রাজধানীর টিকাটুলির ঐহিত্যবাহী শেরেবাংলা বালিকা মহাবিদ্যালয় নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। মাস্টার রোলে নিয়োগপ্রাপ্ত খন্ডকালীন কতিপয় শিক্ষকদের দাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মৃতিবিড়জিত এ প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি ও অধ্যক্ষসহ বেশিরভাগ শিক্ষকদের জিম্মি করে ইচ্ছেমত কলেজ পরিচালনা করতে চাচ্ছে। তাদের নানা ষড়যন্ত্রের বলি হয়ে ইতিমধ্যেই গভর্নিং বডির সভাপতি মো: রিয়াজ উদ্দিন তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। ওই কলেজে কর্মরত একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও গভর্নিং বডির সদস্যদের সাথে আলাপ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষক হামিদা খাতুন, নাসরিন সুলতানা, নুসরাত জাহান এবং মাস্টার রোলে নিযুক্ত বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক আকলিমা আকতার, সৈয়দা
মেহনাজ নাইয়ারা ও রেখা মন্ডল দীনাসহ কয়েকজন এই ষড়যন্ত্রের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। তাদের কয়েকজন বিএনপি-জামাত জোট আমলে নিয়োগ পান। শিক্ষার্থীদের মারধর, সময়মত স্কুলে না আসা, পরীক্ষায় নম্বর কম দেয়াসহ নানা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন সময়ে শাস্তির মুখোমুখি হওয়া এই শিক্ষকরা বেশ কিছুদিন ধরে গভর্নিং বডির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজসহ অন্য সদস্যদের সরিয়ে দিতে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তারা নামে বেনামে বিভিন্ন জায়গায় মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে ব্যর্থ হয়। পরে সরকারি এক কর্মকর্তাকে ব্যবহার করে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিকে ভুল বুঝিয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আমলে নিতে বাধ্য করে। কথা বলে জানা গেছে, অভিযোগ জানার পর সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে সভাপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন। তবে তিনি অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলেছেন, সঠিক তদন্ত তার বিরুদ্ধে আনা কোন অভিযোগই ঠিকবে না।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সভাপতি ‘পদত্যাগ করেছেন’এমন তথ্য পেয়ে ষড়যন্ত্রকারী শিক্ষকরা গত শুক্রবার ছুটির দিনও কলেজে গিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন। তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল বুঝিয়ে অন্য সাধারণ শিক্ষকদেরও ডেকে আনেন। এসময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তারা হেনস্তা এবং একজন সহকারী শিক্ষকের গায়েও হাত তোলেন। তারা অধ্যক্ষের মোবাইলও ছিনিয়ে নেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। অধ্যক্ষসহ ওই শিক্ষকরা বন্ধের দিনে এইচএসসি পরীক্ষার আসনবন্টন কাজ করছিলেন।
প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগকারীর মধ্যে আকলিমা আকতার ঔদ্ধত্যর্পূর্ণ আচরণসহ নানা অনিয়মে বিভিন্ন সময় একাধিকবার শোকজের মুখোমুখি হয়েছেন। বিএড স্কেল পাওয়ার জন্য দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া বিএড সনদ দাখিল করেছিলেন তিনি। তবে, গভর্নিং বডির মিটিংয়ে তা অগ্রাহ্য হওয়ার পর থেকেই তিনি ক্ষুব্ধ কমিটির উপর ক্ষুব্ধ হন।
মাস্টার রোলে খন্ডকালীন সৈয়দা মেহনাজ নাইয়ারাকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রেণিতে নিয়মিত ফলাফল খারাপ হওয়ায় সতর্কও করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীরাও অভিযোগ করেন। কোচিং বাণিজ্যের কারণে ইংরেজি শিক্ষক না হয়েও তিনি জোর করে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ে পাঠদানে বাধ্য করতেন। কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটুক্তি করার প্রতিবাদে ২০২১ সালে শিক্ষক-শিক্ষর্থীরা মানববন্ধন করলেও মেহনাজ তাতে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত ছিলেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের যোগফল ভুল করে গতবছর একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ বঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খন্ডকালীনেআরেক শিক্ষক রেখামন্ডল সরকারি নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের প্রায়শ শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। এজন্য একাধিকবার তাকে সতর্ক করে কমিটি।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, রিয়াজউদ্দিন দায়িত্ব নেয়ার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ছিলো ২ হাজারের মত। বর্তমানে তা প্রায় তিন হাজারে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে এসএসসি ও এইচএসসির কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এছাড়া তিনি ডিবেটিং ক্লাব, কারাতে প্রশিক্ষণ, হ্যান্ডবল, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ ও পুরো ক্যাম্পাসকে সিসি টিভির আওতায় আনয়নসহ নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড করেছেন। তার প্রচেষ্টায় কলেজের ৬ কোটি টাকার ফান্ড দেড় বছরে আড়াই কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে সাড়ে ৮ কোটিতে দাঁড়ায়। ইতিমধ্যেই কলেজে জাতির পিতার মুর্যালও স্থাপন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাথমিক শাখার একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, রিয়াজ উদ্দিন স্যার কেন পদত্যাগ করেছেন সেটা আমার জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগের কথা বলা হয় তাহলে বলবো সবই মিথ্যাচার। একটা ভুতুড়ে পরিবেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মাত্র দেড় বছরে আলোকোজ্জ্বল করেছেন তিনি। আমাদের কিছু শিক্ষক আছেন তারা বিদ্যালয় চলাকালে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিং বাণিজ্য করতেন। স্কুল চলাকালে বিনানুমতিতে বাসায় চলে আসতেন। রিয়াজ স্যার এসব অনিয়ম বন্ধ করেছেন। এ কারণে শিক্ষকদের ওই অংশ ক্ষুব্ধ তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। যদি কোন অভিযোগ হয় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো সঠিক তদন্ত করুন। তদন্ত করলে সত্যটা বেরিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ বলেন, দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যাপীঠ হিসেবে এর উন্নয়নে মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছি। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের খেলার মাঠসহ সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন করেছি। সুউচ্চ ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি এখানে এসএসসি ও এইচএসসি কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে। ফলাফল আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। শিক্ষকদের সময়মত উপস্থিতি ও সময়মত বিদ্যালয়ে ত্যাগ নিশ্চিতকরণসহ শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে, কতিপয় শিক্ষক এই শৃঙ্খলা মানতে চায় না তারা ইচ্ছেমত আসে আবার চলে যায়। শিক্ষার্থীদের স্কুল সময়ে বাইরে কোচিং বাণিজ্য করে। এই কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বাইরের কিছু লোকের প্ররোচনায় আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি নিশ্চিত তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবো।