সমঝোতার পর বেলারুশ যাচ্ছেন ওয়াগনার প্রধান, চ্যালেঞ্জের মুখে পুতিন - দৈনিকশিক্ষা

সমঝোতার পর বেলারুশ যাচ্ছেন ওয়াগনার প্রধান, চ্যালেঞ্জের মুখে পুতিন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় বিদ্রোহ বাদ দিয়ে ওয়াগনারের সেনাদের ফিল্ড ক্যাম্পে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া ইয়েভগিনি প্রিগোজিন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন। বিনিময়ে তার বিরুদ্ধে করা ফৌজদারি মামলা তুলে নেওয়া হবে। ঘটনাবহুল দিন শেষে শনিবার সন্ধ্যায় ওয়াগনারের সঙ্গে হওয়া সমঝোতার বিস্তারিত তুলে ধরতে গিয়ে ক্রেমলিন এ কথা জানায়। এদিকে ওয়াগনারের নাটকীয় এ বিদ্রোহের ঘটনা শেষ হলেও তা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মারাত্মক ইমেজ সংকটে ফেলেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এ ঘটনা পুতিনের কর্তৃত্বকে দুর্বল করে ফেলেছে। এ বিদ্রোহ আপাতত শেষ হলেও তার নেতিবাচক প্রভাব ভবিষ্যতে পুতিনের ওপর পড়তে পারে। খবর বিবিসি ও সিএনএনের।

শনিবার সন্ধ্যায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, প্রিগোজিন বেলারুশে চলে যাবেন, তার মামলা তুলে নেওয়া হবে। ইউক্রেন যুদ্ধে বীরত্ব বিবেচনায় বিদ্রোহে অংশ নেওয়া ওয়াগনার সদস্যদের বিচারের আওতায়ও আনা হবে না। ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার এই যোদ্ধাদের অবদানকে যথেষ্ট শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আর ওয়াগনারের যেসব যোদ্ধা বিদ্রোহে অংশ নিতে রাজি হননি, এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিটও আছে, তাদের রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনার রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে তারা দক্ষিণাঞ্চলীয় রোস্তভ-অন-দনে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলার সদর দপ্তর দখলে নেয় এবং মস্কোর দিকে অগ্রসর হতে থাকে। রাজধানী থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে থাকা অবস্থায় বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় তারা বিদ্রোহের সমাপ্তি ঘোষণা করে এবং ক্যাম্পে ফিরে যায়। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সবচেয়ে আগ্রাসী ইউনিটের স্বীকৃতি পেয়েছিল এই ভাড়াটে সেনাদের দল ওয়াগনার বাহিনী। যাদের নেতৃত্বে তীব্র লড়াইয়ের পর গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেনের বাখমুত শহরের দখল পায়। বাহিনীটির প্রধান ইয়েভগিনি প্রিগোজিন পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে তার সঙ্গে রুশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের বিরোধ প্রায়ই বিশ্বগণমাধ্যমের নজর কাড়ছিল। শুক্রবার হঠাৎ করেই তিনি অভিযোগ করেন, রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তার বাহিনীর বহু সেনাকে হত্যা করেছে, তাই তিনি তাদের নিজ নিজ পদ থেকে অপসারণ করে শাস্তি দিতে চান। এ অভিযোগ জানানোর কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার ভোররাতে প্রিগোজিন জানান, তার ওয়াগনার বাহিনীর যোদ্ধারা ইউক্রেন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এবং তারা মস্কোর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যেতে প্রস্তুত। তার বাহিনীর ২৫ হাজার যোদ্ধা তার সঙ্গে আছে বলেও দাবি করেন তিনি। শনিবার দিনভর ওয়াগনার বাহিনী রোস্তভ থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দূরে মস্কোর পথে অগ্রসর হয়। তাদের থামাতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী আকাশ থেকে ওয়াগনার বাহিনীর ওপর গোলাবর্ষণ করে বলে জানিয়েছে প্রায় সবকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রার গতি কমাতে পারেনি। শনিবার এক ভাষণে পুতিন উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে বর্ণনা করেন। একে তিনি এক শতাব্দী আগে রাশিয়ার গৃহযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে ওয়াগনারের বিদ্রোহকে কঠোর হাতে দমনের প্রতিজ্ঞাও করেছিলেন। ইউক্রেনের দোনেৎস্ক প্রদেশে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছিল, মস্কো অভিমুখে যাত্রা করা ওয়াগনার দলটিতে প্রায় ৫ হাজার যোদ্ধা ছিল। যাদের নেতৃত্বে ছিলেন জ্যেষ্ঠ ওয়াগনার কমান্ডার দিমিত্রি উৎকিন।

