সংসার চালাতে গলদঘর্ম এমপিও শিক্ষকরা - দৈনিকশিক্ষা

সংসার চালাতে গলদঘর্ম এমপিও শিক্ষকরা

রুম্মান তূর্য |

হৃদরোগ আর কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসা খরচ মেটাতে পারছেন না শিক্ষক পুত্র আবদুল্লাহ আল মামুন। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাসিন্দা ৩২ বছর বয়সী মামুন এখনো অবিবাহিত। তেরখাদার পানকতি ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় শরীরচর্চা শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশ নিয়ে গতবছর জানুয়ারিতে যোগদান করেছেন। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ থেকে ফেরার পর কথা হয় তার সঙ্গে। 

দৈনিক আমাদের বার্তাকে মামুন বলেন, ১৫ হাজার ৯০০ টাকা বেতনে সংসার চলে না। কিডনির জটিলতা ও হৃদরোগে আক্রান্ত মায়ের ওষুধ তাই বাদ দিতে হয়। একদিন ওষুধ দিলে পরের একদিন দিতে পারি না। তারপরও মাসের প্রথম ২০ দিনেই পকেট শূন্য।


 
তিনি আরও বলেন, তেরখাদায় শিক্ষকতা করি। এখানে থাকতে বাসা ভাড়াতেই চলে যায় ৪ হাজার টাকা। আর বাকি টাকায় সংসার চালাতে হয়। নিজের সংসার যে শুরু করবো সে স্বপ্ন দেখার সাহস এখন আমার নেই।

শুধু মামুন নন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধবগতিতে সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত শুক্রবার রাতে কথা হয় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার একটি মাদরাসার শিক্ষক বগুড়ার ছেলে সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার গিয়েছিলাম বাজারে। মুরগী কেনার ইচ্ছা থাকলেও কিনতে পারিনি। ৬০ টাকা হালি দরে ডিম কিনতে পেরেছি। আগে ২০ টাকা কেজি দরে কেনা আলু কিনেছি ৩৫ টাকা দরে। ১৫ হাজার ৯০০ টাকা বেতনের মধ্যে বাসা ভাড়ায় চলে যায় ৬ হাজার টাকা। এরপর আর সংসার চলে না। কোম্পানীগঞ্জে স্ত্রী আমার সঙ্গে থাকলেও বাবা-মা থাকেন বগুড়ায়। কিন্তু বাবা-মাকে একটা টাকাও পাঠাতে পারি না। বাড়ির কাছে বদলি হয়ে যেতে পারলে কিছু টাকা বাঁচতো, কিন্তু সে সুযোগও নেই। বাড়িভাড়াটাও যদি সরকার আমাদের দিতো কিছুটা বাঁচতে পারতাম। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করা শিক্ষকদেরও। 

দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন হয় সরকারি কর্মচারীদের মতোই জাতীয় পে স্কেল অনুসারে। সর্বশেষ ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় পে স্কেল গঠন করা হয়। এমপিওভুক্ত স্কুল ও মাদরাসার শিক্ষকরা বিএড করা থাকলে এন্ট্রি লেভেলে ১০ম গ্রেডে বেতন পান। বিএড না থাকলে ১১ গ্রেডে পান। অপরদিকে কলেজের প্রভাষকরা বেতন পান ৯ নবম গ্রেডে। আর এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দেয়া হয় ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা। অবসর সুবিধা ও শিক্ষক কল্যাণ ট্রাস্টের জন্য কেটে রাখা হয় মূল বেতনের ১০ শতাংশ। গত ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষকরা ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাচ্ছেন। সে হিসেবে এমপিওভুক্ত প্রভাষক ও সহকারী শিক্ষকরা ১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকার মধ্যে বেতন ভাতা পান। এতে সংসার চলছে না বলে অভিযোগ তাদের।  

এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারিকরণ, সরকারি কর্মচারীদের মতো বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এবং দ্রব্যমূল্যের ঊধ্বগতিতে ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ট্রেজারার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ইউনেস্কো-আইএলও শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর কথা বললেও আজ সারাদেশের শিক্ষকরা নিগৃহিত। তারা পর্যাপ্ত বেতন পাচ্ছেন না। এ জটিলতা কাটাতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। তা না হলে শিক্ষকদের বঞ্চনা কটানো যাবে না।
  
এদিকে শিক্ষকদের দুরাবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে কিছু বলতে রাজি হননি শিক্ষা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এ নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার সুযোগ নেই। এটি সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী মহলের বিষয়। 

 

চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ - dainik shiksha চট্টগ্রামে সংঘর্ষে শিক্ষার্থীসহ নিহত ২ ঢামেকে একজনের মৃত্যু - dainik shiksha ঢামেকে একজনের মৃত্যু জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ - dainik shiksha জবির কোটা আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ ৪ বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ - dainik shiksha বেরোবিতে ত্রিমুখী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ২০০ শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর - dainik shiksha শহীদ মিনার এলাকায় অধ্যাপককে মারধর মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের - dainik shiksha সময়মতো যথাযথ অ্যাকশন নেয়া হবে : কাদের সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য - dainik shiksha সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই: ঢাবি উপাচার্য যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো - dainik shiksha যারা নিজেদের রাজাকার বলেছে তাদের শেষ দেখে ছাড়বো সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ - dainik shiksha সায়েন্সল্যাবে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003756046295166