সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সাংবাদিকদেরও ডাকবে ডিবি - দৈনিকশিক্ষা

সনদ জালিয়াতিতে জড়িত সাংবাদিকদেরও ডাকবে ডিবি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদ জালিয়াতি ও অবৈধ বাণিজ্যের ঘটনায় নাম আসা সাংবাদিক ও দুদক কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে পারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

তবে তার আগে তাদেরকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে থাকা মূল অভিযুক্ত কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চাকরিচ্যুত সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামানের মুখোমুখি হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।  

শরীফুল আলম সুমন (বামে), সাব্বির নেওয়াজ (মাঝে), নিজামুল হক (ডানে)

শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশিদ এমনটাই জানান।  

তিনি বলেন, রিমান্ডে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান যাদের নাম বলেছেন তাদেরও প্রয়োজন হলে ডাকা হবে। প্রয়োজন হলে সাংবাদিকদের সঙ্গেও আমরা কথা বলবো।

ডিবি প্রধান বলেন, দ্বিতীয় বার রিমান্ডে নিয়ে যখন আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করলাম, তখন শামসুজ্জামান বললেন, কোন সাংবাদিককে কখন কোথায় কীভাবে টাকা দিয়েছেন, কোন সাংবাদিকরা সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিক্রিতে জড়িত ছিলেন তিনি সব ডিজিটালি দেখিয়ে দেবেন। 

সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক ও তাদের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের কাছে আমাদের ডিসি মশিউর অলরেডি টেলিফোন করেছেন। সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। 

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামান

তিনি বলেন, অন্যায়ভাবে কেউ হয়রানির শিকার হোক সেটা আমরা চাই না। যেসব সাংবাদিকের নাম এসেছে তারা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে এসে শামসুজ্জামানের মুখোমুখি হতে পারেন, অথবা আমাদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন। তাদের স্বপক্ষে যদি কোনো তথ্য প্রমাণ থাকে দিতে পারেন। 


 
এরই মধ্যে শামসুজ্জামান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবাবনবন্দি দিয়েছেন জানিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের প্রতিপক্ষ না। তারা চাইলে আমাদের হাতে আসা ডকুমেন্টস ও ডিজিটাল প্রমাণগুলো দেখতে পারেন।

দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তাদের তিন সদস্যের একটা কমিটি আছে। তাদেরও আমরা বলেছি, দুদক সর্ম্পকে শামসুজ্জামান যেসব কথা বলেছেন, সে বিষয়ে প্রয়োজন মনে করলে আপনারাও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। তারা যদি আসেন, কথা বলবেন। 

হারুন অর রশিদ বলেন, আসামি শামসুজ্জামান গত ঈদুল ফিতরের আগে ৬ দিনের রিমান্ডে ছিলেন। তখন তার কাছে কিছু সাংবাদিক টেলিফোন করে বলেন, ঈদ চলে এলো, টাকা দেন। তখন আমরা তার কাছে জানতে চাই, আপনার কাছে সাংবাদিকরা টাকা চাচ্ছে কেনো? তিনি বলেন, আমার পদটাকে ধরে রাখার জন্য অনেককেই ম্যানেজ করতে হয়েছে। এই ম্যানেজটা না করলে তারা আমাকে হয়তো এ পদ থেকে সরিয়ে ফেলবেন। 

ডিবি প্রধান বলেন, সাংবাদিকরা তো ডিবির শত্রু না, প্রতিপক্ষ না। আবার শামসুজ্জামানেরও প্রতিপক্ষ না। আর সব সাংবাদিকদের নিয়েও তিনি বলছেন না। তিনি গুটিকয়েক সাংবাদিকে নিয়ে বলছেন। 

ডিবি প্রধান বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের নামে একটা লেটার অব অথোরাইজেশন বানিয়ে খিলগাঁওয়ে এক কম্পিউটার অপারেটরকে দিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মনোগ্রামের জলছাপ ও সূক্ষ লেখাসম্পন্ন ব্ল্যাংক মার্কসসিট ও সার্টিফিকেট বানিয়েছেন এই শামসুজ্জামান। 

খিলগাঁও থানার সে মামলাতেই তাকে দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। তাকে খিলগাঁওয়ের কম্পিউটার সেন্টারে সনদ জাল করার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। 

তিনিসহ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বছরের পর বছর যেসব জাল মার্কসশিট ও সার্টিফিকেট বিক্রি করেছেন সেগুলো কীভাবে শনাক্ত করে বাতিল করা যায় সে সম্পর্কে শামসুজ্জামান গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমাদেরকে দিয়েছেন। 

যা আমরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে জানাবো। বিশেষ করে বুয়েটের এক্সপার্টদেরকে নিয়ে কীভাবে এই কাজটা করা যায়, সে সম্পর্কে সাজেশন নেবো।

