জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে পাস হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন। আগামী বছরের ১ জুলাই অর্থাৎ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম দিন থেকে এটি কার্যকরের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা বাস্তবায়নসংক্রান্ত সভায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ নির্দেশনা দেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বর্তমানে শুধু সরকারি কর্মচারীরা পেনশন পান। বেসরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে পেনশনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি ছিল আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে। তারই ধারাবাহিকতায় ষাটোর্ধ্ব সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনতে গত ৩০ মার্চ জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইনের খসড়া প্রকাশ করে সরকার।
জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি বিল আকারে পাস হওয়ার পর দ্রুতগতিতে অথরিটি গঠন করার পরিকল্পনা রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। পরবর্তীতে দক্ষ ও কারিগরি জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে। তারা সর্বজনীন পেনশনের বিভিন্ন ধরনের স্কিম তৈরি করবেন। সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা প্রণয়ন ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করে ২০২৩ সালের ১ জুলাইর আগেই পেনশন প্রোডাক্ট তৈরি করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে পুরোদমে এ পেনশনব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে দেশের ভোটারদের কাছে সরকারের জনকল্যাণকর বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে। গেল মাসের শেষ সপ্তাহে সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর দফতরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পেনশনব্যবস্থা স্কিমটি অতিদ্রুত বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেব। স্কিমটি কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে কর্মকর্তাদের বলেন অর্থমন্ত্রী। জানা গেছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত দেশের নাগরিকরা (সরকারি চাকরিজীবী ছাড়া) নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিয়ে ৬০ বছর বয়স হওয়ার পর মাসিক পেনশন তুলতে পারবেন। উদাহরণ হিসেবে বয়স ১৮ বছর হলে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে দিলে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত জমার পরিমাণ দাঁড়াবে ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা। বিপরীতে প্রতি মাসে পাওয়া যাবে ৬৪ হাজার ৭৭৬ টাকা করে ৬০ বছর থেকে আমৃত্যু। এভাবে মাসিক দেওয়া অর্থের পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে পেনশনের পরিমাণ।
দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য এমন পেনশনব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। অন্তর্ভুক্ত নাগরিকরা একটানা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দিয়ে মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন এবং চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্তিতে পেনশন তহবিলে মুনাফাসহ জমার বিপরীতে পেনশন দেওয়া হবে। তবে পেনশন পাওয়াকালীন বয়স ৭৫ বছর হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনভোগীর নমিনি বা মনোনীত ব্যক্তি বাকি সময়ের (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) মাসিক পেনশন পাবেন। এ ছাড়া কেউ সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করার আগেই মৃত্যুবরণ করলে, জমা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। জাতীয় পেনশন আইনে বলা হয়েছে, পেনশন তহবিলে জমা অর্থ কখনই উত্তোলন করা যাবে না। তবে জমা করা অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ নিতে পারবেন, যা সরকার ধার্যকৃত ফিসহ পরিশোধ করতে হবে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ৮৫ শতাংশ জনবলই অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত। অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত এবং প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সামাজিক নিরাপত্তাকাঠামো না থাকায় বৃদ্ধকালে তাদের জীবনযাপনে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সংসদে তিনি জানান, ২০২০ সালে দেশে ষাটোর্ধ্ব জনসংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ, যা ২০৪১ সালে ৩ কোটি ১০ লাখ এবং ২০৬১ সালে ৫ কোটি ৫৭ লাখে দাঁড়াবে। প্রত্যাশিত গড় আয়ু বর্তমানে ৭৩ বছর, যা ২০৫০ সালে ৭৯ দশমিক ৯ এবং ২০৭৫ সালে ৮৪ দশমিক ৩ বছর হবে। এসব জ্যেষ্ঠ নাগরিকের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই চালু করা হচ্ছে সর্বজনীন পেনশন।