দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে বয়ে গেছে তাপদাহ। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা আরো পরিণত হয়েছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি সামান্য উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে শুক্রবার নিম্নচাপে পরিণত হয়, যার অভিমুখ ছিল বাংলাদেশের দিকে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর এখন উত্তাল।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরো শক্তি অর্জন করে শুক্রবার মধ্যরাতে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। রোববার ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। আরো এ সময় উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মাছ ধরার যানগুলোকে গভীর সমুদ্রে না যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে ‘রেমাল’। নামটি ওমানের দেওয়া। এর অর্থ ‘বালু’।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, রোববার সন্ধ্যায় এ ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। রেমাল প্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। খুলনা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে এটি আঘাত হানতে পারে। অপেক্ষাকৃত বেশি এলাকা ধরে ঘূর্ণিঝড়টির বিস্তৃতি থাকতে পারে। সমুদ্র উপকূলের সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আরো বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হয়, তখন সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন’।
ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগের বা সামনের অংশের প্রভাব রোববার সকাল থেকেই বোঝা যাবে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, শনিবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। রোববার থেকে বৃষ্টি আরো বাড়বে। ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপকূলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কতটুকু এ প্রশ্নের জবাবে আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার সম্ভাব্য সময় রোববার সন্ধ্যা ৬টার দিকে। এ সময় ভাটা চলবে। তাই এ সময় আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা কম। তবে রাত ১২টা বা এর পরে আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের উপপরিচালক মো. শামীম আহসান বলেন, গাণিতিক মডেলগুলো বলছে, এটি সৃষ্টি হলে তা বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই আসতে পারে। এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হতে পারে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আরেক আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রেমাল আঘাত হানলে, তা প্রবল থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। তবে ‘সুপারসাইক্লোন’ হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। এটি রোববার রাতে আঘাত হানতে পারে। তবে এর অগ্রভাগ দুপুরের দিকেই আসতে পারে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এ কে সাইফুল ইসলাম মনে করেন, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে উপকূলের অনেক বড় এলাকাজুড়ে। এতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ারও আশঙ্কা করছেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের উপকূল রেমালের সম্ভাব্য আঘাতস্থল। তবে দেশের সর্বত্রই এর প্রভাব দেখা যেতে পারে। সেই প্রভাব বোঝা যাবে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ৫ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেলের বরাত দিয়ে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি রোববার সকাল ৬টার পর থেকে সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের বাম দিকের সামান্য অংশ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুর জেলা এবং বেশির ভাগ অংশ বাংলাদেশের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাতের আশঙ্কা বেশি। এর প্রভাবে বরিশাল, খুলনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ৩০০ থেকে ৬০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতহতে পারে।