শিক্ষাথী নির্যাতন : কুবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির কালো অধ্যায় - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাথী নির্যাতন : কুবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির কালো অধ্যায়

কুবি প্রতিনিধি |

গত ৬ মার্চ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর নেতাকর্মীদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুখ খুলেছেন। তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে শাখা ছাত্রলীগের তথাকথিত পার্টি অফিস ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন গ্রুপে সাবেক শিক্ষার্থীদের লেখায় বিষয়গুলো উন্মোচিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান আলিফ ভাইয়ের পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট করার কারণে আমাকে ইলিয়াস হোসেন সবুজ ভাই তার রুমে ডেকে নিয়ে রুম বন্ধ করে এবং এলাকার ক্যাডার ও বড় ভাইকে দিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকানোর পাশাপাশি স্টাম্প ও রড দিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস হোসেন সবুজ ভাই সভাপতি হওয়ার পর অতীতে উনার ভিন্ন মেরুতে রাজনীতি করা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে হল থেকে পিটিয়ে ও হুমকি দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। কয়েকবছর আমিসহ সেসব শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ছিলো মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মতো। নির্যাতনের ভয়ে নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারতাম না আমরা। সেসময় ক্লাস পরীক্ষার জন্য ক্যাম্পাসে এসে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলো আমার অনেক ভাই ও বন্ধু। এখন কি কেউ পারবে আমাদের সাথে ঘটা অন্যায়ের বিচার চাইতে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ৯ম ব্যাচের আরেক সাবেক শিক্ষার্থী এ জে রাব্বি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, হলের ছাদ থেকে ফেলে দেয়ার জন্য ছাদে উঠিয়েছিল এক বড় ভাই! ভাগ্য ক্রমে বেঁচে গেছি। অ্যাম্বুলেন্সে করে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গিয়েছি একবার, অসুস্থ হয়ে যদি যেতাম তাও কথা ছিলো! হলের গেট থেকে ১ পা-ও বের হলে পা কেটে ফেলবে এমন হুমকি পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে যেতে হয়েছিলো।

টর্চার সেলের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাবেক শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম গোলাপ ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে জানান, সানন্দা মোড়ে মামুন ভাইয়ের দোকানে বিকাশ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা তুললাম, টাকা আর পকেটে রাখার সৌভাগ্য হয়নি। আব্বার কষ্টে পাঠানো ১ হাজার ৫০০ টাকা তখন ১৫ লাখ ছিলো আমার কাছে। সেটা ছিনিয়ে নিয়েছে। আমাদের আটজনকে পার্টি অফিসে একসঙ্গে আটকে আমার চোখের সামনে আমার দুই বন্ধুকে যেভাবে পিটিয়েছে, ২টা লাঠি ভেঙে ফেলেছিলো। এই মারার দৃশ্য দেখার পর এক সপ্তাহ মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবেনের পাশেই তথাকথিত ছাত্রলীগের পার্টি অফিসই ছিলো এক ধরনের টর্চার সেল। বেশ কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে ছাত্রলীগের তিন নেতাকে মারধরের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু কয়েক বছর আগে এদের মধ্যে কেউ কেউ ক্যাম্পাসে আধিপত্য ধরে রাখার জন্য কারণে অকারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করতো এবং টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিতো। পান থেকে চুন খসলেই তাদেরকে পার্টি অফিসে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করতো।

তাদের এই নির্মমতার বর্ণনা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের এক সাবেক শিক্ষার্থী খায়ের খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কোনো এক কারণে পার্টি  অফিসে বিচারের সম্মুখীন হয়েছিলাম। বিচার শুরু হয়েছিলো তথাকথিত সিনিয়রদের গণধোলাই দিয়ে। আমাকে সেমিস্টার পরীক্ষার মাঝেই নির্মমভাবে মারা হয়েছিলো অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম ক্যাফে হিলের ভেতর।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৯ম ব্যাচের এক ছাত্র বলেন, আলিফ গ্রুপের ছিলাম! সেটাই অপরাধ। বার বার আমাদের (বর্তমান শেখ হাসিনা হলের নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ের পাশের) পার্টি অফিসে নিয়ে বিচার করতো। প্রতিদিন একই কায়দায় ছেলেদের মারতো। তারপরেও মন ভরেনি। যখন বুঝেছে আমরা ছাত্রলীগ ছাড়বোনা! হলেই থাকবো! তখন নতুন বুদ্ধি করলো। মুসলমান বন্ধুদের কোরআন ছুঁইয়ে শপথ করানো হলো! আর সনাতনীদের গীতা। গীতা এনেছিল ৫০১ নং রুম থেকে। আর কোরআন এনেছিল ২০৬ থেকে। ইলিয়াস ভাইয়ের নির্দেশে সেদিন শপথ করিয়েছিল মাসুদ ভাই আর বিদ্যুত ভাই। আরো কয়েকজন ছিলো। সবার নাম মনে পড়ছেনা এখন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এটি একটি বৃহৎ সংগঠন। এখানে নানা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে নেতাকর্মীদের মাঝে। সংগঠনের অভিভাবক হিসেবে সমস্যা সমাধানের জন্য পার্টি অফিসে ডেকে কথা বলে সমাধান করা হতো। কাউকে টর্চার করা হতো না। কেউ বলতে পারবে না, আমি কখনো কাউকে অন্যায়ভাবে একটা থাপ্পড় মেরেছি।

প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ - dainik shiksha প্রায় দুই লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীর পাঁচ লাখ খাতা চ্যালেঞ্জ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা - dainik shiksha ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা, রোজ সম্মানী পাবেন ৫০০ টাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ - dainik shiksha বেসরকারি মেডিক্যাল-ডেন্টালের ভর্তি ফি নির্ধারণ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ - dainik shiksha ঢাবিতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধে গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে - dainik shiksha নিম্নমানের বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে - dainik shiksha আসিফ নজরুলের সাথে কি ঘটেছিল জেনেভা বিমানবন্দরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032670497894287