শিক্ষাঙ্গনে যৌ*ন হয়রানি রোধে নির্দেশনা অনুযায়ী হচ্ছে না কমিটি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাঙ্গনে যৌ*ন হয়রানি রোধে নির্দেশনা অনুযায়ী হচ্ছে না কমিটি

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ৪ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে আলোচিত হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা প্রকাশ পায় ১ লা ফেব্রুয়ারি। প্রতিদিনই বাড়ছে শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানির ঘটনা। বিজ্ঞজনেরা দায়ী করছেন রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার আর শিক্ষকদের প্রভাব বিস্তারকে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয় না। আবার কোথাও কোথাও নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি হলেও সেটি হয় দায়সারাগোছের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ৩০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এখন পর্যন্ত ১৩টি অভিযোগ এসেছে। ১১টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আর বাকি দুটি অভিযোগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত পাঁচ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন-সংক্রান্ত অভিযোগ এসেছে। এর মধ্যে দুজন শিক্ষককে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে এই কমিটির বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ বলেন, এই কমিটি দিন দিন অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। যাকে মূলত শিক্ষক রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা হয়। এমনকি এই কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে হেনস্থার অভিযোগও আছে।

তবে যৌন নির্যাতন-সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটিকে কার্যকর করা হয়েছে জানিয়ে কমিটির প্রধান অধ্যাপক জেবউননেছা বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা করেছি। তবে এখনো দুটি অভিযোগ চলমান রয়েছে। আশা করি, আজ ৭ ফেব্রুয়ারি কমিটির মিটিংয়ে সমাধান হয়ে যাবে। উপাচার্যের নির্দেশনা পাওয়ার পর সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমরা অভিযোগ নিষ্পত্তির চেষ্টা করি।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলেই হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনা যথাযথ ভাবে মানা হচ্ছে না। কমিটি নেই বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে, থাকলেও তা কার্যকর নয়। ১৯৯৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা যৌন হয়রানির সঙ্গে যুক্ত ছিল তাদেরকে পুরস্কৃত করা হয়, তারা চাকরি পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন অভিযোগ সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক জিনাত হুদা জানান, গত এক বছরে এই সেলে তিনটি অভিযোগ আসে। যার দুটি নিষ্পত্তি হয়। একটি প্রক্রিয়াধীন আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কমিটিতে কোনো অভিযোগ দেওয়া হলে কালক্ষেপণ করা হয়। বিচারের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা অপেক্ষা করেন, যেন মেয়েটি মাস্টার্স পাশ করে চলে যান। তারা মনে করেন, ছাত্রীর বিদায়, যৌন হয়রানির মামলারও বিদায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ সেলটি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী হয়নি। হাইকোর্টের রায়ে কমিটিতে অধিক নারী ও একজন আইনজ্ঞ থাকার কথা, কিন্তু তা নেই। এছাড়া আরও কিছু বিষয় উপেক্ষা করে এই কমিটি করা হয়েছে। বেশির ভাগ কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় ঊর্ধ্বতনদের পছন্দমতো করা হয়। এক্ষেত্রে তদন্ত প্রভাবিত হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে অভিযোগকারীকে ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়। প্রভাবমুক্ত না হলে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ সেল কাজ করবে না। আর বিচার না হলে নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি অভিযোগ করতে উৎসাহ পাবেন না।

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ইয়াসমীন হক ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগ কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, যদি উপাচার্যের সদিচ্ছা না থাকে তবে এই কমিটি কোনো দিন কাজ করবে না। কারণ উপাচার্য নিজে যে দল সমর্থন করেন সেই দলের ছাত্রনেতারা জড়িত থাকলে তিনি সিন্ডিকেটের মিটিং-এ অভিযোগের বিষয় উঠান না। ফলে এ সংক্রান্ত তদন্তগুলো আলোর মুখ দেখে না। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির (বিএনডব্লিউ) হিসাব মতে, দেশে ৭১ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩৯ শতাংশ কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে কমিটি থাকলেও কার্যকর মাত্র ৪৪ শতাংশ। 

বিএনডব্লিউ-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রতিরোধে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে  জনস্বার্থে হাইকোর্টে মামলা করেন বিএনডব্লিউ-এর এর একজন সদস্য। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে  যুগান্তকারী রায় দেয় হাইকোর্ট। কিন্তু এই রায়ের পর এক যুগ পেরিয়ে গেলেও নারীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার আশানুরূপ বাস্তবায়ন হয়নি। আইন করার কথাও বলেন তিনি।

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047838687896729