দেশের চলমান পরিস্থিতিতে গত রোববার তিন তিন সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর হঠাৎ করেই পট পরিবর্তনে গত সোমবার দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস মঙ্গলবার থেকে খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয় আন্তবাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সে অনুসারে সরকারি-বেসরকারি অফিস খোলে। তবে সব অফিসে উপস্থিতি ছিলো অনেক কম। সবার মধ্যে চাপা আতঙ্ক লক্ষ্য করা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে তখনো দু-একজন কর্মকর্তা অফিসে আসছেন। কোনো কোনো কর্মকর্তার দপ্তর তখনো ফাঁকা। ছিলো না কোনো কাজকর্ম। দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলে সময় পার করেন তারা। কিন্তু অনেকের চোখেমুখেই ছিলো আতঙ্ক। বিভিন্ন অফিসপ্রধানের কক্ষ থেকে নামিয়ে ফেলা হয় পদত্যাগ করে দেশছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এখন দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আজ-কালের মধ্যে তা হতে পারে।
শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পর স্বাভাবিকভাবেই মন্ত্রীরাও আর নেই। বেশ কয়েকজন সচিব অফিস করেছেন। এ অবস্থায় এদিন সচিবালয়ের চিত্র পাল্টে গেছে। নেই চিরচেনা রূপ। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর চোখেমুখে ভয়ের ছাপ।
আইন মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়, মন্ত্রী আনিসুল হকের নামফলক মুছে ফেলা হয়েছে। জানতে চাইলে তার দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, কে মুছে ফেলেছে তা তিনি জানেন না। অন্য একটি দপ্তরের একজন কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, পদত্যাগী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি নেই।
এদিন সচিবালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তরের বিভিন্ন দেয়াল থেকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবিসহ অন্যান্য ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, এখন কার্যত সরকার নেই। ফলে তারা তেমন কোনো নির্দেশনাও পাননি। সরকারি চাকরি করেন, তাই অফিসে এসেছেন।
সরকারি অফিস সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এদিন দুপুর ১২টার দিকেই কর্মকর্তা-কর্মচারী অফিস ছেড়ে বের হয়ে যান। এ সময় কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ‘অটো ছুটি’ হয়ে গেছে।
এদিকে শিক্ষা অধিদপ্তরেরও একই চিত্র দেখা গেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন হাতে গোনা। যারা এসেছিলেন তাদের হাতে ছিলো না তেমন কাজ। দেখা যায়, সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ। পরে দেখা যায় যারা এসেছেন তারাও সময় হওয়ার আগেই অফিস ত্যাগ করেছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও রাজধানীতে তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান খোলেনি। চোখে পড়েনি কোনো শিক্ষার্থী।