নওগাঁর বদলগাছী সরকারিকৃত মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নিয়ম না মেনে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ জনের শ্রেণিতে ১৫১ জন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ আছে আরও ১৫-২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তি বাবদ টাকা নেয়া হয়েছে। এদিকে অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। তিনি দাবি করেছেন, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের আত্তীকরণের কাজ শেষ না হওয়ার সুযোগে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা শিক্ষা অফিস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক নীতিমালাকে উপেক্ষা করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছেন। একই শ্রেণিতে অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর ফলে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটবে। ফলে তাদের সন্তানদের ভালো শিক্ষালাভের আশা পূরণ হবে না।
তারা জানান, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২০ আসনে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য গত বছরের ১৬ নভেম্বর অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিলো ৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর লটারির ১৫১ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। গত ৮ জানুয়ারি মেধা অনুযায়ী রোল নম্বর নির্ধারণের জন্য পঞ্চম শ্রেণির সিলেবাস অনুযায়ী একটি পরীক্ষা হয়। এরপর ১২০ জনকে মেধা তালিকা অনুসারে প্রথমে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে লটারিতে ওঠা অপেক্ষামান তালিকা থেকে আরও ৩১ জনসহ মোট ১৫১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। এছাড়া লটারির বাইরে থাকা আরও ১৫-২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ভর্তি করানো হবে বলে টাকা নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের দুইটি শাখা। তবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষক আছেন মাত্র একজন। ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করানোর সময় দুই বিভাগের সব শিক্ষার্থীকে এক কক্ষে স্থান দেয়া সম্ভব না। সরকারিকরণের জন্য ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সারাদেশে ৩২৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ধাপে নওগাঁর দুইটি বিদ্যালয় তালিকাভুক্ত হয়। এরপর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মে সরকারি ঘোষণা করা হয়। তবে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না।
ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র ও উপজেলার গাবনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জমসত আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, এক শ্রেণিতে দেড়শ জনের বেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হলে কিভাবে ভালো পড়াশোনা হবে। এতোগুলো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো আসলে ঠিক হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, নতুন কারিকুলামে বিষয়ভিত্তিক একজন করে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন। এতো বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়ার ফলে দুটি শাখা এক ক্লাসে করেও ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে না। মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটবে।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারি হলেও এখনো শিক্ষকদের আত্তীকরণ হয়নি। এ কারণে অতিরিক্ত শিক্ষক ভর্তি করানো হয়েছে। শিক্ষক আত্তীকরণ হয়ে গেলে তখন আর ১২০ আসনের বেশি ভর্তি করানো হবে না। উপজেলায় ভালো আর কোনো স্কুল নেই। এ কারণে কিছু বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হয়েছে। তবে টাকার বিনিময়ে ভর্তি করানোর অভিযোগটি সঠিক নয়।
জানতে চাইলে বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সরকারি নীতিমালার বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়েছে তাই সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হবে। আমি আগামীকাল প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজখবর নেবো।
বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ১২০ আসনের বিপরীতে অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর নির্দেশনা নেই। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সন্তানরা যদি দু-এক জন আসেন তাদের ভর্তি করানো যাবে। অতিরিক্ত ভর্তি করানো সম্ভব না।