সাহারায় ছোবল! - দৈনিকশিক্ষা

সাহারায় ছোবল!

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

ধু ধু মরু প্রান্তর। আফ্রিকা মহাদেশে ৯২ লাখ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত সাহারা মরুভূমি। বিশ্বের বৃহত্তম এই মরুভূমিই আফ্রিকার ২৫ শতাংশ অধিকার করে আছে।

সাহারা মরুভূমিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আফ্রিকান দেশগুলিতে অনেক দিন ধরেই নজর রয়েছে চীনের। সেখানে বিভিন্ন চীনা সংস্থা ঘাঁটি গেড়েছে। গড়ে উঠেছে শিল্প।

আফ্রিকা মরুভূমি-সর্বস্ব দেশ হলেও মাটির নীচে লুকিয়ে আছে তার আসল সম্পদ। একাধিক আফ্রিকান দেশই প্রভূত খনিজ সম্পদের অধিকারী। আর সেখানেই আগ্রহী চীন।

সোনা, লিথিয়াম, টাইটেনিয়াম— দুর্লভ ধাতুর খনি রয়েছে আফ্রিকায়। অভিযোগ, চীনারা এসে মাটি খুঁড়ে সেই ধাতু সংগ্রহ করেন। চীনে নিয়ে গিয়ে তা কাজে লাগানো হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই এই ব্যবস্থা চলে আসছে।

সুলভে শ্রমিক খাটিয়ে খনি থেকে মূল্যবান দ্রব্য উত্তোলন করানো হয়। পরিবর্তে আফ্রিকানদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না বলে অভিযোগ। চীনে শি জিনপিং সরকারের আমলে এই ‘শোষণ’ বেড়ে যায়।

তবে সময় বদলায়। চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে আফ্রিকাও। নামিবিয়া, কঙ্গো, নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলিতে ইতিমধ্যেই প্রতিরোধ গড়ে উঠতে দেখা গিয়েছে।

আফ্রিকায় এই খনিজ পদার্থের ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের হরণ মেনে নিতে পারছেন না দেশের মানুষ। প্রশাসনের তরফেও প্রতিরোধের ইঙ্গিত মিলেছে।

আফ্রিকার সর্ববৃহৎ অর্থনীতি নাইজেরিয়া। এই দেশের সরকার বেশ কয়েকটি বেআইনি চিনা সংস্থার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। খনি সংক্রান্ত কর্মসূচি স্থগিত রাখতে হয়েছে চীনাদের।

চীনা সংস্থা রুইলাই মাইনিং কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা নাইজেরিয়ার মাটি থেকে বেআইনি ভাবে টাইটানিয়াম আকরিক তুলে নিচ্ছে। ওই চীনা সংস্থাকে বাতিল করেছে সরকার।

মে মাসে একই ভাবে চিনের খনি সংস্থা জিনফেং ইনভেস্টমেন্টের লাইসেন্স বাতিল করেছিল আর এক আফ্রিকান দেশ নামিবিয়া। ইকনমিক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সংস্থাটি লিথিয়াম উত্তোলনের লাইসেন্স বেআইনি ভাবে আদায় করে নিয়েছিল।

কঙ্গোর দক্ষিণ কিভু প্রদেশে বেআইনি ভাবে সোনার খনিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছিল কয়েকটি চিনা সংস্থার বিরুদ্ধে। খবর প্রকাশ্যে আসার পরেই ওই এলাকায় মোট ছ’টি সংস্থার কাজ বন্ধ করে দিয়েছে কঙ্গো সরকার।

আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী দেশ ঘানা। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে সেখানকার সরকার ৩৩ জন চীনা কর্মীকে গ্রেফতার করেছিল। অবৈধ সোনার খনিতে কাজের অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে। ঘানায় বর্তমানে বিভিন্ন খনি সংক্রান্ত কাজের সঙ্গে যুক্ত অন্তত ৩০ হাজার প্রবাসী চিনা নাগরিক রয়েছেন।

জ়াম্বিয়াতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে চীনা সংস্থাগুলি। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে অবৈধ খনিজ উত্তোলনের অভিযোগে সেখানেও ৩১ জন চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বর্তমানে জ়াম্বিয়াতে চীনা প্রবাসীর সংখ্যা ২২ হাজার।

শুধু সরকারি প্রতিরোধই নয়, আফ্রিকান নাগরিকেরাও চীনের উপর ক্ষুব্ধ। প্রায়ই শোনা যায়, চীনাদের উপর হামলা হয়েছে আফ্রিকার কোনও দেশে। গত ২ সেপ্টেম্বরের এক হামলায় দু’জন চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

কঙ্গোর উত্তর-পূর্ব এলাকায় সোনাবোঝাই গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন চীনারা। তাতে হামলা চালান এক দল আফ্রিকান। এই ঘটনা কঙ্গোয় চীনাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।

ইদানীং আফ্রিকায় চীনাদের উপর আকছার হামলা হচ্ছে। এই ধরনের আক্রমণ অনেক বেড়ে গিয়েছে। গত বছরের মার্চ মাসে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে একটি চিনা সোনার খনিতে কর্মরত ন’জনকে খুন করা হয়।

আফ্রিকার কিছু কিছু দেশে চীনা সংস্থাগুলি স্থানীয় শিশু, কিশোরদের খনিজ সম্পদ উত্তোলনের কাজে লাগায় বলে অভিযোগ। ব্রিটেনের একটি অসরকারি সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধু কঙ্গোতেই কোবাল্ট, লিথিয়ামের মতো খনিতে চীনা সংস্থার হয়ে ৪০ হাজার আফ্রিকান শিশু কাজ করে।

আফ্রিকার গর্ভজাত বিরল সমস্ত ধাতুই চীনের অর্থনীতির সাফল্যের অন্যতম কারণ। চিনে বৈদ্যুতিন যানবাহনের ইন্ডাস্ট্রি যে ফুলেফেঁপে উঠেছে, তার নেপথ্যে রয়েছে আফ্রিকা থেকে তুলে আনা সম্পদ।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে সাহারা মরুভূমি সংলগ্ন আফ্রিকা থেকে মোট হাজার কোটি ডলারের খনিজ সম্পদ চিনে গিয়েছে। আফ্রিকায় চীনের এই বাড়বাড়ন্তের দিকে নজর রেখেছে আমেরিকাও।

চীনা আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আফ্রিকান প্রতিরোধকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন কূটনীতিকদের একাংশ। তবে অন্য অংশের দাবি, এই প্রতিরোধে আদৌ লাভ হবে না। কারণ, আফ্রিকার অর্থবল নেই। সূত্র: আনন্দবাজার

সিলেট বোর্ডের স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর - dainik shiksha সিলেট বোর্ডের স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পর শিক্ষাসচিব ও মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে একি বললেন অধ্যক্ষ! - dainik shiksha শিক্ষাসচিব ও মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে একি বললেন অধ্যক্ষ! যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছেন শিক্ষার সেই ডিডি - dainik shiksha যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দিচ্ছেন শিক্ষার সেই ডিডি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন জাতির জন্য মহাসংকট - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলন জাতির জন্য মহাসংকট কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে আহমদ ছফার বইয়ে ছফার প্রচ্ছদই নেই - dainik shiksha আহমদ ছফার বইয়ে ছফার প্রচ্ছদই নেই আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলে - dainik shiksha আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষা এপ্রিলে শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়, অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে : ডিএমপি কমিশনার - dainik shiksha শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়, অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে : ডিএমপি কমিশনার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে - dainik shiksha র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা কলেজগুলোর নাম এক নজরে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059151649475098