দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জোর-জবরদস্তি কমাতে কেবল শিক্ষামন্ত্রণালয়ের সতর্কতামূলক চিঠি যথেষ্ট নয়। সম্প্রতি দেশের শিক্ষাবিষয়ক একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ডিটিজাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিচালিত এক অনলাইন জরিপে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।
ওই জরিপে জানতে চাওয়া হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জবরদস্তি কমাতে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের চিঠি কি যথেষ্ট? জবাবে ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা বিপক্ষে ভোট দেন। অর্থাৎ তারা মনে করেন, কেবল সতর্কতামূলক চিঠি এসব জোর-জবরদস্তি কমাতে পারবে না। এজন্য আরো বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। তবে আট শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, চলমান সমস্যার সমাধানে এই একটি চিঠিই যথেষ্ট।
জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ বন্ধে গত ২৭ আগস্ট ওই হুঁশিয়ারি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ কিছু নির্দেশনা দেয়। জোর করে বদলি করা শিক্ষকদের তালিকা চায় জেলা প্রশাসকদের কাছে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এ বিষয়ক চিঠি জারি করে।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের প্রধান বা অন্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধে নানাধরনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পদত্যাগ-অপসারণের দাবিতে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও-কোথাও শিক্ষকরা ব্যক্তিগতভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। এমন অবস্থা মোটেই কাম্য নয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভিসি, প্রো-ভিসি বা অন্যান্য কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন এবং প্রয়োজনে চ্যান্সেলর তাদেরকে আইনানুযায়ী অপসারণ করতে পারেন। সরকারি স্কুল-কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা অন্যদেরকে এই বিভাগ বা মাউশি অধিদপ্তর প্রয়োজনে বদলিসহ তদন্তক্রমে সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
আরো বলা হয়েছে, একইভাবে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও স্কুল ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিংবডির মাউশি অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মকর্তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাঠালে সংশ্লিষ্ট বিভাগ-দপ্তর তদন্ত বা অনুসন্ধান সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
এছাড়া শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের উন্নতির জন্য দেশের জনপ্রশাসন সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সার্বিক সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়টি তদারকি এবং প্রয়োজনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে জানানোর জন্য জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করানো শুরু হয়। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা দেয় অস্থিরতা। এমন কর্মকাণ্ডের কারণেই খোদ শিক্ষামন্ত্রণালয় ওই চিঠি দেয়। তবে গতকাল শনিবার অবধি জোর-জবরদস্তির ঘটনা পুরোপুরি থামানো সম্ভব হয়নি।