সরকারিভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন, অতঃপর - দৈনিকশিক্ষা

সরকারিভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন, অতঃপর

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স |

এবার পাঁচ অক্টোবর সরকারিভাবে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন করা হলো। দিবসটির এবারের  প্রতিপাদ্য ছিলো  ‘আমরা যে শিক্ষা গ্রহণ করতে চাই তার জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষক : শিক্ষকের স্বল্পতা কাটানো বৈশ্বিক দাবি’। প্রতিপাদ্য বিষয়ের প্রথম অংশের আলোকে বলা যায় মানসম্মত শিক্ষা ও টেকসই শিখন-শেখনোতে উপযুক্ত শিক্ষকের বিকল্প নেই এবং এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। 

প্রশ্ন হলো এ উপযুক্ত শিক্ষক কারা? শ্রেণিকক্ষে অনেক বেশি নৈপুণ্য প্রদর্শনকারী শিক্ষক-ই কী উপযুক্ত শিক্ষক? কিংবা পাঠদানে অপার পারদর্শী শিক্ষক-ই কী উপযুক্ত শিক্ষক? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজত গিয়ে প্রতিপাদ্যের গভীর মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারায় আমার মনে হলো উপযুক্ত শিক্ষক বলতে পঠন-পাঠনে কিংবা শিখন-শেখনোতে উচ্চতর দক্ষতা সম্পন্ন এমন শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে, যে শিক্ষক হবে একজন শিক্ষা গবেষক, সমাজ সংস্কারক,মানবিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ নীতি-নৈতিকতায় উত্তম চারিত্রিক গুণাবলীর একজন অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। এমন শিক্ষকই হবেন একজন উপযুক্ত শিক্ষক।

কালের বিবর্তনে উপযুক্ত শিক্ষক খুঁজে বের করা দুরূহ হলেও কালেভদ্রে এমন শিক্ষক যে পাওয়া যায় না, তা আমি বলবোনা। এটাও সত্য উপযুক্ত শিক্ষক বিনির্মাণে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা দায় এড়াতে পারেনা। সমাজ সংস্কার ও উন্নত জাতি গঠনে  শিক্ষকদের অসামান্য অবদান স্মরণ করতেই ইউনেস্কোর সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে না হলেও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন ও কিছু প্রতিষ্ঠান এ দিনে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন করতেন। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর দিবসটি প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের ঘোষণা এসেছে। 

সরকারিভাবে শিক্ষক দিবস উদযাপনের ঘোষণায় দেশের অগণিত শিক্ষক তাদের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে বিপুল আশায় বুক বাঁধেছিলেন। এ কথা প্রায় সবারই জানা,দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের মোট শিক্ষার ৯৭ ভাগ বেসরকারি খাতে পরিচালিত। তাই শিক্ষার সিংহভাগ সফলতার দাবিদার বেসরকারি খাতই। বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে মাসব্যাপী আন্দোলন করেন। একটি শিক্ষক সংগঠন ছাড়া যুগ যুগ ধরে শিক্ষক আন্দোলনের পুরোধা সংগঠনগুলো জাতীয়করণের এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছিলেন। একপর্যায়ে শিক্ষা উপমন্ত্রীসহ সরকার ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের মধ্যস্থতায় আন্দোলন স্থগিত করা হয়। সরকার দলীদের প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস থেকে এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সরকারের তরফ থেকে শিক্ষক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটা আশাব্যঞ্জক ঘোষণা আসবে বলেই প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিলো নানা কারণে। 

তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপিত বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ভাষণে, উপযুক্ত শিক্ষক গঠনের কোনো দিক নির্দেশনা বা শিক্ষা ও শিক্ষকের জীবন মানোন্নয়নে বা শিক্ষা জাতীয়করণ বিষয়ে কোনো ঘোষণা বা ইঙ্গিত আসেনি। তা না আসলেও শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হোক এটা সচেতন সব শিক্ষকই চান। কিন্তু কোচিং কেনো করে এহেন বক্তব্য দেয়া কর্তারা কি আদৌ জানেন? তাঁরা কি জানেন বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে শিক্ষকরা কতো বেতন পান? রঙচটা এ শহরে শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা, উৎসব ভাতা ২০ বছর আগে নির্ধারিত ২৫ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি বেতন বৈষম্য কমাতে, শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত করতেই হয়েছে শিক্ষক আন্দোলন। শিক্ষকের কাজ শ্রেণিকক্ষে থাকা, রাজপথে নয়। শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির প্রতি বিশ্ব শিক্ষক দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে নূন্যতম সম্মান না দেখিয়ে উল্টো কোচিং বাণিজ্যের কালিমা দেয়া হলো শিক্ষকদের। 

শিক্ষা সংশ্লিষ্টজন, শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত করুন, জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর আলোকে পৃথক শিক্ষক বেতন কমিশন গঠন পূর্বক শিক্ষকদের জন্য এমন একটা বেতন কাঠামো গঠন করুন, যাতে কোনো শিক্ষকের আর লজ্জার কোচিং না করতে হয়। ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুযায়ী শিক্ষকের মর্যাদা নিশ্চিত করুন, তবেই পাবেন উপযুক্ত শিক্ষক। অবিলম্বে শিক্ষা জাতীয়করণ ঘোষণা দিন, শিক্ষায় আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
 
এবারের প্রতিপাদ্যের দ্বিতীয় অংশে শিক্ষক স্বল্পতা কাটিয়ে ওঠার দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বলতে চাই, শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করা হলে মেধাবীরা এ পেশায় আকৃষ্ট হবে। যতবেশি মেধাবী ও গুণীরা শিক্ষকতা পেশায় আসবেন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে ততো বেশি ভূমিকা রাখবেন এবং শিক্ষকস্বল্পতা দূর হবে।

লেখক : মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ প্রিন্স, এমপিওভুক্ত শিক্ষক। 

[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003371000289917