শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) নবাব সিরাজুদ্দৌলা হলের ক্যান্টিনে ১২ লাখ টাকার বাকির একটি লিস্ট প্রকাশিত হয়েছে । বাকির ওই লিস্ট তালিকায় বেশিরভাগই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম পাওয়া গেছে।
বাকির তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, হলের ৪০৯ নম্বর রুমের শিক্ষার্থী অনিক হাসান দুর্জয়ের কাছে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে। তিনি শেকৃবি শাখা ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে ২২৭ নম্বর রুমের ছাত্রলীগের সহসম্পাদক এ কে এম তমাল আব্দুল্লাহর কাছে। ২২০ নম্বর রুমের ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক মোক্তার হোসেনের কাছে ৬৬ হাজার ৮৭০ টাকা, ২০১ নম্বর রুমের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিদোয়ানের কাছে ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা, ৬০৮ নম্বর রুমের ছাত্রলীগের দপ্তরবিষয়ক উপসম্পাদক জেনিথ খানের কাছে পাওনা রয়েছে ২১ হাজার ২৭৫ টাকা। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম মাসুদুর রহমান মিঠুর ‘মাই ম্যান’ খ্যাত রমজান আলীর কাছে ৩৬ হাজার টাকা ও ছাত্রলীগের উপমানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক হৃদয় হাসান রাসেলের কাছে ৩৩ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
ক্যানটিনের ম্যানেজার সোহান বলেন, ‘বাকি রাখা শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে মাসের পর মাস খাবার রুমে নিতেন। কারও ভাই, কারও বন্ধু এদের অবৈধভাবে হলে রেখে ক্যানটিন থেকে খাবার খাওয়াতেন। টাকা চাইলে মেরে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেন। শিক্ষার্থীরা খাবার ভালো করার জন্য চাপ দেন কিন্তু ক্যানটিনে এত টাকা বাকি। যেখান থেকে আমি মালামাল কিনি, সেখানেও আমার ধার করে কেনা লাগে। এত টাকা এখন কীভাবে উঠাব আর কীভাবে আমি এই ক্ষতি পূরণ করব?’
হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলেন, এতদিন ধরে ছাত্রলীগের নামে জুলুম করেছেন এরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হক নষ্ট করা হয়েছে। তারা বাকিতে খাওয়া এ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ বলেন, ‘আমরা তালিকা পেয়েছি, অভিযুক্ত যাদের হলে পেয়েছি তাদের নিয়ে বসছি। সর্বোচ্চ বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট ও অন্য ডকুমেন্টস জমা রাখা হয়েছে। টাকা পরিশোধ করে নিয়ে যাবে। অন্য যারা হলে নেই তাদেরও টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিচ্ছি। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ক্লিয়ারেন্স আটকে দেওয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আবুল বাশার বলেন, ‘আমরা শিগগিরই সব হলের বিষয়ে অফিশিয়াল নোটিশ দেব। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যানটিন, ডাইনিংয়ে কোনো জুলুম চলবে না। শিক্ষার্থীদের জন্য হলের নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমরা কাজ করছি।’