শিক্ষার্থী চেয়ে বিদেশি দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে রাবি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থী চেয়ে বিদেশি দূতাবাসে চিঠি দিয়েছে রাবি

রাবি প্রতিনিধি |

অনুকূল সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ না পাওয়ায় পড়াশোনা শেষ না করেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাড়ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। গত কয়েক বছরে ২৮ বিদেশি ভর্তি হয়েছিলেন, এর মধ্যে ৯ জন কোর্স শেষ না করে নিজ দেশে ফিরে গেছেন। চলতি শিক্ষাবর্ষে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হননি।

আন্তর্জাতিকমানের পাঠ্যক্রম না থাকা, সেশনজট ও পাঠদান পদ্ধতি ইংরেজিতে না হওয়ায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি অনীহার মূল কারণ। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আলাদা ডরমিটরি থাকলেও সেখানে নেই আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে ঢাকায় অবস্থিত ফিলিস্তিন দূতাবাসসহ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  চিঠি দিয়ে নানা সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হচ্ছে। যাতে তাদের দেশের শিক্ষার্থীরা আসেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও একাডেমিক শাখা-১-এর উপ-রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অ্যাম্বাসিতে (দূতাবাস) যোগাযোগ করেছি। কথা বলেছি। তাদের শিক্ষার্থীদের কী কী সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে তা জানিয়ে মেইলও পাঠানো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি কেটে গেছে। তাই আশা করছি, আগামী সেশনে বিদেশি শিক্ষার্থী উল্লেখ্যসংখ্যক পাওয়া যাবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক শাখা জানায়, ২০১৪-১৫ সেশনে প্রথম কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তখন স্নাতক কোর্সে মাত্র নেপালে দুজন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন। এর আগে বিদেশি কোনো শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে।

পরের বছর ২০১৫-১৬ সেশনে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় তিনজনে। ২০১৭ সালে জর্ডান, সোমালিয়া ও নেপাল থেকে ভর্তি হন ১০ শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে নেপাল ও জর্ডান থেকে আট শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে তাদের মধ্যে মাত্র একজন ছাড়া বাকিরা কোর্স শেষ না করেই ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে ভর্তি হয়ে বছর না পেরোতেই চলে যান জর্ডানের এক শিক্ষার্থী। এরপর ২০১৯-২০২০ সেশনে চারজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তবে ২০২০-২০২১ সেশনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ধারাবাহিকতায় ভাটা পড়ে। ওই বছর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার এক শিক্ষার্থী ভর্তি হন। আর ২০২২ সালে ভারত থেকে এক শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করলেও পরে তা বাতিল করেন।

রাবিতে অধ্যয়নরত কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে বাংলা মিডিয়ামে পাঠদান করেন শিক্ষকরা। এ কারণে তারা ভাষা ঠিকমতো বুঝতে পারেন না। বিদেশি শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে বাংলা ভাষা শেখানোও হয় না। এ ছাড়া অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া আবাসিক হলে শিক্ষার পরিবেশ নেই। ফলে তারা অন্যদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে নিরুৎসাহিত করেন।

২০১৭-১৮ সেশনের ভেটেরিনারি সায়েন্সস অ্যান্ড অ্যানিমেল বিভাগে নেপাল থেকে আসা শিক্ষার্থী সনি কুমার দাস বলেন, ‘আমাদের অ্যাপ্লিকেশনের সময় বলা হয়ে থাকে, পড়াশোনার মাধ্যমে হবে ইংরেজি। কিন্তু আমরা এখানে এসে দেখি, আমাদের ক্লাস লেকচারগুলো বাংলাতে হচ্ছে। আগে জানতে এখানে হয়তো ভর্তি হতাম না’।

বিদেশি শিক্ষার্থী ছাড়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই তার সর্বজনীনতা ধরে রাখতে পারে না বলে মনে করেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকিব। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটা আন্তর্জাতিক। এমন কি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় শিক্ষার্থীর চেয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বেশি। আমাদের বিদেশি শিক্ষার্থীর দরকার অনেক বেশি।’

এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘যদি একটি দেশের বা এলাকার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়টি সর্বজনীন চেহারা ধারণ করতে পারে না। আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীর অনুপাতও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়।’

বিদেশি শিক্ষার্থী ধরে রাখতে না পারা প্রসঙ্গে রাবির ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব ও একাডেমিক শাখার উপ-রেজিস্ট্রার এ এইচ এম আসলাম হোসেন বলেন, ‘বাইরের শিক্ষার্থীরা সাধারণত সায়েন্স, এগ্রিকালচার ও ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের সাবজেক্টগুলোতে ভর্তি হয়। সেখানে ইংরেজিতেই ক্লাস নেওয়া হয়। কিন্তু বাঙালি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় বাংলাতেই লেকচার দেন শিক্ষকরা। শিক্ষার্থীরাও বাংলা লেকচারেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।’

রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই সোমালিয়ান। তারা বাংলা বুঝতে পারেন না। ইংরেজিতেও দুর্বল। আবার আমাদের শিক্ষকরাও বাংলায় ক্লাস লেকচার দেন। ফলে শিক্ষার্থীদের এখানে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া আমাদের ডরমিটরিতেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছি।’

এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় - dainik shiksha বিসিএসে আনুকূল্য পেতে যেচে তথ্য দিয়ে বাদ পড়ার শঙ্কায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ - dainik shiksha বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছাত্রলীগ নেতাকে উপাচার্যের পিএস নিয়োগ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছেন এক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষক কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নি*হত ৯ মরদেহ তোলার নির্দেশ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031478404998779