সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আগুন থামান : হাইকোর্ট - দৈনিকশিক্ষা

সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আগুন থামান : হাইকোর্ট

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিচারকের সঙ্গে কিছু আইনজীবীর অশালীন আচরণকে পৃথিবীর ইতিহাসের বিরল বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। আদালত এ ঘটনাকে ‘আগুন’ অভিহিত করে বলেন, এ আগুন থামান, নতুবা সবাইকে জ্বলতে হবে। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। আদালত আরো বলেন, এমন ঘটনা চলতে থাকলে আইন-আদালত বলে কিছু থাকবে না। আইনজীবী নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট আরো বলেন, কেউ কোনো কোর্ট বর্জন করবেন না। সবাই মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আগুন থামান। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে গত ২ জানুয়ারি  গালিগালাজ ও অশালীন আচরণ করেন কিছু আইনজীবী। ওই ঘটনার দৃশ্য ভিডিও করে ইন্টারনেটেও ছড়িয়ে দেয়া হয়। আদালত বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আমরা কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখবো। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা জুডিশিয়ারিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।

শুনানির শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার নেতৃবৃন্দের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, আদালত অবমাননার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আমরা দুই মাস সময় প্রার্থনা করছি। এ সময় আদালত বলেন, আপনারা কি কনটেস্ট করতে চাচ্ছেন? উত্তরে আইনজীবী মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, আমরা ব্যাখ্যা দেব বলে সময় প্রার্থনা করছি। 

আদালত বলেন, আদালত অবমাননার রুল জারির পর থেকে এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নজির দেখেছি, পড়েছি। পৃথিবীর কোথাও আদালত কক্ষে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। সভ্যতা বিবর্জিত ঘটনা এটি। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি সেটা সবাইকে ভাবতে হবে। 
 
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বার সভাপতিকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আপনি তো শুধু আইনজীবী নন। আপনি আইনজীবীদের নেতা। মানুষ যখন বড় পদে যায়, তখন আরো বিনয়ী হয়। তার দায়িত্ব বেড়ে যায়।

হাইকোর্ট বলেন, আদালত তো শক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়। আদালতকে অসম্মান করতে থাকলে এটা কারো জন্য শুভ হবে না। আদালতকে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। তাহলে আপনারা সম্মান পাবেন। আদালত না থাকলে আপনারাও থাকবেন না। 

এসময় সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সময় আবেদন করেন।

তখন আদালত বলেন, আমরা সময় দিতে পারি তবে আপনারা পরিস্থিতি কুল ডাউন করুন। কোন কোর্ট বর্জন করবেন না।

এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জরুল হক আদালতকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছি। কাজ শুরু করেছি। আমাদেরকে সময় দিন।’

আদালত বলেন, আপনারা পরিস্থিতি কুল ডাউন করুন। আমরা প্রতি মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করছি।

এসময় সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির আদালতকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আপনারা আইনজীবীদের তলব করলেন। আদালত অবমাননার রুল জারি করলেন। কিন্তু বিচারকদের প্রতি আদালত অবমাননার রুল জারি করলেন না। বিচারকদের বিরুদ্ধেও আদালত অবমাননার রুল জারি করুন। আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারক খুব খারাপ আচরণ করেছেন। আমরা কতদিন এ আচরণ সহ্য করব।

এসময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতির বক্তব্যর প্রতি সমর্থন জানিয়ে উচ্চস্বরে ‘ঠিক, ঠিক’ বলে ওঠেন।
তখন আদালত বলেন, এটা অপ্রত্যাশিত। এখানে কি বার আর বেঞ্চের যুদ্ধ শুরু হয়েছে? এজলাস কক্ষে কি বাইরে থেকে লোক ঢুকেছে? সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা তো এ রকম করতে পারে না।

এ ঘটনায় অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা এটা করতে পারেন না। সবাই চুপ করুন।

আদালত বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিচারক ভুল করতে পারেন। এর জন্য প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী আছেন। তাদের কাছে বিচার চাইতে পারতেন। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনজীবী নেতাদেরকে সমঝোতার প্রচেষ্টার চালানোর পরামর্শ দিয়ে আদালত বলেন, সমঝোতার চেষ্টা করুন। সমঝোতা হলে আমরা অন্যভাবে চিন্তা করবো।

পরে আদালত সময় আবেদন গ্রহণ করে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি দিন নির্ধারণ করে দেন।

শুনানির পুরো সময় এজলাস কক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. গোলাম রাব্বানী, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ।

প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও অশালীন আচরণের ঘটনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট তানভীর আহমেদ ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী ও অ্যাডভোকেট জুবায়ের ইসলামকে গত ৫ জানুয়ারি তলব করে আদেশ দেন  হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার দায়ে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। গতকাল ১৭ জানুয়ারী ছিল তাদের হাইকোর্টে হাজির হওয়ার নির্ধারিত দিন।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এর আগে অশালীন আচরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিচার চেয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো বিচারকের অভিযোগ বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠানো হয়।

হাইকোর্টে পাঠানো আবেদনে বলা হয়, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিচারক মোহাম্মদ ফারুক কর্তৃক অত্র কোর্টে প্রেরিত পত্রে জানানো হয়েছে যে, তিনি গত ২ জানুয়ারি যথাসময়ে বিচার পরিচালনার জন্য এজলাসে আরোহন করে দৈনন্দিন কার্য তালিকায় নির্ধারিত মামলাসমূহ শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। এজলাস চলাকালে বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. তানভীর ভূঞা, সম্পাদক (প্রশাসন) অ্যাডভোকেট মো. আক্কাস আলী, অ্যাড. জুবায়ের ইসলামসহ ১০/১৫ জন আইনজীবী আসেন এবং তারা অশালীন ও অসৌজন্যমূলকভাবে তাকে এজলাস থেকে নেমে যাওয়ার জন্য বলেন। বারের সভাপতি আদালতকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। 

এসময় আদালতের এজলাসে কোর্ট ইন্সপেক্টর, আদালতের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্য, আদালতের কর্মচারী ও বিচারপ্রার্থী জনসাধারণ উপস্থিত ছিলেন। 

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054230690002441