তিনি বলেন, বিভিন্ন অসদাচারণ ও জালিয়াতির দায়ে গত ফেব্রুয়ারিতে কারিগরি  শিক্ষা বোর্ডে শামসুজ্জামানের দণ্ড হয়েছিলো। ওই ঘটনায় গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সিসিটিভি ফুটেজ ও ডিজিটাল তথ্য থাকার পরেও তদন্ত রিপোর্ট দিতে বিলম্ব করছিলো। 

সিস্টেম এনালিস্ট শামসুজ্জামান কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চাকরিচ্যুত ফয়সালকে ফুলটাইম নিয়োগ দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সার্টিফিকেট ও মার্কসশিট তৈরি করে বিক্রি করছিলেন। 

নিজের বাসায় বসে কম্পিউটার প্রযুক্তির মাধ্যমে সেগুলো বোর্ডের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করছিলেন। এর ফলে যারা জাল সনদ কিনতেন তারা ওয়েবসাইটে আপলোড হওয়া রোল নাম্বারের সঙ্গে নিজেরা মিলিয়ে নিতেন। এমন জালিয়াতির মাধ্যমে জাল সনদও বৈধতা পেয়ে যেতো। 

প্রসঙ্গত, জাল সার্টিফিকেট প্রিন্ট ও বিক্রির অভিযোগে গত ৩১ মার্চ রাতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট প্রকৌশলী এ কে এম শামসুজ্জামানকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। 

তাকে গ্রেফতারের পর মহানগর পুলিশ জানায়, বিপুল সংখ্যক অবৈধ সার্টিফিকেট ও মার্কশিটসহ শামসুজ্জামানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর পীরেরবাগে তার বাসায় অবৈধ সার্টিফিকেট ও মার্কশিট তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। 

পরদিন ১ এপ্রিল বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের সই করা অফিস আদেশে শামসুজ্জামানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। তারপর অবৈধ সনদ বিক্রির সঙ্গে আর কেউ জড়িত কিনা তার তদন্ত শুরু হয়। সনদ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সনদ বাণিজ্যের প্রমাণ পেয়ে তার স্ত্রী সেহেলা পারভীনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর কিছু দিন পর সংবাদমাধ্যমে শামসুজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। মেধাবী ও গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কর্মকর্তার লাগাতার জেরার মুখে অবৈধ সনদ বাণিজ্যের খবর চাপা দিতে ঘুষ নেয়া সাংবাদিকদের নাম প্রকাশ করেন শামসুজ্জামান।  

তিনি বলেন, খবর প্রকাশের হুমকি দিয়ে দৈনিক কালের কণ্ঠের শিক্ষা রিপোর্টার শরীফুল আলম সুমন নিয়েছেন ৮ লাখ টাকা। দৈনিক ইত্তেফাকের শিক্ষা সাংবাদিক নিজামুল হক নিয়েছেন ৬ লাখ। দৈনিক সমকালের শিক্ষা সাংবাদিক সাব্বির নেওয়াজ নিয়েছেন ৫ লাখ টাকা ঘুষ। 

এ ছাড়া বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল ডিবিসির মাহমুদ সোহেল সাড়ে ৪ লাখ, এশিয়ান টিভির জাকির হোসেন পাটোয়ারি ২ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। অন্যান্য সাংবাদিকদের মধ্যে হাসমত বিভিন্ন সময়ে মোট ২ লাখ টাকা নিয়েছেন, রুবেল নামে আর এক সাংবাদিক বিভিন্ন সময়ে বিজ্ঞাপন দেয়ার কথা বলেও টাকা নিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন কারিগরি বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট। 

এ ছাড়াও  আবু জাফর সূয নামে এক সাংবাদিক নেতা ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন দাবি করে জিজ্ঞাসাবাদে শামসুজ্জামান আরো বলেন, এসব সাংবাদিক রিপোর্ট করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন তিনি। তাদের টাকা দেয়ার পর রিপোর্ট হতো না। তারা অন্য সাংবাদিকদেরও ম্যানেজ করতেন।    

এদিকে ৪৬, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের পাঁচতলায় ঘুষকাণ্ডে নাম আসা শিক্ষা সাংবাদিকদের একটি আস্তানাও অনুসন্ধানের আওতায় এসেছে। ওই ভবনের একজন জানিয়েছেন, ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পর ওই অফিসে আর কেউ আসেন না। 

মাঝে মাঝে অপরিচিত ব্যক্তিরা এসে খোঁজখবর জানতে চান। কিন্তু তাদের পরিচয় জানা যায় না। অফিসটি ভাড়া নিয়েছেন ঘুষকাণ্ডে নাম আসা তিন শিক্ষা সাংবাদিকের একজন।

 

তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি - dainik shiksha তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কমিটি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি - dainik shiksha স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তির দাবি ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ - dainik shiksha ঢাবিতে খেলোয়াড় কোটায় ভর্তি নির্দেশিকা প্রকাশ শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি - dainik shiksha শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজকে ভাসানী নামকরণের দাবি এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল - dainik shiksha এইচপিভি টিকাদান কর্মসূচির সমন্বয় সভা কাল ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর - dainik shiksha ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ২২ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0060310363769531