এখন ভুল করার সময় নয়, কারও সামান্য ভুলে যেন সরকারের বড় ক্ষতি না হয়। এ ব্যাপারে সচিবদের নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাজের প্রতি শতভাগ দায়িত্বশীল হতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি আদেশ থেকে প্রকল্প প্রস্তাবনা– সব নথি যেন যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়, সে ব্যাপারে এসেছে পরামর্শ। সেই সঙ্গে সচিবদের বিতর্ক এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
সচিবালয়ে গতকাল সোমবার সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সিনিয়র সচিব ও সচিবদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। গতকাল প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক ঘিরে সব সচিবকে ‘বিশেষ আমন্ত্রণ’ জানানো হয়েছিল। সূত্র জানায়, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে তেমন আলোচনা না হলেও নির্বাচন সামনে রেখেই সচিবদের কাজের প্রতি সতর্ক করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব তাঁর সাধারণ নির্দেশনায় প্রকল্প ব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশি কথা বলেছেন। প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে যাতে ভুল কমিয়ে আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে এবং যার যার দায়িত্বের প্রতি নিবেদিত থাকতে বলা হয়েছে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে বৈঠকে উপস্থিত অন্তত সাত-আট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের কেউই নাম প্রকাশ করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদের একজন বলেন, সম্প্রতি আইএমইডির একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। প্রসঙ্গটি বৈঠকে না উঠলেও ইঙ্গিতে শক্তভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, চিঠিপত্র বা অন্য যে কোনো যোগাযোগে যেন সরকারবিরোধী মেসেজ চলে না যায়। তাহলে নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন পক্ষ বিভ্রান্তি ছড়ানোর সুযোগ পাবে।
সচিবরা যাতে কোনো বিতর্কে না জড়ান, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এক সচিব উদাহরণ টেনে বলেন, সম্প্রতি এক সিনিয়র সচিব রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে নিজের সঙ্গে সরকারকেও সমালোচনায় ফেলেন। এর পর তাঁকে ওএসডি করা হয়। সামনের দিনে এ ধরনের কার্যক্রমে কেউ যাতে ভুল করেও না জড়ান, সে বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
গতকালের বৈঠকের গুরুত্বের বিষয়ে জানতে চাইলে এক সচিব বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে এমন বৈঠকের গুরুত্ব নিশ্চয় আছে। তবে প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের মূল দায়িত্ব আইনবিধি মেনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা। তাঁর মতে, আমরা পলিটিক্যাল মাস্টারের (মন্ত্রীদের) অধীনে কাজ করি। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হলে তাদের নীতি বাস্তবায়ন করাই কর্মকর্তাদের কাজ। এ ক্ষেত্রে যেন সমন্বয়হীনতা না থাকে সেসব বিষয়ই বৈঠকে গুরুত্ব পেয়েছে। আর বৈঠক থেকে পাওয়া বার্তাগুলো সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দেশজুড়ে থাকা দপ্তর-সংস্থায় জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
গতকালের দুই দফা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক সম্পর্কে সাংবাদিকদের সংক্ষিপ্ত ব্রিফ করেন। সব সচিবকে নিয়ে করা বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার না করলেও তিনি বলেছেন, এটা সচিব সভা নয়।
তবে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সাধারণত যেভাবে সচিব সভা হয়, সেভাবে আনুষ্ঠানিক এজেন্ডা দিয়ে সভা ডাকা হয়নি। গতকালের বৈঠকটি কার্যত সচিব সভায় রূপ নেয়।
প্রসঙ্গত, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে থাকা প্রশাসনিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ অর্থ, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, আইনসহ গুরুত্বপূর্ণ ১৪ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা সদস্য হিসেবে আছেন। এর বাইরে আলোচ্যসূচিতে থাকা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা এ বৈঠকে অংশ নেন। সব মিলিয়ে এ কমিটির বৈঠকে ২০-২২ জন সচিব উপস্থিত থাকেন। এ সংক্রান্ত বৈঠক মাসে এক থেকে দু’বার হয়। আবার কোনো মাসে হয় না। এ বৈঠক সাধারণত মন্ত্রিপরিষদ সচিবের আগ্রহের ওপর নির্ভর করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারপ্রধানও সচিব সভায় উপস্থিত থাকার সম্মতি দেন।