সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময়ের মধ্যে অধিভুক্তি বাতিল না হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। তবে ঢাবি প্রশাসন বলছে কলেজগুলোর অধিভুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন আছে।
শুক্রবার শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে আলটিমেটাম দেন। একইদিন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নিজেদের অবস্থান জানায়।
বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সাত কলেজ নিয়ে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, সাতটি সরকারি কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পুরোপুরি আলাদা একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। তবে এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকবে।
আরো পড়ুন: সাত কলেজের বিষয়ে যা জানালো ঢাবি কর্তৃপক্ষ
এর বিরোধিতা করে ঢাবির শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করে অধিভুক্তি বাতিলে আলটিমেটাম দিয়েছেন।
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এর আগেও অনেক আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে প্রতারিত হয়েছি। কিন্তু এবার আর আমরা আশ্বাসের মুলা ঝোলানো বিশ্বাস করছি না। আমরা ঢাবির প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টার সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি অধিভুক্তি বাতিল না করা হয়, তাহলে ৭৩তম ঘণ্টায় গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেব।’
তিনি বলেন, ‘এ ৭২ ঘণ্টায় আমরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে যাব। গণসংযোগ করে সবাইকে সচেতন করে তুলব। এরপরও আমাদের দাবি না মানা হলে প্রয়োজনে ২০১৯ সালের মতো সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেব।’
ঢাবির জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত হয়েছে। এ প্রস্তাবের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের ইতিপূর্বে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। বিষয়টি জানার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টাসহ সরকারের বিভিন্ন উচ্চমহলে আলাপ করেছে। সরকারও বিষয়টির জনগুরুত্ব বিবেচনা করে আন্তরিকতার সঙ্গে সাড়া দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীসহ প্রধান অংশীজনদের নিয়ে মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে (সম্ভাব্য তারিখ আগামী রবিবার) এ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক আয়োজনের ব্যাপারে সরকার সম্মত হয়েছে।’
সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্টি হওয়া সংকট সমাধানে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিলেন এবং ঢাবির শিক্ষার্থীরা সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবি করে আসছিলেন। এ ক্ষেত্রে ঢাবি কর্তৃপক্ষ মনে করে, সরকারি সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের নিয়ে এ বিষয়ে আরও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ ব্যাপারে একটি টেকসই ও শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘আজ (বৃহস্পতিবার) যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা এবং সাত কলেজের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটা জায়গা ঠিক করা হবে। যেখানে সাত কলেজের প্রশাসনিক কাজ করা হবে। তাদের আলাদা রেজিস্ট্রার থাকবে। পুরো বিষয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যান্টস কমিশনের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’