সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব : ৪৮ শিক্ষক-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন বন্ধ - দৈনিকশিক্ষা

সভাপতির পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব : ৪৮ শিক্ষক-কর্মচারীর ১১ মাসের বেতন বন্ধ

জলঢাকা প্রতিনিধি |

পরিচালনা কমিটির মেয়াদপূর্তির আগে সভাপতি পরিবর্তনের জেরে ১১ মাস ধরে নীলফামারীর জলঢাকার মীরগঞ্জহাট ডিগ্রি কলেজে বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে; এর ফলে ৪৮ শিক্ষক-কর্মচারী আর্থিক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন।

কলেজের অধ্যক্ষের পদ নিয়েও সমস্যার মধ্যে বিবাদমান দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলায় বেতন-ভাতার চেকে সই হচ্ছে না; ফলে বেতন উত্তোলন বন্ধ রয়েছে বলে জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম জানান।

তিনি বলেন, 'আদালত একবার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, ইউএনও এবং সভাপতির স্বাক্ষরে বিল দিতে। কিন্তু এখানে দুইজন সভাপতি হওয়ায় আমি কার স্বাক্ষর নেব? আদালত আমার একক স্বাক্ষরে বিল দিতে বললে আমার স্বাক্ষর করতে কোনো সমস্যা নেই।'

কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের পড়াই, রাজনীতি করতে যাইনি। কিন্তু রাজনীতির শিকার হয়ে এখন আমরা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি।' কলেজের প্রদর্শক মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, 'আগে বেতন-ভাতা নিয়মিত থাকলেও সভাপতি পরিবর্তনের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। এখন দুই সভাপতির ক্ষমতার যাঁতাকলে পিষে মরছি আমরা। বেতনের অভাবে ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে আমাদের।' 

মীরগঞ্জহাট ডিগ্রি কলেজ ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিওভুক্ত হয় ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক পর্যায়ে উন্নীত হওয়া কলেজটির মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা এখন প্রায় ৬০০। কলেজের ‘অধ্যক্ষ’ আবুজার রহমান এবং ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ প্রভাষক মিজানুর রহমান দুজনই দাবি করেছেন, তারা নিয়মিত অফিস করছেন এবং কাজকর্ম পরিচালনা করছেন। 

আর সভাপতির পদ নিয়ে মামলা চলছে অধ্যাপক খয়রাত হোসেন এবং জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদের মধ্যে। কলেজের এই অবস্থার মধ্যে গত বছরের ১৫ অগাস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোসলেম উদ্দিন এবং ৬ অক্টোবর অফিস সহকারী ছবিল উদ্দিনের মৃত্যু হয়। দুই পরিবারের সদস্যরা অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তাদের সহকর্মীরা। 

কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা জানান, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৫ মার্চ দুই বছর মেয়াদে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক খয়রাত হোসেনকে মনোনয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কমিটির মেয়াদপূর্তির ১১ মাস আগে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মার্চ অন্য সদস্য ঠিক রেখে খয়রাত হোসেনকে পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি পদে মনোনয়ন দেয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সংক্ষুদ্ধ খয়রাত হোসেন ৩০ মে হাই কোর্টে রিট করেন। আদালত নতুন সভাপতি আবুল কালাম আজাদের কাজে তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে আবুল কালাম আজাদ ১২ জুন হাই কোর্টের চেম্বার আদালতে একটি আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আট সপ্তাহের জন্য আদেশটি স্থগিত করে। এরপর খয়রাত হোসেন চেম্বার আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। সেই মামলা এখনও চলমান আছে।

অপরদিকে আবুল কালাম আজাদ সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ মে ডাকযোগে কলেজের অধ্যক্ষ আবুজার রহমানকে অপসারণের চিঠি পাঠান। তিনি প্রভাষক মিজানুর রহমানকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের কথা জানান। তখন অপসারণের চিঠি অবৈধ দাবি করে মামলা করেন অধ্যক্ষ আবুজার রহমান। 

