সরকারি চাকরিতে প্রবেশ: বয়স নিয়ে কী হচ্ছে? - দৈনিকশিক্ষা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশ: বয়স নিয়ে কী হচ্ছে?

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: সরকারি চাকরিতে প্রবেশসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে প্রায় এক যুগ ধরে আন্দোলন করছেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী। নানাভাবে দাবি জানানোর পাশাপাশি আন্দোলনে হামলার শিকারও হয়েছেন তারা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, শিক্ষার্থীদের পক্ষে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি এ সুপারিশ করেছেন। সিদ্ধান্ত কী হবে, সেটি নেবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত উঠে এসেছে। সিংহভাগ বলছেন চাকরির প্রবেশসীমা বৃদ্ধি করা উচিত। আবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বয়সের সীমা ৩৫ করা হলে ব্যাপকহারে শিক্ষিত বেকার তৈরি হবে।

বাংলাদেশে সাধারণ চাকরিপ্রত্যাশীদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা ৩০। তবে মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজাতি কোটার চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য বয়সের সীমা ৩২। এ ছাড়াও বিসিএসে সরকারি নার্সিংয়ে চাকরির ক্ষেত্রে ৩৫।

আর এ ছাড়াও বেসরকারি স্কুল-কলেজেও ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যায়। ‘চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ চাই’ আন্দোলনের একজন নেতা সজীব মাহমুদ বলেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় লেখাপড়া শেষ করতে করতেই ৩০-এর কাছাকাছি বয়স হয়ে যায়। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরও বেশি ভোগান্তির মুখে পড়ে। এতে করে সরকারি চাকরি পাওয়াটা দুষ্কর হয়ে যায়। 

ইয়াসিন মোল্লা নামে আরেক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাটাই উঠিয়ে দেয়া উচিত। তাহলে দেশে শিক্ষিত বেকার তৈরি হবে না। সরকারি চাকরিপ্রত্যাশীরা কাজের পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে পারবে। এটা যেহেতু অনেক বড় সিদ্ধান্ত। নানা জটিলতার সম্ভাবনা আছে। তবে এই মুহূর্তে পাঁচ বছর বাড়িয়ে ৩৫ করা হলে আমাদের মধ্য থেকে হতাশা কমে আসবে। 

বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মধ্যে দেখা যায় ভারতে বিভিন্ন রাজ্যভেদে ও চাকরির ধরন অনুযায়ী আবেদনের বয়সসীমা ৩২-৪২ বছর পর্যন্ত। নেপালে বিভিন্ন চাকরির ক্ষেত্রে পুরুষদের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এই সীমা ৪০ বছর। আবার স্বাস্থ্য পরিষেবায় সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। অফিসার পদগুলোতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারেন। শ্রীলঙ্কায় ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারেন। তবে কিছু সরকারি চাকরিতে এই বয়সসীমা কমিয়ে আনা হয়।

শুধুমাত্র পাকিস্তানে এই বয়সের সীমা ৩০। তবে দেশটির বেলুচিস্তান রাজ্যে এই বয়সসীমা ৪৩ বছর। এ ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারেন। আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায়।

নিয়মিত চলতে থাকা এই আন্দোলন নিয়ে সম্প্রতি আলোচনায় আসে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশের কারণে। এনিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন কথা বলেন সংসদে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়। আপাতত বয়সসীমা বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনা করা হবে। আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করে ভবিষ্যতে বিষয়টি দেখা হবে।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে সরকার অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য সেটা ৩২ বছর করা হয়েছে। চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। সরকারি চাকরিতে এখন বেশ আকর্ষণ তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত মেধাবীরা ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিয়েছেন। সরকারি চাকরির পরিবেশ থেকে শুরু করে বেতন-কাঠামো নতুন প্রজন্মের কাছে বড় আকর্ষণ তৈরি করেছে। সরকারের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা একটি সম্মানের বিষয়। আবার চাকরির নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বেতন-কাঠামো এবং কাজের পরিবেশও সুন্দর হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সারফেস স্টাডি করবে। জানা যায়, বাজেটের পর বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী সুপারিশ করার পর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে নানা চ্যালেঞ্জ আছে। মতামত গ্রহণের বিষয় আছে। এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিষয়। তবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা এটি নিয়ে একটা পর্যালোচনা করবো। তবে এই পর্যালোচনার কাজ বাজেটের আগে হচ্ছে না।

বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থায় বিসিএস পরীক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। লাইব্রেরিগুলোতে বিসিএস প্রস্তুতি গ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা দিনরাত এক করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ভোর থেকে সিরিয়াল দিয়ে প্রবেশ করছেন লাইব্রেরিগুলোতে। আবার সম্প্রতি হওয়া বিসিএস পরীক্ষার পর দেখা যায় ফাঁকা পরে আছে লাইব্রেরিগুলো। শিক্ষার্থী দিনরাত এক করে, কারিগরি কোনো কাজে যুক্ত না হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিসিএস পরীক্ষার। সরকারি চাকরি বাগিয়ে নিতে দেশে তৈরি হচ্ছে শিক্ষিত বেকার।

দেশে বর্তমানে বেকার রয়েছেন ২৫ লাখ ৯০ হাজার। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ শেষে এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিবিএস’র হিসাব বলছে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম প্রান্তিকেও দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। বর্তমান বেকারের হার ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা গত বছরের গড় বেকার হারের তুলনায় কিছুটা বেশি। গত বছর গড় বেকারের হার ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ ছিল।

দেশে পুরুষ বেকারের সংখ্যা বেড়েছে, আর নারী বেকারের সংখ্যা কমেছে। বিবিএস’র হিসাব অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে পুরুষ বেকারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪০ হাজার ছিল। এর আগে গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে (২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-জানুয়ারি) পুরুষ বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ১০ হাজার। বিশ্বব্যাংকের ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ৫.৪ শতাংশ। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ছিল ৪.৪ শতাংশ। যেখানে পাকিস্তানে ৪.৩ শতাংশ, নেপালে ৪.৭ শতাংশ, ভুটানে ৩.৬ শতাংশ ও মিয়ানমারে ১.১ শতাংশ। বাংলাদেশে বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ শেষ ১০ বছরে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে ব্যাপকভাবে। বর্তমানে গ্রাজুয়েট বের হচ্ছে বছরে ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ। পূর্বে যেটা ছিল দুই থেকে আড়াই লাখ।

শিক্ষিত বেকারদের বড় একটি অংশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)-এর জরিপ বলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাস করা শিক্ষার্থীর ৬৬ শতাংশই বেকার থাকছেন। এ ছাড়াও তারা বলছেন, এর অধিকাংশ শিক্ষার্থী জানেন না তারা অধ্যয়ন শেষে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে (বেসরকারি) চাকরির জন্য আবেদন করবেন। আবার এই বেকারদের ৬২ শতাংশই ব্যবসায় প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থী।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, বর্তমানে যত সংখ্যক শিক্ষিত তরুণ চাকরির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করছে, বয়সসীমা বাড়ানো হলে আরও বেশি সংখ্যক তরুণ এ অপেক্ষায় সময় পার করবে।

সূত্র: মানবজমিন

শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029070377349854