শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ - দৈনিকশিক্ষা

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের মৃ*ত্যুবার্ষিকী আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অসাধারণ প্রতিভাবান শিল্পী জয়নুল আবেদিন এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফ্টস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের তিনিই পুরোধা। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের (বর্তমান  চারুকলা ইনস্টিটিউ) তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। তিনি তার নেতৃত্বের গুণে অন্যান্য শিল্পীদের সংগঠিত করার জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তিনি এমন এক স্থানে এটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন যেখানে বাস্তবিক পক্ষে অতি নিকট অতীতেও শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক বা পেশাভিত্তিক কোনো ঐতিহ্য ছিলো না। জয়নুল আবেদিন ও তার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী সহকর্মীর অক্লান্ত চেষ্টায় মাত্র এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলা তার স্থান করে নেয়। জয়নুল আবেদিনের অসাধারণ শিল্প- মানসিকতা ও কল্পনাশক্তির জন্য তিনি শিল্পাচার্য উপাধিতে ভূষিত হন।

জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বেড়ে উঠেছেন ব্রহ্মপুত্রের লালিত্যে গড়ে ওঠা সবুজ শ্যামলিমায়। জয়নুল তার প্রথম জীবনেই নদী ও অবারিত প্রকৃতির মাঝে রোমান্টিকতার অনুপ্রেরণা পান। তিনি ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর সেখানে ব্রিটিশ / ইউরোপীয় স্টাইলের ওপর পড়াশুনা করেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আর্ট স্কুল অনুষদে যোগ দেন এবং তিনি তার চিত্রাঙ্কন চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সর্ব ভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে তার অঙ্কিত জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন। তার অঙ্কনের মূল বিষয়বস্ত্ত ছিলো ব্রহ্মপুত্র নদ, যা ছিলো তার আশৈশব প্রেরণার বিষয়। এ স্বীকৃতিই তাকে প্রথমবারের মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। তিনি নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টির আত্মবিশ্বাস লাভ করেন।

আবেদিনের কাছে প্রাচ্যের অঙ্কন ধারা অতিমাত্রায় রীতিনির্ভর ও অপরিবর্তনশীল মনে হয়েছে, যা তাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। অন্যদিকে ইউরোপীয় ধারা তার কাছে সীমাবদ্ধ হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। এসব কিছু মিলিয়ে তিনি রিয়ালিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন। রেখা চিত্রের ওপর তার দুর্বলতা অবশ্য থেকেই যায়, এবং দৈনন্দিন জীবনচিত্রের উপস্থাপনায় তিনি এর ব্যবহারে এনেছেন বহু বৈচিত্র্য। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষে জয়নুল আবেদিন ধারাবাহিকভাবে একাধিক চিত্র স্কেচ করেন। এ দুর্ভিক্ষে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। সস্তা প্যাকিং পেপারে চাইনিজ ইঙ্ক ও তুলির আঁচরে ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’ নামে পরিচিত জয়নুলের এ চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে শব-সওদাগরদের নিষ্ঠুরতা ও নৈতিক কলুষতা, সে সঙ্গে নিপীড়িতের অমানবিক দুর্দশা। চিত্রকর্মগুলো জয়নুলকে ভারতব্যাপী খ্যাতি এনে দেয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এগুলো মানুষের দুর্দশা, কষ্ট ও প্রতিবাদকে সামনে এনে বাস্তবধর্মী চিত্র অঙ্কনে তার স্বকীয়তাকে বিকশিত করে। ‘দ্য রেবেল ক্রো’ (জলরং, ১৯৫১) এ ধারার সবচেয়ে উজ্জ্বল নিদর্শন। উচ্চমার্গের নন্দনতত্ত্বের মিশেলে সামাজিক অনুসন্ধিৎসা ও প্রতিবাদের সম্মিলিত প্রকাশ রিয়ালিজমের এ নির্দিষ্ট ধারা বিভিন্ন সময়ে জয়নুলকে প্রেরণা জুগিয়েছে: যেমন ১৯৬৯ ও ১৯৭১ এ সময় জয়নুল তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কাজ করেছেন এ স্টাইলে।

