টাঙ্গাইলে গত কয়েক বছরে অটিজম আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু বাড়েনি প্রতিবন্ধী স্কুলগুলোতে তাদের সঠিক পরিচর্যা। এ ধরনের শিশুর অভিভাবকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি । মুক ও বধির স্কুলে দেখা যায় অটিজম শিশুদের থেরাপি দেয়া হচ্ছে। এখানে অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব আছে বলেই তারা তাদের অটিজম শিশুদের মুক ও বধির স্কুলে ভর্তি করেন।
কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। প্রায় ছয় বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এবং তার সহধর্মিণী একই হাসপাতালের এনাটমি বিভাগের প্রভাষক ডা. জাহিদা বেগম সুইটি অটিজম আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করছেন।
নিজেদের জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকেই তারা অটিজম শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০১১ সালের তার স্ত্রী প্রথম সন্তান প্রসব করেন। সন্তানের নাম রাখেন জাইদি। সন্তানের বয়স যখন প্রায় তিন বছর তখন ডা. জাহাঙ্গীর বুঝতে পারলেন সন্তান স্বাভাবিক নয়। চিকিৎসার জন্য তিনি অনেক জায়গায় নিয়ে গেছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার হেলাল আহমেদ তাদের জানান, 'আপনার ছেলে সবার থেকে একটু আলাদা, ওকে ঢাকা নিয়ে যান। টাঙ্গাইলে এর চিকিৎসা হবে না। আপনার ছেলে অটিস্টিক।' এ কথা শুনে আঘাত পেলেও তারা স্বামী-স্ত্রী কেউ ভেঙে পড়েননি। অবশেষে মিরপুর সিআরপি-তে সন্তান জাইদির তিন বছর টানা চিকিৎসা করান। চিকিৎসা ছিল অনেক ব্যয়বহুল। তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ায় এক সময় লক্ষ্য করলেন তার ছেলের মতো টাঙ্গাইলে আরো অনেক অটিজম শিশু আছে। তাদের অভিভাবক সন্তানের চিকিৎসা ঠিকভাবে করাতে পারছেন না। ঢাকায় নিয়মিত চিকিৎসা করানো অনেকের জন্য কঠিন। তাছাড়া এ চিকিৎসা ব্যয়বহুলও। তখন সেই উপলব্ধি থেকেই তিনি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে 'প্রত্যাশা নিউরোলজি এন্ড অটিজম সেন্টার’ গড়ে তোলেন। যার মাধ্যমে তার সন্তানের সাথে সাথে অন্যদের সন্তান চিকিৎসা পাবে। বর্তমানে ঢাকা থেকে ছয়জন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট টাঙ্গাইল এসে চিকিৎসা দিচ্ছেন। তাদের পাশাপাশি স্থানীয় চারজন কাজ করছেন।
তিনি বলেন, অটিজমের ক্ষেত্রে প্রতি একজন বাচ্চার জন্য একজন শিক্ষক প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের স্কুলে জনবলের খুব অভাব। বেশিরভাগ স্কুল ব্যক্তিকেন্দ্রিক। তিনি আরো বলেন, সরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশু বিকাশ কেন্দ্র আছে। কিন্তু এখানে জনবলের অভাব। এদিকে সরকারের নজরদারি খুব প্রয়োজন।