বিতর্কিত-স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদকে দেশে আনার চেষ্টা করা হলে এবং কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর ইজতেমা কেন্দ্রিক সাদপন্থিদের কোনোরকম সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করা হলে ২৪ ঘণ্টার নোটিশে রাজধানী ঢাকা অচল করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় আলেম-ওলামারা।
তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টামণ্ডলী এবং সমন্বয়কদের আশপাশে সাদপন্থিদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই সন্ত্রাসী সাদপন্থিদের নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এমন হুঁশিয়ারি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের মিডিয়া সেলের প্রধান মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমী। তিনি বলেন, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পরিষ্কার বলে দিতে চাই, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী মতলববাজদের কোনো ষড়যন্ত্রমূলক পরামর্শে কান দেওয়া যাবে না। কাকরাইল মসজিদ এবং টঙ্গীর ইজতেমার মাঠ সবসময়ের জন্যই ওলামা বিদ্বেষী সাদপন্থি মুক্ত রাখতে হবে।
ফজলুল করিম কাসেমী বলেন, প্রায় ৬০ জনের অধিক আলেম-ওলামাসহ দুই হাজারের অধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে নব স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত নতুন বাংলাদেশে আমাদের আস্থার প্রতীক অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও সমন্বয়কদের অক্লান্ত পরিশ্রমে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে চলেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আমরাও এই প্রয়াসের গর্বিত শরিক।
তিনি বলেন, দেশ এখন একটি সংকটকাল অতিক্রম করছে, দেশবাসী আলোর মুখ দেখার প্রহর গুনছে। সরকার দেশবাসীকে একটি শান্তির দেশ উপহার দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সন্ত্রাসী সাদপন্থিদের নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া যাবে না। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টার নোটিশে ঢাকা অচল হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
সাদপন্থিদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের মিডিয়া সেলের প্রধান বলেন, আমরা কোনো সংঘাত চাই না। আমরা চাই অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করুক। দয়া করে আপনারাও (সাদের অনুসারী) ফিরে আসুন। আপনাদের জন্য সমাধানের একটি পথ খোলা আছে। আপনারা তওবা করুন, আপনাদের আমিরকে তওবা করান। দ্বীনের সহিহ পথে ফিরে আসুন, সংঘাত নয় শান্তির পথে চলতে শিখুন।
আরেক আলেম মাওলানা নাজমুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালে টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে তাবলিগের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী দাওয়াত ও তাবলিগের সাথী এবং মাদ্রাসার নিরীহ শিক্ষক ও ছাত্রদের হত্যার উদ্দেশ্যে সাদপন্থিরা নৃশংস হামলা চালিয়েছিল। সেখানে দুই জন তাবলিগের সাথী মৃত্যুবরণ করেছিল। শুধু তাই নয়, শত শত ছাত্র-শিক্ষক, সাথী মাথা-হাত-পায়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ও ঘরে কাতরাচ্ছে। অন্যদিকে সাদপন্থি হামলাকারীরা নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য আক্রান্তদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। তারাই আবার নিজেদের স্বরূপ উন্মোচনের ভয়ে গত ৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে আগের সব অপকর্মের দায়ভার ওলামাপন্থি সাথীদের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, যারা ধর্ম ও কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যাকারী, যারা নবী-রাসুল (সা.) ও সাহাবা বিদ্বেষী, তাদের দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে কোনো অংশ থাকার কোনো সুযোগ নেই। এক কথায় আমরা বলতে চাই, ওলামা বিদ্বেষী, টঙ্গীতে মানুষ হত্যাকারী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সাদপন্থিদের কাকরাইল ও টঙ্গীতে কোনো অধিকার নেই, থাকার কোনো প্রশ্নই নেই। তবে তারা যদি তওবা করে ফিরে আসে, তাদের বিষয়ে আমাদের ওলামায়ে কেরামরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
এসময় বক্তারা আরও বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যারা দুর্নীতিবাজদের তৈলমর্দন করে মদদ দিয়েছেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দলীয় কর্মী হিসেবে মাঠে-ময়দানে কাজ করেছেন। আজ প্রায় ৬০ অধিক আলেম-ওলামাসহ দুই হাজারের অধিক শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত নতুন বাংলাদেশে আমাদের আস্থার প্রতীক অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টামণ্ডলী এবং সমন্বয়কদের আশপাশে ওই সব সাদপন্থিদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়।