১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে উপমহাদেশের বিভক্তির পর জয়নুল আবেদিন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। সে সময়ে ঢাকাতে কোনো আর্ট ইনস্টিটিউট বা অন্য কোনো শিল্প সম্বন্ধীয় প্রতিষ্ঠান ছিলো না। জয়নুল আবেদিন ও তার কয়েকজন সহযোগী, যারা দেশ ভাগের পর ঢাকায় অভিবাসী হয়েছিলেন, আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি লন্ডনের স্লেড স্কুল অব আর্ট-এ দুবছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। লন্ডন থেকে প্রত্যাবর্তনের পর জয়নুলের চিত্রে নতুন একটি ধারা দেখতে পাওয়া যায়, যাকে বলা যায় ‘বাঙালি ধারা’। এ ধারায় প্রাথমিক রঙের ব্যবহার ও পারসপেক্টিভের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ বিষয়বস্ত্ত তাদের জ্যামিতিক আকারে, অনেক সময়ে আধা-বিমূর্ত আদলের উপস্থিতি লক্ষণীয় করে তোলে। ‘দুই মহিলা’, ‘পাইন্যার মা’ ও ‘মহিলা’ হলো এ আমলের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম।

সমগ্র পঞ্চাশ ও ষাটের দশক ধরে জয়নুল আবেদীনের কর্মে রিয়ালিজম, নান্দনিকতা, পল্লীর বিষয়বস্ত্ত ও প্রাথমিক রঙের প্রতি তার আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। তবে কর্মপরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি লোক শিল্পকলার সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেন। এখানে ডাইমেনশনের অভাব, আলো আঁধারির ঘনিষ্ট সম্পর্কের অনুপস্থিতি এবং তাদের গতিময়তার অভাব লক্ষণীয়। এ সীমাকে অতিক্রম করতে জয়নুল আবার ফিরে যান প্রকৃতির কাছে গ্রামীণ জীবনে, জীবনের দৈনন্দিন সংগ্রামের মাঝে, সে সঙ্গে রীতি বৈচিত্র্যের সমন্বয় ঘটিয়ে, যেখানে বাস্তবতা থাকবে মুখ্য কিন্তু অবয়ব হবে আধুনিক। জয়নুলের কাছে ‘আধুনিকতাবাদ’ বলতে শুধুই বিমূর্ততা ছিল না, বরং তার কাছে ‘আধুনিকতা’ শব্দটির ছিলো এক সুগভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য যেখানে সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যক্তিক প্রকাশই মুখ্য।

তাই প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি প্রতিবন্ধকতার বিরূদ্ধে সংগ্রামরত নর-নারীর বলিষ্ঠ শারীরিক গড়ন স্মরণ করিয়ে দেয় ব্যক্তিক সীমাবদ্ধতার মাঝে আধুনিকতাবাদের গুরুত্বপূর্ণ ধারণাকে। জয়নুলের কর্ম কেন্দ্রায়িত হয়েছে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে নর-নারীর শ্রম ও সংগ্রাম এবং সে সঙ্গে তাদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশের মাঝে। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে ভিত্তি করে আঁকা ৬৫ ফুট দীর্ঘ স্ক্রল পেইন্টিং (চাইনিজ ইঙ্ক, জলরঙ ও মোম) ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারানো হাজারো মানুষের স্মৃতির উদ্দেশ্যে আঁকা ৩০ ফুট দীর্ঘ ‘মনপুরা’ পেইন্টিংটির মাঝে তার কর্মের বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়। জয়নুল যদিও প্রকৃতি ও মানব জীবনের চিত্র এঁকেছেন, তবুও ষাটের দশকের শেষ দিক ও সত্তর দশকে আঁকা তার ছবির মধ্যে গতি, মুভমেন্ট পরিস্ফুটিত।

১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁও এ একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারি (শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা) প্রতিষ্ঠা করেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে তার অঙ্কিত কিছু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে পুনরুজীবিত করার আন্দোলনে তিনি নিজেকে সংক্রিয়ভাবে জড়িত করেন। তিনি আশংকা করেছিলেন যে, পাশ্চাত্য টেকনিক ও রীতির প্রভাব, যা এখানকার কিছু চিত্রশিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেছিলো, দেশিয় রীতিকে ধ্বংস করবে। কিন্তু ফুসফুসে ক্যানসারের কারণে তিনি তার কাজ সম্পন্ন করতে পারেন নি। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0047571659088135