বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তর দরকার। এখন অফলাইন (সশরীর)-অনলাইন—উভয় পদ্ধতির শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আছে। এ জন্য সব শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে বৈষম্য বাড়বে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গণসাক্ষরতা অভিযান, সেভ দ্য চিলড্রেন ও ফ্রেন্ডশিপের যৌথ আয়োজনে শিক্ষাবিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। তাদের শিক্ষার মাধ্যমে মেয়েদের ক্ষমতায়ন (ইজিই) কর্মসূচি নিয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, শিক্ষায় ডিজিটাল রূপান্তরই শেষ যাত্রা হবে। ডিজিটাল যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে পারলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাগুলো বড় ফল দেবে। এ ক্ষেত্রে তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও অধিদপ্তরগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে সামনে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে কর্মসূচির পরিচিতি, অর্জন ও সম্ভাবনাবিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের ইজিই কর্মসূচির পরিচালক শাহিন ইসলাম এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হ্যাপী কুমার দাশ।
মেয়েশিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সফলভাবে সমাপ্তি ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। এ মাসেই কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা। এ কর্মসূচির আওতায় কুড়িগ্রামের রাজারহাট এবং জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার ১২০টি বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ১২ হাজার ৫৩৬ জন মেয়েশিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রমের আগে ও পরে ভার্চ্যুয়াল শিখন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বাংলা, ইংরেজি এবং গণিত বিষয়ে দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা হয়। আবার এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেয়েশিক্ষার্থীদের ট্যাবলেট কম্পিউটার ব্যবহার করে স্কাইপে সেশনের মাধ্যমে যোগাযোগের করানো হয়।
অন্যান্য এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, ইজিই কর্মসূচির আওতাধীন শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর হার, প্রাথমিক শেষ করে মাধ্যমিকে ভর্তির হওয়ার সংখ্যা এবং এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে সফলভাবে কৃতকার্য হওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়ে শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছে। বাল্যবিবাহও কমেছে। এ জন্য এই মডেল অন্যান্য বিদ্যালয় এবং মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের জন্যও চালু করাসহ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কর্মসূচির আওতায় শিক্ষার সুযোগ পাওয়া কয়েকজন ছাত্রী, শিক্ষা দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন ব্যক্তি এবং একাধিক শিক্ষা কর্মকর্তা বক্তব্য দেন। তাঁরা এই ধরনের কর্মসূচি চালু রাখা এবং শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান।
সংসদ সদস্য আরমা দত্তের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমেদ, সেভ দ্য চিলড্রেনের এদেশীয় পরিচালক অনো ভান ম্যানেন ও পরিচালক (শিক্ষা) আরথী বিনোদ, ফ্রেন্ডশিপের পরিচালক ও শিক্ষা কর্মসূচির প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইলিয়াস ইফতেখার রসুল, প্রবীণ শিক্ষক নেতা কাজী ফারুক আহমেদ, অধ্যাপক নুরুল আলম, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক তপন কুমার দাশ প্রমুখ।