শিশু আয়ানের মৃ*ত্যু: ইউনাইটেড মেডিক্যাল বন্ধের নির্দেশ - দৈনিকশিক্ষা

শিশু আয়ানের মৃ*ত্যু: ইউনাইটেড মেডিক্যাল বন্ধের নির্দেশ

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় রাজধানীর বাড্ডা এলাকার ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। হাসপাতালটিতে পরিদর্শনে গিয়ে ওই হাসপাতালের লাইসেন্সসহ জরুরি কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। 

রোববার (১৪ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ নির্দেশ দেয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের (৫+ বছর) মৃত্যুতে তার বাবার অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের পরিচালকের (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) নেতৃত্বে ১০ জানুয়ারি হাসপাতালটি পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রদত্ত লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়। 

এ ছাড়া, দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়— ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসা সেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থি। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হলো।

এর আগে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগে রাজধানীর বাড্ডা থানায় গত ৯ জানুয়ারি মামলা দায়ের করেন আয়ানের বাবা মো. শামীম আহমেদ।

মামলার এজাহারে ভিকটিমের বাবা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে আয়ান আহমেদ। তার বয়স ৫ বছর ৯ মাস। গত ৩০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় আয়ান আহমেদের সুন্নতে খতনা করানোর জন্য সাঁতারকুল, মাদানি অ্যাভিনিউ রোডে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে যাই। যাওয়ার পর হাসপাতালের নিয়ম অনুসারে ভিজিট দিয়ে সিরিয়াল নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় ডা. তাসনুভা মাহজাবিনের রুমে আমার ছেলেকে নিয়ে প্রবেশ করে সুন্নতে খতনা করানোর বিষয়ে আলোচনা করি। তখন তিনি আমার ছেলেকে দেখে বলেন আমরা নিয়মিতভাবে সুন্নতে খতনা করাই এবং সুন্নতে খতনার পূর্বে ওষুধ খাওয়ানোর ফলে বাচ্চার ১০-১৫ মিনিট ঘুমঘুম ভাব থাকে এ সময়ের মধ্যেই আমরা সেটি সম্পন্ন করি। এটাই সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। 

এনেসথেসিয়া স্পেশালিস্ট ডা. সাইদ সাব্বির আহম্মেদ ও ডা.তাসনুভা মাহজাবিন আমার ছেলের শারীরিক পরীক্ষার  জন্য কিছু টেস্ট দেন এবং ওই টেস্টগুলোর রিপোর্টসহ ৩১ ডিসেম্বর সকালে আমাকে যেতে বলেন।  পরে টেস্টগুলো করি ৩১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৮ টায় হাসপাতালে যাই। পরে ডা.তাসনুভা মাহজাবিনকে  আমার ছেলের শারীরিক পরীক্ষার রিপোর্টগুলো দেখাই। তিনি রিপোর্টগুলো দেখে রিপোর্টগুলো ভালো আছে বলে জানান। পরে ডাক্তার সাব্বির ও তাসনুভা ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় নার্সদের সহযোগিতায় আমার ছেলে আয়ান আহমেদকে ওটি রুমে (অপারেশন রুম) রুমে নিয়ে যান। তারা আমাকে তখন ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেন।

এরই মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জন ইন্টার্ন ডাক্তার ওটি ড্রেস পরে ওটি রুমে প্রবেশ করেন। আমি তাদের ওটি রুমে প্রবেশ করার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন ডাক্তার তাসনুভা মাহজাবিনের ক্লাস আছে।

২০/২৫ মিনিট পরে আমি জিজ্ঞাসা করলে আরও কিছু সময় লাগবে বলে সময় পার করতে থাকেন। এক ঘণ্টা পরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা দ্রুত রুমে থেকে বের হয়ে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পরে আরও সময় লাগবে বলে কালক্ষেপণ করতে থাকে। তারপর দেড় ঘণ্টা পর হাসপাতালের বিভিন্ন ডাক্তার উদ্বিগ্ন হয়ে ওটি রুমে প্রবেশ করেন
এবং বের হতে থাকেন। তখন আমরা বুঝতে পারি যে, কোনো একটা সমস্যা হয়েছে।

তখন আমি জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি যে, ডাক্তাররা আমার ছেলের বুকে হাত দিয়ে চাপাচাপি করছেন এবং আমার অনুমতি ছাড়াই তারা আমার ছেলের বুকের দুই পাশে ফুটা করে টিউব স্থাপন করেন। এরপরেও কোনো কাজ না হওয়ায় তারা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আমার ছেলেকে দ্রুত গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন আমি আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ছেলেকে অন্য হাসপাতালে নিতে চাইলেও তারা আমার কথা না শুনে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান।

এজাহারে তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, সেখানে নিয়ে আমার ছেলেকে লাইফ সাপোর্টে রাখেন তারা। আমি ৩১ ডিসেম্বর রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে প্রবেশ করে আমার ছেলের দেহ শীতল ও নিথর অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। হাসপাতালের প্রতি আমাদের অনাস্থা বাড়তে থাকলে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য আমার ছেলেকে অন্য কোনো হাসপাতালে নিতে চাইলে কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো কথাই কর্ণপাত না করে জোর করে তাদের হাসপাতালেই চিকিৎসা প্রদান করে।

আসামিদের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণেই আমার ছেলের মৃত্যু হয়। আমার ছেলেকে কী ধরনের চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োগ করেছে তা তারা অদ্যাবধি পর্যন্ত আমাদের সরবরাহ করেনি। আমার ছেলেকে দেখতে চাইলে নানা তালবাহানা করে ঠিক মতো দেখতে দিতো না। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অধিক লাভবান হওয়ার জন্য আমার ছেলেকে ৩১ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ইউনাইটেড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রেখে অবহেলামূলকভাবে ভুল চিকিৎসা প্রদান করায় আমার ছেলের মৃত্যু হয়। অতঃপর তারা আমার ছেলেকে মৃত ঘোষণা করে আমার ছেলের মৃতদেহসহ ৫ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৭ টাকার একটা বিল ধরি দেয়।

উল্লেখ্য, সুন্নাতে খতনা করাতে গত ৩১ ডিসেম্বর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ানকে ভর্তি করায় পরিবার। সেখানে তাকে অস্ত্রোপচার পূর্ববর্তী এনেসথেসিয়া দেয়ার পর টানা তিনদিন জ্ঞান ফেরেনি তার। পরে তাকে গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে মারা যায় শিশুটি।

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063281059265137