শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপের টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন শেকৃবি শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের ফেলোশিপের টাকায় ভাগ বসাচ্ছেন শেকৃবি শিক্ষকরা

দৈনিক শিক্ষাডটকম, শেকৃবি |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, শেকৃবি : রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার্থীদের পাওয়া ফেলোশিপের (গবেষণার জন্য) টাকায় ভাগ বসানোর অভিযোগ উঠেছে কয়েকটি বিভাগের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের চারটি বিভাগের শিক্ষকরা ল্যাবের (গবেষণাগার) মান উন্নয়নের নামে জোর করে ফেলোশিপ পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মাথাপিছু ২০ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এ টাকা আদায় করা হয়। এমনকি ডিগ্রি আটকে যাওয়ার ভয় দেখিয়ে লিখিত কোনো নোটিস ছাড়াই মৌখিক আদেশে খামে করে ওই টাকা শিক্ষকরা গ্রহণ করেন বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের গবেষণার টাকায় এভাবে ভাগ বসানোকে অনৈতিক ও নিয়মবহির্ভূত বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা।

প্রতি বছর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ কর্মসূচি’র আওতায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়/অনুমোদিত স্নাতকোত্তর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ইনস্টিটিউটে ভৌত বিজ্ঞান, পরিবেশ বিজ্ঞান, প্রকৌশল/ জীববিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং খাদ্য ও কৃষিবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত বিষয়গুলোতে এমএস/এমএসসি, এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা যা তাদের নিজ নিজ গবেষণার প্রয়োজনে ব্যয় করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪৩ শিক্ষার্থী জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (এনএসটি) ফেলোশিপ পান, এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থী। মাথাপিছু ৫৪ হাজার টাকার এ মেধাবৃত্তি শিক্ষার্থীদের তাদের নিজ নিজ গবেষণায় ব্যয় করার কথা। কিন্তু এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের চারটি বিভাগ বৃত্তি পাওয়া সব শিক্ষার্থীর কাছ থেকে থেকে ল্যাব উন্নয়নের নামে জনপ্রতি ২০ হাজার টাকা নিচ্ছে। বিভাগগুলো হলো মাইক্রোবায়োলজি, সার্জারি, প্যাথলজি ও ফার্মাকোলজি। বৃত্তির টাকার চেক পাওয়ার পর প্রথমে মাইক্রোবায়োলজি ও সার্জারি বিভাগের দুজন শিক্ষক টাকা আদায়ের এ বিষয়টি সামনে আনেন, তারপর অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন। পরবর্তীকালে তাদের দেখে একই সিদ্ধান্ত নেয় প্যাথলজি ও ফার্মাকোলজি বিভাগ।

প্রথমদিকে ফেলোশিপের পুরো টাকা নেওয়ার কথা বললেও পরবর্তীকালে অন্যদের পরামর্শে ২০ হাজার করে টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও এ অর্থ আদায়ে কোনো নোটিস দেওয়া হয়নি। মৌখিক আদেশে খামে ভরে শিক্ষার্থীদের থেকে তা আদায় করা হচ্ছে। টাকা আদায়ের এ পদ্ধতির ঘোরবিরোধী অন্যান্য বিভাগের শিক্ষকরা। অনুষদটির অন্যান্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলেন, এভাবে টাকা আদায় খুব বাজে নজির সৃষ্টি করেছে। গবেষণার জন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে কোনো শিক্ষার্থী তার গবেষণার তত্ত্বাবধায়কের (সুপারভাইজার) পরামর্শে নিজেই সেটা করবে, কিন্তু ঘটা করে এভাবে টাকা তোলা সমীচীন নয়। আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এভাবে টাকা নেওয়াটা দৃষ্টিকটু। এ ব্যাপারে টাকা আদায় করা বিভাগগুলোর কয়েকজন জুনিয়র শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান বলায় তারা টাকা আদায়ে জড়িত হতে বাধ্য হয়েছেন। যদিও এমন সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত নন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বৃত্তির এ টাকাটা পাওয়া আমাদের জন্য এক ধরনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্যার বলছেন, “আমাদের জন্য তোমরা এত টাকা পেলে তাই তার একটা পার্সেন্ট ল্যাব উন্নয়নের জন্য দিতে হবে”। স্যার বলছেন মানে দিতেই হবে, এখানে কেন বা কোন খাতে তা ব্যয় করবেন এমন কোনো প্রশ্ন করার সুযোগ নেই। ওই টাকা আদতেও ল্যাবের জন্য খরচ হবে কি না, সেটাও জানি না, টাকা গ্রহণের কোনো রসিদও দেয়নি।’

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘কয়েকজন এ টাকা না দিতে চাওয়ায় তাদের ডিগ্রি আটকে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। কয়েক দিন আগে ফাইনাল পরীক্ষায় বসার আগে এনএসটির সম্পূর্ণ টাকা গবেষণার কাজে ব্যয় করব এমন লিখিত নিয়েছে। অনার্স তো এখানেই করেছি, অনেক কিছুই জানি। সামান্য এদিক-সেদিক হলেই কিছু স্যার শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেন, গর্বের সঙ্গেই সেসব আবার বলে বেড়ান।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে টাকা আদায়ের প্রক্রিয়ায় জড়িত মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে এরকম (টাকা আদায়) সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। যেহেতু ল্যাবে সবাই কাজ করে তাই ওরা সবাই ২০ হাজার করে টাকা জমা দিয়ে যেসব লাগে তা কিনুক, তবে পরবর্তীকালে কথা উঠতে পারে ভেবে আমরা তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি।’

তবে কবে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন এবং কতজনের থেকে টাকা নিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দেননি এ শিক্ষক। অবশ্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, এ প্রতিনিধি টাকা আদায়ের বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করছেন এমন তথ্য জানার পর বিভাগের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি প্রচার করছেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলেও জানান শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উল্টো কে এ তথ্য দিয়েছে তা জানতে চান সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. রাশেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুপারভাইজারদের নির্দেশনা আছে এনএসটির পুরো টাকাটা ছাত্রদের গবেষণার জন্য, নট অনলি (শুধু) ২০, পুরো ৫৪ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। আমার ছাত্র যারা আছে আমি তাদের এমন নির্দেশনা দিয়েছি। এমনিতে আমরা কোনো টাকা নিইনি, এটা ভুল মেসেজ (বার্তা)।’

তবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রমাণ হাতে রয়েছে উল্লেখ করা হলে শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।’

বিভাগে সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক হাফছা হোসাইনের কাছে তার নির্দেশেই সার্জারি বিভাগের সবার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে জানানো হলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার নির্দেশনা থাকতে পারে যে আমার এ যন্ত্রপাতি কেনা লাগবে তোমরা সহযোগিতা করো।’

এ বিষয়ে ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. শরিফা জাহানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যস্ত আছি, আপনি এ বিষয়ে অন্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলেন।’

আর প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজেদা সুলতানা বলেন, ‘আমার যারা ছাত্র তাদের গবেষণার টাকা আমার সুপারভিশনে আছে। ওখান থেকে নিয়ে ওরা (শিক্ষার্থী) খরচ করছে। ওরা নিজেরাই বলছে, “ম্যাম আমাদের কাছে থাকলে খরচ হয়ে যাবে” এজন্য আমি নিয়ে রাখছি, এটা নিয়েছি ওদের (শিক্ষার্থী) সঙ্গে পরামর্শ করে। এখনো খরচ করা হয়নি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘এ সম্পর্কে আমি একেবারেই অবগত না, বিষয়টি খোঁজ নেব এবং কোনো অনিয়ম হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032699108123779