রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের ডাইনিংয়ে মেস সিস্টেম চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই অন্য আরও কয়েকটি হলে এই সিস্টেম চলু করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
তবে, এই সিস্টেমের সমালোচনা করে এটা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে ক্যাম্পাসের সাতটি ছাত্রসংগঠন। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই দাবি জানায় সংগঠনগুলো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান ভয় ও চরম দখলদারিত্বের কালে শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাকাঠামোর কর্তৃত্বের স্তরে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের বাইরে কারোর অবস্থানের সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে মেস চালু কিংবা শিক্ষার্থীদের হাতে খাবারের দায়িত্ব অর্পন, প্রকান্তরে ছাত্রলীগের মতামত গ্রহন ও ছাত্রলীগের হাতে দায়িত্ব অর্পণ ছাড়া কিছুই নয়। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রশাসন সংগঠনটিকে আরো আধিপত্য বিস্তার ও আর্থিক শোষণ বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করে দিলো।
এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমীর আলী হলে মেস সিস্টেম চালুর ঘোষণা দিয়েছে হল প্রশাসন, শাহ মখদুম হলেও পরীক্ষামূলকভাবে অনুরূপ প্রক্রিয়া চালুর নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। একবার ডাইনিংয়ের দায়ভার শিক্ষার্থীদের হাতে গছিয়ে দেয়া গেলে খাবার নিয়ে প্রশাসনের আর কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না। খাবারে ভর্তুকি প্রদানের প্রশ্নই উঠবে না। পুষ্টির অভাবের কারণ হিসেবে শিক্ষার্থীদের আর্থিক অসচ্ছলতাকে দায়ী করা হবে। মূলত সুকৌশলে শিক্ষার্থীদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব অস্বীকার করতেই প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত। যার বিষময় ফলাফল শিক্ষার্থীদেরকে স্থায়ীভাবে ভোগ করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এছাড়া প্রতিবেলার খাবারের মূল্য ৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে এক লাফে খাবারের দাম বাড়বে ১৩ টাকা ও ৭ টাকা। এর আগে জুন ২০২২ এ মান বৃদ্ধির নাম করে খাবারের দাম ৪ টাকা করে বাড়ানো হয়েছিলো। ফলে একবছরের ব্যবধানে বর্ধিত মূল্য দাঁড়ালো ১৭ টাকা ও ১১টাকা, যা প্রায় দ্বিগুণের কাছাকাছি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে চরম আর্থিক সংকটের মুখে অসংখ্য শিক্ষার্থী হল ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে টিকে ছিলো। প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বেঁচে থাকার সেই সুযোগ টুকুও কেড়ে নিলো। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এপ্রিলে খাবারের খরচ বহন না করতে পেরে আত্মহত্যা করেছিলো কুয়েট শিক্ষার্থী অন্তু। প্রশাসনকি রাবিতেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি চায়?
দাবি মানা না হলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তোলার হুশিয়ারি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যয়ে শিক্ষা জীবনের সামগ্রিক নিরাপত্তা প্রদানের কথা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আজ খাদ্যে ভর্তুকি দিয়ে শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম পুষ্টির চাহিদাটুকুও নিশ্চিত করতে নারাজ। তাই আজ প্রশ্ন করতেই হয়, শিক্ষার্থীদেরকে বঞ্চিত রেখে রাষ্ট্রীয় বাজেটের ৪৫৭ কোটি টাকা কাদের পেছনে ব্যয়িত হয়? অবিলম্বে হলে মেস সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল করে, ডাইনিং বহাল রেখে সেখানে ভর্তুকি দিয়ে পূর্বের মূল্যে পুষ্টিকর খাবারের চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া ওই সাত ছাত্রসংগঠন হলো- রাবি শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন, নাগরিক ছাত্র ঐক্য ও ছাত্র গণমঞ্চ।