দৈনিক শিক্ষাডটকম, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে জালিয়াতি করে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সন্তান ভর্তির প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। অবসরে যাওয়ার ঠিক আগে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হকের বিরুদ্ধে ওঠা এ জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম। ওই প্রতিবেদন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছে আঞ্চলিক উপপরিচালকের কার্যালয়।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) মো. শামসুল আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে ভর্তিতে জালিয়াতি পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ছয়জন এবং নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থী ভর্তিতে জালিয়াতির অভিযোগ উঠে। ওই শিক্ষার্থীদের চারজন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত চারজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সন্তান। এ ঘটনা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অভিযোগ তুলেছিলেন। গত রোববার বিষয়টি তদন্ত করেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
আরো পড়ুন : জালিয়াতি করে সরকারি স্কুলে শিক্ষা ক্যাডারের সন্তানের ভর্তি নিয়ে তোলপাড়
ডিইও মো. শামসুল আলম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের নির্দেশে ভর্তি জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করেছি। তদন্তে বিধিবহির্ভূতভাবে সাতজন শিক্ষার্থী ভর্তির সত্যতা মিলেছে। প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তে লটারির তালিকাবহির্ভূত ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়েছে বলে ভর্তি কমিটির দেয়া প্রতিবেদন ও নথিতে প্রমাণ মিলেছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান নীতিমালা ও নির্দেশনা মোতাবেক লটারির ফলের বাইরে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। শুধু সরকারি কর্মচারীদের বদলিজনিত কারণে তাদের সন্তানদের বছরের অন্য সময় ভর্তি করার সুযোগ রয়েছে। তবে সেটাও প্রধান শিক্ষক একক সিদ্ধান্তে পারেন না। যেভাবে ওই সাত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি আরো বলেন, প্রধান শিক্ষক বলেছেন তিনি ভুলবশত ৭ শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। বাঁচার জন্য এভাবে বলাটা স্বাভাবিক।’
জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ভর্তিগুলো বাতিল করা হয়েছে। ওগুলো বাতিল করে আমরা অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করেছি।
ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্যসহ কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এভাবে তালিকাবহির্ভূত শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ভর্তি কমিটির সদস্যরা আপত্তি জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক নির্দেশনায় ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে বাধ্য করেন। তিনি শিক্ষকদের বারণ আমলে নেননি। বরং জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি করান।
তদন্তে ভর্তি জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. শফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এখন মহাপরিচালক পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে উপপরিচালক বলেন, এভাবে শিক্ষার্থী ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। কোটাভুক্ত হলেও তা লটারির ফলে আসতে হবে।
প্রসঙ্গত, কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে প্রভাতি ও দিবা শিফটে ‘ক’ ও ‘খ’ শাখা মিলে মোট ২২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় লটারির মাধ্যমে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। গত ৩ ডিসেম্বর শিক্ষার্থী ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় । ভর্তি কার্যক্রমের প্রথম দিনেই প্রধান শিক্ষক তাড়াহুড়ো করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ জন ও নবম শ্রেণিতে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুপারিশ করেন। কিন্তু এদের কেউই লটারিতে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এমনকি এক শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদনও করেনি। ওই ৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণির চার শিক্ষার্থী কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের চার শিক্ষকের সন্তান।
ভর্তি কমিটির সদস্য শিক্ষকরা এতে আপত্তি জানালে প্রধান শিক্ষক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন জানিয়ে তাদেরকে ভর্তি করাতে বলেন। পরে ওই ৭ শিক্ষার্থীর ৬ জনকে প্রভাতি শিফটে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ‘ক’ শাখায় ও অপর একজনকে নবম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।