মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবিতে আগামী ১৪ মার্চ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)। এ দাবি আদায়ে আগামী ১৩ মার্চ রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সব জেলা সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করবে সংগঠনটি। আর আগামী ২০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন বিটিএ নেতারা।
বুধবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করে বিটিএ। সংবাদ সম্মেলনে, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বৈষম্য দূর করতে মাধ্যমিক শিক্ষা সরকারিকরণের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতারা। একইসঙ্গে আগামী বাজেটে শিক্ষা খাতে জিডিপির ৬ শতাংশ বা জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ কাওছার আহমেদের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সভাপতি মো. বজলুর রহমান মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা মাত্র ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। একই কারিকুলামে একই সিলেবাসে পাঠদান করিয়েও সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাওয়ার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া বিগত কয়েক বছর যাবত অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্ট খাতে শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হলেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা স্মার্ট করতে প্রয়োজন স্মার্ট শিক্ষক। তাই স্মার্ট শিক্ষক পেতে শিক্ষায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিসহ মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, ইউনেক্সো ও আইএলওর শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদের সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বাজেটের ২০ শতাংশ বা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ বা জিডিপির ২ শতাংশের কম বরাদ্দ রাখায় শিক্ষক-কর্মচারীরা মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ। তাই ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ বা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ রাখার দাবি জানাচ্ছি।
পরে সরকারিকরণের দাবি আদায়ে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হলো, ১৩ মার্চ সারা দেশে জেলা সদরে এবং কেন্দ্রীয়ভাবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষক কর্মচারীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল এবং জেলা প্রশাসক বা বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মারকলিপি দেয়া। ১৪ মার্চ সব বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালনসহ ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং জাতীয়করণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে লিফলেট বিতরণ। ২০ মার্চ জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের মহাসমাবেশ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি আলী আসগর হাওলাদার, বেগম নুরুন্নাহার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু জামিল মো. সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনসহ অনেকে।