সাফল্য কমার কারণ বিশ্লেষণ - দৈনিকশিক্ষা

সাফল্য কমার কারণ বিশ্লেষণ

মাছুম বিল্লাহ |

গতকাল রোববার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হলো। পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই এবার কমেছে। এর পেছনে কি কারন থাকতে পারে। প্রথমত, মানসম্মত শিক্ষার কথা আমরা প্রায়ই বলে থাকি।  শিক্ষার্থীরা প্রচুর পাস করে যাচ্ছেন, জিপিএ-৫ পাওয়ার হারও বেড়ে যাচ্ছে-- এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা, সমালোচনা, লেখালেখি হচ্ছে। তাই শিক্ষকরা বিশেষ করে যারা বোর্ড পরীক্ষক তারা নিজেদের হয়তো কিছুটা সংযত করার চেষ্টা করেছেন এবং বোর্ড কর্তৃপক্ষও হয়তো কিছুট নির্দেশনা সেভাবেই দিয়েছিলেন।

দ্বিতীয় আর একটি কারণ হতে পারে, দেশের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্বকীয়তা বজায় রাখার জন্য প্রায় একইমানের শিক্ষার্থী ভর্তি করতো। গত কয়েকবছর যাবত সে বিষয়টি ঘটছে না। নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্ব দিয়ে সেখানে ভর্তি হওয়ার একটি নির্দেশনা আছে এবং প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু নিজেদের ইচ্ছায় শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারেনি, এই নিয়ম মেনে মিক্সডগ্রুপ অব স্টুডেন্স ভর্তি করতে হয়েছে। ইউনিফর্মলি যারা ভর্তি হয় তাদের পড়াশুনা, পরীক্ষার প্রস্তুতি একটু ভিন্ন থাকে, যেখানে পিছিয়ে পড়া বা  একেবারে সাধারণ শিক্ষার্থী অগ্রগামীদের মতো প্রস্তুতি নিতে পারেন না। মেশানো শির্ক্ষাথীদের বোর্ড পরীক্ষায় পাঠানোর কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে কিছুটা প্রভাব হয়তো পড়েছে যার প্রভাব গোটা ফলে প্রতিবিম্বিত হয়েছে। তাছাড়া, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড পাসের হারে প্রতিবছর বেশ এগিয়ে থাকে যার যৌক্তিক কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়টি  নিয়েও প্রচুর লেখালেখি হয়েছে, আলোচনা ও সমালোচনা হয়েছে। এসব কারণে তারাও হয়তো অনেক সংযত আচরণ করেছেন পরীক্ষার খাতা দেখায় যার প্রভাব ফলের ওপর পড়েছে। এবার মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭৫ যা গত বছর ছিল ৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বিজ্ঞান বিষয়ে যদি বেশি অকৃতকার্য হয়ে থাকে তার প্রভাব ফলে পড়েছে কারণ বিজ্ঞানের বিষয়গুলো বেশ কঠিন। 

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে  ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। অনেক সেটিকে হাইব্রিড জিপিএ-৫ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে চালু হওয়া গ্রেডিং পদ্ধতিতে সেটিই সর্বোচ্চ রেকর্ড এবং এই রেকর্ড ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের অটোপাসকেও হার মানিয়েছে।  জিপিএ-৫ বৃদ্ধির তিনটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বাসায় বেশি বেশি প্রস্তুতি নিতে পেরেছিলেন। আর এই সিলেবাস তাদের বেশ আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যদিও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস অনুসরণ করে একটি টপিক বা লেসনের ধারণা পাওয়া কষ্টকর। এটি এক ধরনের অসম্পূর্ণ লেখাপড়া, তারপরেও এটি করতে হয়েছে অবস্থা বিবেচনায়। জেএসসি ও এসএসসির ফল হিসেবে আবশ্যিক বিষয়ের নম্বর দেওয়া আর একটি কারণ। তৃতীয় কারণটি হচ্ছে ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষা না নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে মূল্যায়ন। উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি অনেকটাই কঠিন, অনেক শিক্ষার্থী এখানে অকৃতকার্য হয়। ঐ বছর  সেটি না থাকায় মূল্যায়ন অনেকটাই সহজতর হয়েছে। 

উচ্চ মাধ্যমকি পরীক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। কারণ এটি শিক্ষাজীবনে বাঁক বদলের সময়কাল। উচ্চ মাধ্যমিকে এসএসসি থেকে সময় পাওয়া যায় কম অথচ প্রতিটি বিষয়ের ভল্যিয়ুম থাকে কয়েকগুণ বেশি। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা হাতেগোণা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সবাই তাদের পুরতন ও চিরাচরিত প্রতিষ্ঠান ছেড়ে, বন্ধুদের ছেড়ে, শিক্ষকদের ছেড়ে নতুন এক পরিবেশে শিক্ষাগ্রহণ করতে যান। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতেই তাদের সময় চলে যায়, এর মধ্যে হাজির হয় পরীক্ষা। এই সব দিক বিবেচনায় উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষার একটি ভিন্নমাত্রা রয়েছে, ভিন্ন দিক রয়েছে। আবার এই ফলই উচচশিক্ষায় কে কোন ধরনের ডিসিপ্লিনে পড়বেন নাকি কর্মজীবনে প্রবেশ করবেন সেটিও কিন্তু নির্ধারিত হয় এই ফলের ওপরই। সবদিকে দিয়ে বিবেচনা করে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল একটি জটিল সমীকরণের ওপর প্রতিষ্ঠিত।  সব প্রতিকূলতা ফেস করে যারা নিজেদেরকে পড়াশুনায় নিয়োজিত রাখতে পারেন, তাদের মধ্যে থেকেই সাফল্যের মালা গাঁথাদের আমরা দেখতে পাই। যারা কৃতকার্য হয়েছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানাই, যারা হতে পারেননি তাদের ভেঙ্গে পড়ার কিছু নেই। জীবনের সব সাফল্যই কিন্তু পাবলিক পরীক্ষার ফলের ওপর নির্ভর করেনা। এ পৃথিবীতে অনেক সফল ব্যক্তিত্ব আছেন যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষাই নেই। আবার অনেকের ছিলো কিন্তু তা উল্লেখ করার মতো কিছু না। কাজেই ‘ফেইলার ইজ দি পিলার অব সাকসেস’ কথাটি মনে রাখতে হবে। ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। তবে তিন লাখ শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার কারণ কিন্তু এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। আর শুধু শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপালেও হবেনা। এর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া রাষ্ট্রের পবিত্র দায়িত্ব। রাষ্ট্রের বাইরে যদি একাজে কেউ বা কোনো সংস্থা এগিয়ে আসে রাষ্ট্রের উচিত হবে তাদের সহযোগিতা করা। 

 

পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ - dainik shiksha পুলিশ ভেরিফিকেশনে রাজনৈতিক পরিচয় না দেখার সুপারিশ সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম - dainik shiksha ফেসবুকে সতর্কবার্তা দিলেন সারজিস আলম আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে - dainik shiksha আওয়ামী আমলে শত কোটি টাকা লুট শিক্ষা প্রকৌশলের চট্টগ্রাম দপ্তরে প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন করা হয়েছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটির তালিকা ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে - dainik shiksha ছাত্ররা রাজনৈতিক দল ঘোষণা করবে কি না জনগণ নির্ধারণ করবে কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি - dainik shiksha কুয়েটে ভর্তি আবেদন শুরু ৪ ডিসেম্বর, পরীক্ষা ১১ জানুয়ারি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032880306243896