সময় এসেছে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার - দৈনিকশিক্ষা

সময় এসেছে শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার

জুলফিকার বকুল, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

উন্নত জাতি ও দেশ গঠনে শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য এ কথা আমরা প্রায় প্রতিনিয়ত শুনে থাকি। একটি দেশের জনসমষ্টিকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলা মানেই মানব সম্পদের উন্নয়ন। মানব সম্পদ জাতির জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। যতক্ষণ তা অর্জিত না হয় ততক্ষণ এর বিরূপ প্রভাব জাতির জন্য বোঝা স্বরূপ। তাই জাতীয় উন্নয়নে মানব সম্পদ উন্নয়নের বিকল্প নেই। আর মানব সম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাই একমাত্র প্রধান ভূমিকা রাখে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ পল জে মায়ার এর মতে, The greatest natural resource of our country is its people. আধুনিক অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, অন্যান্য সম্পদের মত মানুষও জাতীয় সম্পদ। বিভিন্ন অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে যে, একটি দেশের জাতীয় আয় ( GNP) যেমন- সে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঠিক তেমনি দেশের মানুষের গুণগত মানের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত। সমাজের উন্নয়নে প্রকৃতপক্ষে অর্থ ও বস্তুসম্পদের মত ব্যবহৃত হচ্ছে মানব সম্পদ।

বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্কস মানুষকে তাই মানবীয় মূলধন হিসেবে বিবেচনা করেছেন। এই মানবিক মূলধনকে আধুনিক পরিভাষায় মানব সম্পদ বলা হয়। মানব শক্তি তখনই মানব সম্পদে রপান্তরিত হয়, যখন তাকে সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা হয়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে,পরিকল্পনা,উন্নয়ন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন সব কিছুতেই মানুষের সম্পৃক্ততা প্রতীয়মান হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো মানুষকে কীভাবে উন্নত করা যায়? মানুষ তো এমনিতেই সৃষ্টির সেরা এবং উন্নত জীব। তাহলে আর উন্নত হওয়ার প্রয়োজন আছে কি?

অবশ্যই আছে। কারণ, যে জাতি শিক্ষায় যতটা এগিয়েছে সে জাতি ততটাই বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। পরিবার থেকে শুরু করে জাতি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আগে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হওয়া, যা মানুষ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে গ্রহণ করে বাস্তবিক জীবনে প্রয়োগ করে।

তাই অবকাঠামোগত ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রয়োজন থাকলেও মানুষ তৈরির বিষয়টাকে কিন্তু অবহেলা কিংবা ক্ষুদ্র দৃষ্টিতে দেখার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। কারণ, মানুষ উন্নয়ন করে আবার মানুষই তা ভোগ করে। তাই উন্নয়ন করা ও তা ভোগ করার মেধা-দক্ষতাও অর্জন করতে  হয়।

এক ভদ্রলোকের প্রচুর জমিজমা ও নগদ অর্থ ছিলো। কিন্তু সন্তানদের সুশিক্ষা নিয়ে সে কখনোই ভাবতো না। সন্তানরাও এই অর্থ সম্পদকে পুঁজি করে গা ভাসিয়ে চলতো। অবশেষে লোকটির মৃত্যুর কিছুদিন পর দেখা গেলো তার সন্তানরা সব সম্পত্তি নষ্ট করে অসচ্ছল হয়ে গেলো। এক্ষেত্রে লোকটির সন্তানদের মধ্যে অভাব ছিলো শুধু প্রকৃত শিক্ষার।

যেখানে আজকের শিশু আগামী দিনে দেশ, জাতি তথা বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে সেখানে প্রাথমিক আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকেই তাকে দক্ষ মানব সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মহলের সর্বোচ্চ অনুকূল দৃষ্টি ও আন্তরিকতা এই মহৎ কাজকে যথাযথভাবে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের দেশে শিক্ষকতার মত মহৎ পেশায় মেধাবীরা আসতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তার কারণ, সম্মানীভাতা তো নয়ই, বেতন যা দেয়া হয় তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কিন্তু অন্যান্য সেক্টরে যার পরিমাণ বেশি।

ফলে সামাজিক মর্যাদার ক্ষেত্রেও বিত্তবান, অর্থশালীদের চেয়ে শিক্ষকদের মূল্যায়ন কম করা হয়। একজন শিক্ষক শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দান করেন না, সমাজেরও একজন শিক্ষক বটে। কিন্তু যখন মানুষকে অর্থের মানদণ্ডে বিচার করা হয় তখন শিক্ষক সমাজ অসহায় হয়ে যায়। তার নীতিকথাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে মূল্যহীন হয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সমাজ কেবল বিত্তশালীদের দ্বারা পরিচালিত হবে। ফলে শিক্ষিত ব্যক্তিরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে অর্পিত দ্বায়িত্ব যথাযথ পালন থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবে। যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা যেমন ব্যাহত হবে, তেমনি মাধ্যমিক শিক্ষার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ অর্থনীতি, অবকাঠামোতে অদম্য এগিয়ে চলেছে, যা বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত। সময় এসেছে প্রাথমিক-মাধ্যমিক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার। শিক্ষকদের যথাযথ মূল্যায়ন ও সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করে শিক্ষা উন্নয়নের দায়বদ্ধতায় ফেলতে হবে। হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যই আসবে। ভাল নতুন কিছু পরিবর্তনে বাঁধা থাকলেও তা কখনও থেমে থাকেনি। ইতিহাস এমনটিই সাক্ষ্য দেয়। প্রয়োজন শুধু সৎ, সাহসী, দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন মানসিকতা। শিক্ষক কেউ কখনও হয়ে আসেনা, শিক্ষক হতে হয় বা তৈরি করতে হয়। শিক্ষার মানোন্নয়নে দক্ষ, সৃজনশীল মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষক তৈরি হোক এমনটি প্রত্যাশা করছি।

লেখক: শিক্ষক, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল, গাজীপুর

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দশ দিনে আবেদন প্রায় ৬ লাখ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৮ সদস্যের কমিটি ঘোষণা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান - dainik shiksha ধারণা বাড়াতেই পাঠ্যক্রমে তথ্য অধিকার আইন বিষয় যুক্ত: এনসিটিবি চেয়ারম্যান কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: ২১তম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ - dainik shiksha সুইডেনে স্কলারশিপে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043168067932129