খাগড়াছড়িতে এক শিক্ষিকাকে খুনের অভিযোগ ওঠার পর তার স্বামীর দুই দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলেও মঙ্গলবার জেলা জজ আদালতের বিচারক তাফরিমা তাবাসসুম তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন বলে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উৎপল বিশ্বাস।
নিহত এশা ত্রিপুরা (নবিনা) মাটিরাঙা উপজেলার তপ্ত মাস্টার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। তার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা। ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে তাদের দুইটি সন্তান রয়েছে।
শুক্রবার ভোররাতে এশা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা গেছেন দাবি করে তার লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্বামী উদ্দীপন এবং প্রতিবেশীরা।
কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা এটিকে ‘স্ট্রোকে’ মৃত্যু নয় বলে জানায়। এ সময় উদ্দীপন লাশের ময়নাতদন্ত না করার জন্যও সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে বলে জানান স্বজনরা। পরে পুলিশ লাশের ময়নাতদন্ত করতে বাধ্য করে।
স্বজনদের অভিযোগ, এশার স্বামী উদ্দীপন শুরুতেই এটি স্ট্রোকের মৃত্যু বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। লাশ হাসপাতালে না নিয়ে তার বাড়ি পানছড়ির কুড়াদিয়া ছড়ায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে প্রতিবেশিদের চাপে হাসপাতালে নিতে বাধ্য হয়।
এ ঘটনার পরদিন খাগড়াছড়ি সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত এশা ত্রিপুরার ভাই খোকারঞ্জন ত্রিপুরা।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তার বোনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে তার বোনকে হত্যা করেছে।
পরে শনিবার বিকালে এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
স্বজনদের পক্ষ থেকে আরও অভিযোগ করা হয়, উদ্দীপন জানায় ভোর ৪টার দিকে এশা ‘স্ট্রোক’ করে বাথরুমে পড়ে যান। অথচ এশার প্রতিবেশী খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুভল জ্যেতি চাকমা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, তিনি রাত দেড়টার দিকে এক নারীর মৃত্যু চিৎকার শুনতে পেয়েছেন।
খাগড়াছড়ি সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উৎপল বিশ্বাস জানান, “নিহতের শরীরের একাধিক জখমের চিহ্ন রয়েছে। এটা দেখে আমাদের মনে হয়েছে এটি স্ট্রোক হতে পারে না। তাকে খুন করা হয়েছে।
“এ ছাড়া হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পুলিশকে লিখিতভাবে এশা ত্রিপুরার লাশের বিষয়ে অবগত করেন এবং এটি স্ট্রোকজনিত মৃত্যু নয় জানান।”
পরিদর্শক উৎপল আরও জানান, হত্যাকাণ্ডের রাতে এশা ত্রিপুরার স্বামী ও শিশু সন্তানরা ছাড়া ওই বাসায় আর কেউ ছিল না। সোর্সের দেওয়া তথ্য এবং পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে উদ্দীপন ত্রিপুরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে, তবে এখনো ময়নাতদন্ত রির্পোট পাওয়া যায়নি বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।