ্দেশ্যে কুদরত এ খোদা শিক্ষা কমিশন করেছিলেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বা গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র- আমাদের সংবিধানের রাষ্ট্রের যে মূল চরিত্র নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো শুধু সংবিধানে থাকলে চলবে না, এগুলো পাঠ্যক্রমে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু, প্রত্যেকবার যখনই শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন কিছু যুক্ত হয়েছে, আধুনিক কোনো বিষয় যুক্ত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা ইতিহাস যুক্ত হয়েছে, তখনই তারা প্রতিবাদ করেছে ইসলাম বিরোধী বলে। ইসলামকে তারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। মাদরাসাগুলোকে তারা অন্ধকারে রেখে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের স্কুল, কলেজ, ইউনির্ভাসিটির কারিকুলাম মাদরাসার কারিকুলাম থেকে ভিন্ন। তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মাদরাসা বানাতে চায়।বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সেক্রেটারির দায়িত্বপালনকারী শাহরিয়ার কবির বলেন, অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে একটা শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর। ওই কমিশন বলেছিলো, মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা দরকার। কিন্তু, তারা তো মধ্যযুগীয় পাঠক্রম পরিচালনা করছে। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু কওমি মাদরাসার পাঠক্রম যদি আমরা লক্ষ্য করি এ স্বীকৃতির কোনো মূল্য নেই। দাওরায়ে হাদিসকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির সমান করা হয়েছে। এটা পাস করে কি তারা কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে পারবে? আমরা তো চাই মাদরাসায় যারা পড়ছে তাদের মূলধারায় আনতে। কারণ তাদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আছে, রাষ্ট্রের একটা দায়িত্ব আছে। এজন্য কবির চৌধুরী শিক্ষা কমিশনের পরামর্শ ছিলো, প্রথমে ক্লাস ফাইভ, তারপর ক্লাস এইট পর্যন্ত আলাদা কোনো কারিকুলাম থাকবে না। সেখানে জেনারেল কারিকুলাম যেটা হবে সেটা মাদরাসাতেও পড়াতে হবে। তাহলে তাদের মনে প্রসারতা ঘটবে এবং এই যে একটা সংকীর্ণতা মাথার মধ্যে গেঁথে দেওয়া হচ্ছে…. উন্মাদনা, জিহাদের উন্মাদনা, ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি ঘৃণা, ভিন্নমতের মানুষের প্রতি ঘৃণা, বিভিন্ন জীবনধারা যারা যাপন করে তাদের প্রতি ঘৃণা- এসব কমে যাবে।
প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির বলেন, মাদরাসার ছাত্র কেনো মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়বে না, তারা তো বাঙালি জাতিরই অংশ। আমাদেরই সন্তান। যেটা আমাদের অহংকারের জায়গা, মর্যাদার জায়গা, সেটা তাদের ধারণ করতে হবে। তা না হলে তারা কখনোই সুনাগরিক হতে পারবে না। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না।
তিনি বলেন, ব্র্যাকের যে শিক্ষক বিতর্ক যে তৈরি করলেন, যিনি দাবি করছেন ইংল্যান্ড থেকে পড়াশোনা করেছেন। কিন্তু, তার মাথার মধ্যে ধর্মান্ততা, অন্ধকার রয়ে গেছে। তিনি তো কোনো স্কুলেও শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। তাকে মাদরাসায় দেয়া যায়, খুব বেশি হলে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, আমাদের শিক্ষার মান এত নিচে নেমে গেছে যে যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। যখন স্কুলে পড়েছি, শিক্ষকদের মধ্যে পাণ্ডিত্য দেখেছি। কেউ বাংলা পড়াচ্ছেন, কিন্তু ইতিহাসে দক্ষ, ইংরেজিতে দক্ষ। বিস্মিত হয়ে যেতাম। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে যে মানটা ছিলো, এমনকি পাকিস্তান আমলে যতটুকু ছিলো, সেটা কিন্তু দিনদিন কমেছে। বিশেষ করে পঁচাত্তরের পর থেকে। কিন্তু আমাদের শির্ক্ষার্থীদের তো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দাঁড়াতে হবে। সেটা দেশেই হোক বা দেশের বাইরেই হোক। আর এজন্য যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম দরকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতিফলন সেখানে থাকতে হবে। ত্রিশ লাখ শহীদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা আছে। আফগানিস্তানের মতো মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বানানোর জন্য তো আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। এটা যারা শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন তাদের মনে রাখতে হবে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে এ বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।