দ্বাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী পদত্যাগ করায় স্পিকার পদে শূন্যতা তৈরি হলো কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। সেই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ কে করাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন এসেছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গতকাল সোমবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধান বলছে, পদত্যাগ করলেও নতুন স্পিকার দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত শিরীন শারমিন চৌধুরীই পদে থাকছেন বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ ত্রয়োদশ সংসদের নির্বাচিত স্পিকার দায়িত্ব না নেওয়া পর্যন্ত শিরীন শারমিনই স্পিকার হিসেবে গণ্য হবেন। তিনিই নতুন সংসদের সদস্যদের শপথ পড়াবেন।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকারের পদ কীভাবে শূন্য হবে সে বিধান বলা আছে। সেখানে সংসদ সদস্য পদ না থাকা, পদত্যাগ করাসহ ৫টি কারণে স্পিকারের পদ শূন্য হবে বলে বলা আছে। তবে একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, এসব বিধান সত্ত্বেও ক্ষেত্রমতে স্পিকার বা ডেপুটি স্পিকার তাঁর উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্বীয় পদে বহাল রয়েছেন বলে গণ্য হবে।
বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রের তৃতীয় সর্বোচ্চ পদ জাতীয় সংসদের স্পিকার। সংবিধানে বলা আছে, রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে ক্ষেত্রমত রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা রাষ্ট্রপতি পুনরায় স্বীয় কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন।
অন্যদিকে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘স্পিকারের উদ্দেশ্যে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি স্বীয় পদ ত্যাগ করিতে পারিবেন’।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদে সংসদে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের বিষয়ে বলা আছে। সংবিধান বলছে, কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সংসদ-সদস্যদের মধ্য থেকে সংসদ একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করবে।
স্পিকারের পদ শূন্য হবে, যদি তিনি সংসদ সদস্য পদে না থাকেন, মন্ত্রী হন, অপসারণের প্রস্তাব সংসদে গৃহীত হয়, পদত্যাগ করেন অথবা কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর অন্য কোনো সদস্য তাঁর কার্যভার গ্রহণ করলে।
ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। ৮ আগস্ট অর্ন্তবর্তী সরকার শপথ নেয়। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের ২৭ দিনের মাথায় পদত্যাগ করলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। পরে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে ২০১৩ এর ৩০ এপ্রিল স্পিকার নির্বাচিত হন শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর থেকে তিনিই এই দায়িত্বে ছিলেন।
গত ৭ জানুয়ারি বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আবার স্পিকার নির্বাচিত করা হয়। দেশে গত ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট ও সরকার পতনের পরে সহিংসতায় ৭৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুলি করে মানুষকে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।
শিরীন শারমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। রংপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন (৩৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় ২৭ আগস্ট শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হককে (টুকু) গত ১৫ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার হন শামসুল হক। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, পরবর্তী সংসদ না আসা পর্যন্ত স্পিকার তার পদে বহাল থাকেন। এখন যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, স্পিকার পদত্যাগ করেছেন, ডেপুটি স্পিকার কারাগারে। সংবিধান মেনে চলা হলে দেখা যায় এতে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।