জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এ এস এম আমানুল্লাহ শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনারা এগিয়ে আসুন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করুন। তিনি কলেজের সার্বিক বিষয়গুলো উন্নত করতে শিক্ষকদের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ৫ আগস্ট শিক্ষাঙ্গনের ওপর একটি ধাক্কা লেগেছে একটি স্বাধীন দেশে ৫২ বছর পরে হঠাৎ তিনদিন সরকার নেই, পুলিশ প্রশাসন নেই, এয়ারপোর্ট থেকে দৌড়ে দৌড়ে শত-শত লোকজন পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই বিদেশ চলে যাচ্ছে এটা কি একটি স্বাধীন দেশ? বিপদ এখনো কাটেনি!
শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একদিনের ‘ফ্যাকাল্টি-ইন-হাউস ট্রেনিং’ প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজের আয়োজনে ধানমন্ডিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ের ‘মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’র সেমিনারকক্ষে এ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর অবধি এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এ এস এম আমানুল্লাহ। তিনি ‘পাঠদান বোঝা একবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষার লক্ষ্য’ বিষয়ের ওপর একটি সেশন পরিচালনা করেন। এরপর শিক্ষকদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনারারি অধ্যাপক প্রফেসর ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ এবং কলেজ গভর্নিংবডির সম্মানিত বিদ্যোৎসাহী সদস্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন গভর্নিংবডির সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ মেজবাহ-উল- ইসলাম।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ আ ফ ম রেজাউল হাসান, ট্রেনিং প্রোগ্রামের আহ্বায়ক সৈয়দ মুহাম্মদ ইউসুফসহ অন্যান্যরা।
উপাচার্য বলেন, শিক্ষকদের আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তথ্যবহুল হয়ে ছাত্রদেরকে ব্র্যান্ডিং প্রোডাক্ট হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা উচিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সুযোগ করে দেয়ার কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আলহাজ্ব মকবুল হোসেন কলেজ একটি সুন্দর ও আদর্শনিষ্ঠ কলেজ। আপনারা যারা আছেন সবাই মিলে আরো সুন্দর করার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ একটি অশুভ ছায়ার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। ৫ আগস্ট শিক্ষাঙ্গনের ওপর একটি ধাক্কা লেগেছে একটি স্বাধীন দেশে ৫২ বছর পরে হঠাৎ তিনদিন সরকার নেই, পুলিশ প্রশাসন নেই, এয়ারপোর্ট থেকে দৌড়ে দৌড়ে শত-শত লোকজন পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই বিদেশ চলে যাচ্ছে এটা কি একটি স্বাধীন দেশ? বিপদ এখনো কাটেনি!
তিনি আরো বলেন, একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের সঙ্গে কোনোভাবেই দ্বন্দ্বে জড়াবেন না। অনেক দেশ আছে যারা আমাদের ছেলে মেয়েদের সঙ্গে কম্পিটিশনে পারছে না, গার্মেন্টসখাতে পারছে না, শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে পারছে না। তারা চায় আমরা যাতে ডিভাইডেড হয়ে যাই। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমন হয়ে গেছে দাড়ি-টুপি দেখলেই আমরা তাদেরকে আলাদা করে ফেলি আমাদের এই ধরনের শিক্ষা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
সর্বোপরি তিনি বলেন, আপনারা শিক্ষকরা এগিয়ে আসুন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি করুন কলেজের সার্বিক বিষয়গুলো উন্নত করতে আপনারা কাজ করুন। কোনোভাবেই টাকা ব্যাংকে জমিয়ে রাখবেন না। আমি এমন এমন কলেজ দেখেছি তারা শুধু ইঁদুরের মতো করে ফিক্সড ডিপোজিট করে আপনারা এটা কইরেন না। আপনারা কাজ করেন, টাকা জমিয়ে লাভ নেই কারণ আপনি জমিয়ে রেখে যাবেন বিগত দিনের মতো আরেকজন এসে সরকারকে খুশি করার জন্য দিয়ে দেবে।
এছাড়াও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করে স্ব-বিষয়ে সেশন পরিচালনা করে বলেন, আমরা নিজেদের শিক্ষক হিসেবে দাবি করি এই দাবি করার আগে আমাদের চিন্তা করা উচিত আমরা নিজেরা আসলে কতটা শিখতে পেরেছি, আমরা কতোটুকু শিক্ষা দিতে পেরেছি। আমাদেরকে সৎ হতে হবে। কিন্ত আমরা যদি দেখি শিক্ষা উপকরণ সেটা কোনো এক শিক্ষা কর্মকর্তা আত্মসাৎ করে দিয়েছেন এর পর আসলে আমাদের আর সৎ থাকতে ইচ্ছা করেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. এ. আই. মাহবুব উদ্দিন আহমেদ তার স্ব-বিষয়ে সেশন পরিচালনার পর বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের মূল যে প্রশ্নটা আমরা কীভাবে পড়াবো? শিক্ষাটা আসলে কি? এই প্রশ্নগুলো আসলে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়না। আসলে শিক্ষাটা হলো ডিসিপ্লিন সামাজিক হওয়া অন্যের প্রতি মানবিক হওয়া। এটাই হলো শিক্ষা, এ সব বিষয়গুলো আমাদের লক্ষ রাখা উচিত। আমাদের দেশে এগুলো আসলে চর্চা করা হয়না। এগুলো আমরা ধার করে পড়াই।