শিক্ষক-কর্মচারীরা আরো বলেন, দায়িত্ব পেয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান গত বছরের ৭ জুলাই শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতন-ভাতা উত্তোলনের জন্য হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। আদালত মিজানুর রহমানকে গভর্নিং বডির সভাপতির স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা প্রদানের অনুমতি দেন। এরপর ২৪ জুলাই অধ্যক্ষ আবুজার রহমান ওই আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। আদালত ইউএনও এবং সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা উত্তোলনের আদেশ দেন।

কিন্তু দুই সভাপতির বৈধতার চ্যালেঞ্জে আদালতে মামলা থাকায় ইউএনও তাতে স্বাক্ষরে অপারগতা প্রকাশ করেন। সে থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা।এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'আবুজার রহমান অবৈধ নিয়োগের মাধ্যমে কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাকে বরখাস্ত করেছে। আবুজার রহমানের করা মামলার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না।'

চলমান কমিটির সভাপতিকে বাদ দিয়ে নিজে সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, 'অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করে অধ্যক্ষ আবুজার রহমানকে অপসারণ এবং সভাপতি অধ্যাপক খয়রাত হোসেনকে বাদ দেওয়ার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় খয়রাত হোসেনের পরিবর্তে আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। শিক্ষক- কর্মচারীদের বেতনের জন্য আমি হাই কোর্টে ছয়টি মামলা চালাচ্ছি।'

এ ব্যাপারে ‘অধ্যক্ষ’ আবুজার রহমান বলেন, 'কলেজের নিয়মিত গভর্নিং বডির মেয়াদ আগামী ৫ মার্চ পর্যন্ত আছে। এ অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত বছরের ৩১ মার্চ শুধুমাত্র কমিটির সভাপতি পরিবর্তন করেন। এরই মধ্যে গভর্নিং বডির সভা না করেই আবুল কালাম আজাদ ডাকযোগে একটি পত্র প্রেরণের মাধ্যমে আমাকে অপসারণ করে কলেজের প্রভাষক মিজানুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন, যা অনিয়মতান্ত্রিক।'

তিনি আরো বলেন, 'কলেজ পরিচালনা কমিটি কখনই একজন অধ্যক্ষকে অপসারণ করতে পারেন না। অধ্যক্ষকে অপসারণ করতে হলে তিনটি সভা আহ্বান এবং তিনবার কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দিতে হবে। প্রত্যেক সভার কার্যবিররণী এবং সদস্যদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। এরপর সরকারি কলেজেরে একজন অধ্যক্ষকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি হবে।'

এ ব্যাপারে মীরগঞ্জ হাট ডিগ্রি কলেজের ‘ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ’ মিজানুর রহমান বলেন, 'কলেজ পরিচালনা কমিটি আমাকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এখানে কলেজ পরিচালনা কমিটি মিটিং করেছে কি-না, নিয়মনীতি অনুসরণ করেছে কি-না সেটা আমার জানার বিষয় না। আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কলেজের যাবতীয় দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করছি। এখানে আবুজার রহমানের কোনো উপস্থিতি নেই।'

কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মো. মাহবুবার রহমান বলেন, 'জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আবুল কালাম আজাদকে সভাপতি মনোনয়ন প্রদান করার পর থেকে কলেজটির অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। এই সময়ে পরিচালনা কমিটির কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। দুই সভাপতির করা পাল্টাপাল্টি মামলার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন-ভাতা তুলতে পারছেন না। অন্যদিকে কলেজের পাঠদানও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'

যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha যেসব চাকরির পরীক্ষা স্থগিত কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার - dainik shiksha কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছে সরকার উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত - dainik shiksha উত্তরায় গুলিতে ২ শিক্ষার্থী নিহত ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে - dainik shiksha ছাত্রলীগ আক্রমণ করেনি, গণমাধ্যমে ভুল শিরোনাম হয়েছে সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - dainik shiksha সহিংসতার দায় নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের - dainik shiksha জবিতে আজীবনের জন্য ছাত্র রাজনীতি বন্ধের আশ্বাস প্রশাসনের মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক - dainik shiksha মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের কারণ জানালেন পলক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058979988098145