দৈনিক শিক্ষাডটকম, সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার চালবন গ্রামে বাড়ি সদ্য পঞ্চম শ্রেণি পাস করা সুমি আক্তারের। বছরের শুরুতে দুটি বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি সে। কারণ নতুন ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি সেকশনে ৫৫ জনের বেশি ভর্তি নেয়নি স্কুলগুলো। সুমির মতো ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার প্রায় সাড়ে ২৯ হাজার শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বললেও দুই মাসে কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ফলে এসব শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তাদের অভিভাবকরা।
জানা যায়, সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় ২০২৩ সালে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে ৫৩ হাজার ৪৯০ জন শিক্ষার্থী। আর জেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ২৬৩টি সরকারি-বেসরকারি স্কুলে আসন রয়েছে ১৮ হাজার ৯৭৫টি এবং ৯২টি মাদ্রাসায় আসন রয়েছে ৫ হাজার ৬০টি। সব মিলিয়ে জেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির আসন রয়েছে ২৪ হাজার ৩৫টি। ফলে নতুন নীতিমালার কারণে ২৯ হাজার ৪৫৫ শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি। এসব শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন অভিভাবকরা।
প্রসঙ্গত, গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে জানানো হয়, ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রতি সেকশনে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে পাঠদানের অনুমতি বা একাডেমিক স্বীকৃতিসহ প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি বাতিল হবে। তাই নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠানগুলো অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেনি।
ভর্তিবঞ্চিত সুমির বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, নতুন নিয়মের কারণে মেয়েকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে পারিনি। তার লেখাপড়া যেন চালু থাকে, তাই একটা কিন্ডারগার্ডেনে আবারও পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করেছি। একইভাবে রতারগাঁও গ্রামের নাহিদ তালুকদারের মা মিনারা খাতুন বলেন, ছেলেটা পাস করলেও ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারেনি। ছেলেটা স্কুলে যাওয়ার জন্য কান্দে।
একই গ্রামের ঝুমা আক্তারের বাবা সফিকুল ইসলাম বলেন, স্কুল থেকে জানানো হয়েছে, ভর্তি বেশি হয়ে গেছে, আর ভর্তি করা যাবে না। স্কুলে যেতে না পেরে মেয়েটি ছবি এঁকে সময় কাটায়। মেয়ের একটা বছর নষ্ট হয়ে যাবে।বিশ^ম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মহসিন আহমদ বলেন, প্রতিবার আমাদের বিদ্যালয়ে ২৫০ থেকে ২৭০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতো। কিন্তু নতুন নীতিমালার কারণে এবার ৫৫ জন করে তিন সেকশনে ১৬৫ জন ভর্তি করেছি। শতাধিক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে না পেরে ফেরত গেছে। এ অবস্থা উপজেলার প্রতিটি বেসরকারি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।
জামালগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চক্রবর্তী বলেন, নতুন নীতিমালার কারণে হাওরাঞ্চলে অনেক শিক্ষার্থী ড্রপ আউট হতে পারে। আমরা সেকশন অনুযায়ী ভর্তি করেছি। আমরা ৫০ জন ফিরিয়ে দিয়েছি। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ অনেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বেতনের ওপর নির্ভরশীল।
সুনামগঞ্জ শহরের হাজী মকবুল পুরকায়স্থ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইনছান মিঞা বলেন, গতবার ৩৩০ জন ছাত্র ভর্র্তি হলেও এবার চারটি শাখায় ২২০ জনকে ভর্র্তি করা হয়েছে। আরও অনেকেই ফিরে গেছে।
ডিসি মো. রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের জন্য ভর্তি নীতিমালা শিথিল করতে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান পৃথক সেকশন করতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে আবেদন করলে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শিক্ষকের প্রয়োজন হলে অস্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বিয়ষটি স্বীকার করে বলেন, নতুন নীতিমালায় অনুযায়ী, ৫৫ জনের বেশি ভর্তি করতে না পারার কারণে সুনামগঞ্জের অনেক শিক্ষার্থী ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে পারছে না। ডিসির মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে, ভর্তির জন্য শাখা খোলা বা শর্ত শিথিলের জন্য। আশা করি, ভর্তি সমস্যার সমাধান হবে।