সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি কার্যকর করা হয়েছে। আগে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকসহ মাদরাসায় বার্ষিক ছুটির সমন্বয় ছিলো। ছুটি ছিলো ৮৫ দিন। তবে বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৭৬ দিন ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটিও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দেয়া উচিত।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর অতীতের সমন্বিত ছুটির রেকর্ড ভাঙে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছুটি ২২ দিন কমিয়ে মাত্র ৫৪ দিন নির্ধারণ করা হয়েছিলো। তার মধ্যে প্রধান শিক্ষকের হাতে তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি রাখা হয় তাও আবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদনক্রমে ভোগ করতে হয়েছে। নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখায় ৭৬ দিন ছুটির বিষয়টি উল্লেখ আছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মাধ্যমিকের সমান ছুটির রেওয়াজ ভুলে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকের মাঝে বিশাল এক ছুটি বৈষম্যের দেয়াল সৃষ্টি করেছে।
২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ছুটির তালিকায় দেখা যায়, অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরো রমজান মাস ছুটি থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি কমিয়ে আনা হয়েছে এবং প্রায় ১৫ রমজান পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পাঠদান চলে। রোজা রেখে সে সময় শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা নিতান্তই কষ্টকর। রমজানে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছেন নারী শিক্ষকরা। সারাদিন রোজা রেখে, নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, স্বামী-সংসার সামলিয়ে ইফতারি প্রস্তুত করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। ইফতারের পর তারাবিহ নামাজ আদায় করতে না-করতে আবার সেহরির খাবার প্রস্তুত করতে হয় প্রাথমিকের বেশিরভাগ নারী শিক্ষককে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধু রমজানের মাসের ছুটির ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়নি, এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২ দিন শীতকালীন ছুটির ঘোষণা থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মাত্র তিন দিন শীতকালীন ছুটি পাবেন। প্রাথমিক শিক্ষকরা ভ্যাকেশনাল ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী। ফলে তারা শ্রান্তি বিনোদন, অর্জিত ছুটিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। বিনা কারণে ভ্যাকেশনাল ছুটি কমিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের সামাজিক ও মানসিকভাবে হেয় করা উচিত নয়। তাদের মানসিকভাবে অসন্তুষ্ট রেখে কখনো মানসম্মত শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব নয়।
ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন ছুটি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় অভিভাবকদেরও। কোনো পরিবারে একাধিক সন্তান প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনা করে থাকে। প্রায়ই দেখা যায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছুটি নিয়ে বড় ছেলেমেয়েরা যখন গ্রামের বাড়িতে কিংবা কোথাও বেড়াতে যায় তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম চলমান থাকলেও সংগত কারণেই পরিবারের ছোট ছোট শিশুরা পরিবারের বড়দের সঙ্গে বেড়াতে চলে যান। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এসব শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। এতে করে বিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমে যায় ঠিক তেমনিভাবে পড়ালেখার মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফলে শতভাগ শিশুর শিখন নিশ্চিত করতে অভিভাবকদের ও শিক্ষকদেরকে অনেকটা চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এ অবস্থায় সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিন্ন ছুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে কাছে বিনীত অনুরোধ, বাস্তবতা অনুধাবন করে প্রাথমিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কল্যাণে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে ও নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিকের বার্ষিক ছুটির তালিকায় বার্ষিক ছুটি ৭৬ দিন নির্ধারণ করা হোক।
লেখক: প্রধান শিক্ষক, গোয়াইনঘাট, সিলেট
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।