বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ও আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচির মধ্যেই সাভার ও আশুলিয়ায় বিভিন্ন তৈরি পোশাক কারখানায় হঠাৎ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। দুপুর ১টার পর অনেক পোশাক কারখানা উৎপাদন বন্ধ করে শ্রমিকদের ছুটি দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ।
পোশাক কারখানার মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, চলমান সংকটে কারখানা চালানো এখন অনেকটাই অনিশ্চয়তার মুখে।
এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে কারখানায় কাজ বন্ধ রাখার আহ্বান জানান নেতারা।
তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোন নির্দেশনা না দেওয়া সকাল থেকেই কারখানা খোলা রাখেন মালিকরা। তবে অসহযোগের মধ্যে কারখানায় হাজিরা নিশ্চিত করতে এদিন দুর্ভোগের কবলে পড়েন কয়েক লাখ শ্রমিক।
শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় ১৮০০ শিল্প কারখানায় কাজ করেন ১০ লাখের বেশি শ্রমিক।
সাভারে অন্যতম বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানা আল-মুসলিম গ্রুপের কারখানাগুলোতে দুপুরের বিরতিতে ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এ সময় একযোগে ৩০ হাজার শ্রমিক সড়কে নেমে এলে বদলে যায় অসহযোগের চিত্রপট।
শ্রমিকদের অনেকেই বিশেষ করে নারীরা এসময় বাসা বাড়িতে চলে গেলেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অভিমুখে অগ্রসর হতে দেখা গেছে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের।
আল মুসলিম গ্রুপের কর্ণধার আলহাজ্ব শেখ মো. আব্দুল্লাহ বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিল্পাঞ্চল সাভারের একাধিক তৈরি পোশাক মালিক জানান, জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে ইন্টারনেট, কারখানা ও বন্দর বন্ধ থাকায় তৈরি পোশাক খাতের বেশ কিছু কোম্পানিকে নিজস্ব খরচে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে পাঠাতে না পারায় অনেক বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান আবার মূল্যছাড়ও দাবি করছে। এমনকি নতুন ক্রয়াদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা কিছুটা ধীরে চলো নীতি গ্ৰহণ করেছে।
বর্তমান অস্থিরতা দীর্ঘায়িত হলে বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে ক্রয়াদেশ অন্য দেশে সরিয়ে নিতে পারেন- এমন শংকা তৈরি পোশাক মালিকদের আচ্ছন্ন করে রেখেছে বলেও জানান তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের মাঝে শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম।
পুলিশ সুপার জানান, বহিরাগতদের চাপেই কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছুটি ঘোষণার বিষয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর কোন সিদ্ধান্ত নেই। বহিরাগতরা যেভাবে কারখানার সামনে গিয়ে অস্থিরতা তৈরি করছেন, তাতে নিরাপত্তার কারণে পোশাকশিল্প মালিকরা কারখানা ছুটি দিতে বাধ্য হয়েছেন।