ওয়াগনার বাহিনী যেভাবে দ্রুতগতিতে মস্কো অভিমুখে অগ্রসর হচ্ছিল, তা বেশ চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল নগরীর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিনকে। তিনি সেটিকে ‘কঠিন পরিস্থিতি’ বর্ণনা করে মস্কোকে ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান অঞ্চল’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। ঝুঁকি কমাতে সোমবার মস্কোয় ‘নন-ওয়ার্কিং ডে’ বা ‘কর্মহীন দিবস’ বলেও ঘোষণা করা হয়। বাসিন্দাদেরও ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

নগরীর সড়কগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা বাড়ানো হয় এবং ধাতব ব্যারিকেড দিয়ে বিখ্যাত রেড স্কয়ারে যাওয়ার পথও আটকে দেওয়া হয়। প্রিগোজিনের দাবি ছিল, তার যোদ্ধারা দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য কমান্ডার যারা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য দায়ী, তাদের ক্ষমতা থেকে অপসারণ করতে ‘ন্যায়ের মিছিলে’ নেমেছে। শেষ পর্যন্ত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় থামানো যায় মস্কো অভিমুখে ‘যুদ্ধযাত্রা’ শুরু করা ইয়েভগিনি প্রিগোজিনের ওয়াগনার বাহিনীকে। লুকাশেঙ্কোর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, ‘তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিনিময়ে’ ওয়াগনার যোদ্ধারা ফিরে যেতে রাজি হয়েছে।

বেলারুশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা বেল্টা জানায়, প্রিগোজিনকে ‘যুদ্ধযাত্রা’ থামাতে রাজি করানোর পর লুকাশেঙ্কো নিজেই টেলিফোনে পুতিনকে সেই খবর দিয়েছেন। পুতিনের অনুমতি নিয়েই লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন।

চ্যালেঞ্জের মুখে পুতিন: এদিকে এ বিদ্রোহের ঘটনায় প্রেসিডেন্ট পুতিন মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ২৩ বছর ধরে রাশিয়া শাসন করা পুতিন এর আগে এতটা গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হননি। এ বিদ্রোহের ঘটনা শেষ হলেও তা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে মারাত্মক ইমেজ সংকটে ফেলেছে বলে মনে করছেন তারা। তাদের মতে, এ ঘটনা পুতিনের কর্তৃত্বকে দুর্বল করে ফেলেছে। এ বিদ্রোহ আপাতত শেষ হলেও তার নেতিবাচক প্রভাব পুতিনের ওপর পড়তে পারে। বিবিসির ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স এডিটর জন সিম্পসন বলেছেন, ‘এ ঘটনা আসলেই পুতিনের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করেছে। এ ঘটনা রুশ সেনাবাহিনীর নৃশংসতারও একটা চিত্র তুলে ধরেছে।’ এ বিদ্রোহের ঘটনাকে পুতিনের পতনের শুরু বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিখাইল কাসিয়ানভ। তিনি পুতিনের অধীনে ২০০০-২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বরখাস্ত করার পর থেকে তিনি পুতিনের কড়া সমালোচকে পরিণত হন। কাসিয়ানভ বলেন, এ বিদ্রোহের জন্য পুতিন মনে হয় না প্রিগোজিনকে কখনো ক্ষমা করবেন। কারণ, তিনি পুতিনের শাসনব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নষ্ট করেছেন। অন্যদিকে, এ ঘটনা পুতিনের পতনের শুরু। এ মুহূর্তে তিনি খুব সংকটে রয়েছেন। যা সামনে আরও ঘনীভূত হতে পারে। ওয়াগনারের এ বিদ্রোহ পুতিনকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সিবিএস নিউজকে বলেন, এ ঘটনায় পুতিনের শাসনব্যবস্থা নিয়ে অনেক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তার শাসনব্যবস্থার চিড়গুলো তুলে ধরেছে।

অবশেষে বাজারে আসছে একাদশ শ্রেণির পাঁচ আবশ্যিক বই - dainik shiksha অবশেষে বাজারে আসছে একাদশ শ্রেণির পাঁচ আবশ্যিক বই অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে রেলগেট অবরোধ তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে রেলগেট অবরোধ তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038399696350098