দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বৈধ পথে রেমিট্যান্স বা প্রবাস আয় বাড়ানোর জন্য সরকার গত চার অর্থবছর ধরে প্রবাসীদের আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে আসছে। প্রথমে এই প্রণোদনার হার দুই শতাংশ থাকলেও এখন তা আড়াই শতাংশ হারে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরও উল্লেখযোগ্যভাবে প্রবাস আয় বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে না। এখনো বড় অঙ্কের রেমিট্যান্স অবৈধভাবে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে পাঠানো হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রেমিটারদের আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি অ-আর্থিক সুবিধা প্রদানের চিন্তা করছে সরকার। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল সরকারের কাছে সাতটি সুপারিশও পেশ করেছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে- বেস্ট রেমিটার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা; রেমিটারদের সন্তানদের জন্য সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা ব্যবস্থা প্রচলন করা; রেমিট্যান্স প্রেরণকারী বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট নবায়নের ফি হ্রাস করা; রেমিট্যান্স প্রেরণ ও গ্রহণের কাজে জড়িত ব্যাংক/ এক্সচেঞ্জ হাউজের শাখাগুলোকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে খোলা রাখার ব্যবস্থা করা; বিশেষ করে উৎসবকালীন লম্বা ছুটি থাকার সময়ে; পাসপোর্ট-সহ দূতাবাসে সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স কার্ডধারীদের অগ্রাধিকার প্রদান; রেমিট্যান্স প্রাপ্তি সহজীকরণ (ডকুমেন্টাশন হ্রাসসহ); বিদেশে বাংলাদেশী মালিকানাধীন এক্সচেঞ্জ হাউজ/ ব্যাংকে বাংলাভাষী কর্মকর্তা নিয়োগ এবং প্রবাসীদের জন্য সরকারের সেবাগুলোর প্রচার করা ইত্যাদি। গত ২৪ এপ্রিল জাতীয় সংসদের অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সারা বিশ্বে বর্তমানে নানা ধরনের সঙ্কট বিরাজ করছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় অংশ আসে তৈরী পোশাক রফতানি খাত থেকে। এরপরই বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। ব্যাংকিং চ্যানেলে নানা জটিলতা এবং হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরত্ম্যে রেমিট্যান্সের বড় একটি অংশ তাদের কব্জায়। এ অবস্থায় রেমিট্যান্স-প্রবাহ বাড়ানোর জন্য নতুন করে কী কী করা যায়- সে বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতিতে প্রবাস আয়ের গুরুত্ব বিবেচনায় দেশে প্রবাস আয়ের প্রবাহকে আরো উৎসাহিত করতে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথমবারের মত ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং পরবর্তী সময়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে প্রণোদনার হার ২.৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। এ নীতি-কৌশল অবলম্বনের ফলে কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রকোপ সত্ত্বেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি প্রবাস আয় অর্জিত হয়। ওই বছর বাংলাদেশের বার্ষিক প্রবাস আয় প্রথমবারের মতো ২০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বিগত তিন অর্থবছর ধরে এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে কিছুটা ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সূত্র মতে, অবৈধ পথে প্রবাস আয় প্রেরণ তথা হুন্ডির প্রবণতা রোধের জন্য আর্থিক প্রণোদনা বা ক্যাশ ইনসেনটিভ দেয়া হলেও হুন্ডি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। কারণ হুন্ডি ব্যবসায়ীরা আরো উচ্চ হার প্রদান করে থাকে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাস আয় প্রেরণকারীদের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদানের সাথে নন-ফাইন্যান্সিয়াল সুবিধা প্রদান করলে সেটি প্রবাস আয় বাড়াতে সহায়ক হতে পারে।
গত ২০০৯-২০১০ অর্থবছর থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ের উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ওই সময়ে গড়ে প্রতি বছর বাংলাদেশের মোট আমদানি হয়েছে ৪৬.৫ বিলিয়ন ডলার এবং একই সময়ে গড়ে প্রতি বছর প্রবাস আয় এসেছে ১৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি বছর গড় আমদানি মূল্যের ৩৪.৩ শতাংশের সমপরিমাণ অংশই প্রবাস আয় দিয়ে মেটানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, এভাবে ধারাবাহিক উন্নতির ফলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে প্রবাস আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২১.৬১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ছিল ১০.৯৯ বিলিয়ন ডলার। ফলে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বে সব দেশের মধ্যে নবম প্রবাস আয় গ্রহণকারী দেশে উন্নীত হয়েছে।
জানা যায়, রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা প্রদানে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দুই হাজার ৬৪৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয় ছিল চার হাজার ৭৫ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এ খাতে সরকারের ব্যয়ের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে রেমিটারদের জন্য বেশ কয়েকটি অ-আর্থিক সুবিধা দেয়া চালু করা হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী বাজেটে ঘোষণাও থাকতে পারে।