ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন নিয়ে বিভ্রান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন নিয়ে বিভ্রান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন নিয়ে বিভ্রান্তিতে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। নতুন শিক্ষাক্রমের এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মোট নম্বরের ৬০ শতাংশ শিখনকালীন বা ধারাবাহিক ও ৪০ শতাংশ সামষ্টিক বা পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যয়ন হওয়ার কথা। কিন্তু সামষ্টিক মূল্যায়নের কোনো নির্দেশনা এখনো প্রকাশ করেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। রোজা ও ঈদের ছুটির একমাস পর আগামী ১ জুন থেকে স্কুলগুলোতে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা বলছেন, দ্রুত এ নির্দেশিকা প্রকাশ না হলে এ দুই শ্রেণির অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা নেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে সচেতন অভিভাবকরাও বিভ্রান্তিতে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা রোজার ছুটির মধ্যেই মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশের দাবি জানাচ্ছেন।

এদিকে এনসিটিবির দাবি, মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রস্তুত থাকলেও অবৈধ নোট-গাইড প্রকাশ বন্ধ করতে কৌশলগত কারণে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়নি। যদিও নতুন শিক্ষাক্রমের এ দুই শ্রেণির গাইড বই প্রকাশ আটকাতে পারেনি এনসিটিবি। এদিকে শিক্ষক ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশের চাপ আছে। এমন পরিস্থিতিতে হতাশ এনসিটিবির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শিগগিরই এ নির্দেশিকা তারা প্রকাশ করবেন। 

এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি রোজার মাসে তা না হলে রোজার ছুটির পর মে মাসে এ নির্দেশিকা প্রকাশ হবে। ইতোমধ্যে এ নির্দেশিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন বা পরীক্ষা কিভাবে হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত বলা থাকবে এ নির্দেশিকায়। 

গত ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সামাজিক বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়ের ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও পরীক্ষার মূল্যায়ন (সামষ্টিক মূল্যায়ন) হবে ৪০ শতাংশ। আর বাকি বিষয়গুলো জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা বিষয়গুলোতে শিখনকালীন মূল্যায়ন শতকরা ১০০ ভাগ।

গত ১৩ মার্চ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে প্রচলিত পরীক্ষা না নিতে স্কুলগুলোকে নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। মাধ্যমিক পর্যায়ের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিখন-শেখানো ও মূল্যায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এনসিটিবি প্রণীত শিক্ষক সহায়িকা এবং শিক্ষাক্রমের নির্দেশনা অনুসারে করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেয়া যাবে না। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়ে এনসিটিবি থেকে যে গাইডলাইন পাওয়া যাবে তা পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে। 

এ নির্দেশনার পর শিক্ষকরা এ দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যয়ন নিয়ে বিভ্রান্ত। তারা বলছেন, রোজার ছুটি শেষ হওয়ার মাসখানেক পরই শুরু হচ্ছে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সামষ্টিক মূল্যায়ন কিভাবে হবে তা তারা এখনো জানেন না। এদিকে অভিভাবকরা জানতে চাচ্ছেন ৪০ শতাংশের মূল্যায়ন কিভাবে হবে। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা দ্রুত পরীক্ষার গাইড লাইন প্রকাশ চাচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান পরিষদের সভাপতি ও মুন্সিগঞ্জের লৌহজং গার্লস পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা এ দুই শ্রেণির মূল্যায়ন নিয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে, অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতো আমরা পরীক্ষা নেবো না। তবে, ছুটির তালিকা অনুসারে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ১ জুন থেকে। ছুটির পর ক্লাস শুরু হবে ৩০ এপ্রিল। মাঝখানে শুধু মে মাস। পরীক্ষা নেয়ার আগে প্রশ্ন প্রস্তুত করার শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তাই ছুটির মধ্যে এ নির্দেশিকা প্রকাশ করা হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভালো হতো।  

তিনি আরো বলেন,  এ দুই শ্রেণির ৬০ শতাংশ ধারাবাহিক মূল্যায়নের বিষয়েও ধোঁয়াশা আছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেলেও ননএমপিও শিক্ষকরা পাননি। প্রশিক্ষণেও শিক্ষকদের অনেকে ধারাবাহিক মূল্যায়নের বিষয়ে পরিষ্কার নন। ইনহাউজ প্রশিক্ষণ করে যদিও এসব বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তবুও ধারাবাহিক মূল্যায়নের কোনো লিখিত নির্দেশনা দিলে শিক্ষকদের জন্য সুবিধা হতো। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা ইচ্ছা করেই নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেয়ার গাইডলাইন প্রকাশ করিনি। এ গাইডলাইন প্রস্তুত ছিলো। কিন্তু নোট-গাইড ব্যবসায়ীরা গতবছর থেকে এটি পাওয়ার জন্য লেগে ছিলেন। এখন শিক্ষক-অভিভাবকরাও চাচ্ছেন দ্রুত গাইডলাইনটি পেতে। 

গাইডলাইন প্রকাশ না করায় নোট গাইড প্রকাশ আটকানো গেছে কি না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, গত এক বছর ধরে অবৈধ নোট-গাইড প্রকাশকরা এ মূল্যায়ন কিভাবে হবে সে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে আগে ঘোষণা আগে দিলে আগেই নোট-গাইড বাজারে আসতো। আগামী জুনে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা নেয়া হবে। আমরা চেয়েছিলাম মে মাসে এ গাইডলাইন প্রকাশ করবো। তবে যেভাবে চারদিকে সমালোচনা হচ্ছে আমরা রোজার মাসেই এ গাইডলাইন প্রকাশ করার চিন্তা করছি। 

 

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040521621704102