সংসদ নির্বাচন ও অবরোধ-হরতালে ঘুরপাক খাচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। সংসদ নির্বাচনের কারণে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সময়সূচি নির্ধারণ করতে পারছে না মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। দেশব্যাপী একযোগে প্রশিক্ষণ দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। থানাভিত্তিক সুবিধাজনক সময়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে ইতোমধ্যে অন্তত দু’বার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেছাতে হয়েছে। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন ।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য সারাদেশের প্রায় ৪৫ হাজার কেন্দ্রে প্রায় দশ লাখের মতো প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারকে দু’দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে জানা গেছে।
ভোটগ্রহণের জন্য ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সূচি গতকাল নাগাদ চূড়ান্ত হয়নি। তবে আগামী ২০ থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ দেয়া হবে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসির দু’জন মাস্টার ট্রেইনার জানিয়েছেন।
এদিকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হচ্ছে। এই দুই শ্রেণীর সব বইয়ের পান্ডুলিপিও (পাঠ্যক্রম) এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। বাকি বিষয়গুলোর বই ছাপার কাজও শেষ হয়নি।
অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীতে ১৩টি করে বিষয়ের বই পাঠদান হবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে মোট দশটি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণীতে মোট বই ১৩টি।
রাজধানীর একটি থানার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নতুন শিক্ষাক্রমের মাস্টার ট্রেইনার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণের সময়সূচি ইতোমধ্যে দু’তিন দফা পেছানো হয়েছে। কিন্তু ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ শেষ করতেই হবে। নতুন ও শিক্ষাক্রম ছাড়াই আপাতত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।’
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও মাউশি থেকে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষকরা এবার সাতদিনের প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। সারাদেশের নবম-দশম শ্রেণীতে পাঠদানকারী প্রায় চার লাখ বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। মাউশি শিক্ষকদের এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আগামী ১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করতে চায়।
এ বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল বলেছেন, ‘আমরা সারাদেশে একসঙ্গে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছিলাম। এই সময়ে যেহেতু ইলেকশন, এ কারণে আমাদের মধ্যে সমন্বয় হচ্ছে না। এ কারণে প্রতি উপজেলায় তাদের সুবিধাজনক সময়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
মাউশি জানিয়েছে, সারাদেশের সরকার অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন লাখ ৭৫ হাজারের মতো শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। এছাড়া অনুমোদনহীন অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন ও এমনকি কোচিং সেন্টারের শিক্ষকরাও এই প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু সংসদ নির্বাচনের আগে সব শিক্ষকের প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব নয় বলে মাউশি কর্মকর্তারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রথম পর্যায়ে সরকারি, এমপিওভুক্ত ও অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাড়ে তিন লাখের বেশি শিক্ষককে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেবো। এই প্রশিক্ষণ ১৭ ডিসেম্বর শুরু হবে; ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।’
অনুমোদনহীন ও অনেক কোচিং সেন্টারের শিক্ষক প্রশিক্ষণ নেয়ার আবেদন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবাইকে আমরা এখন প্রশিক্ষণ দিতে পারব না। এদের প্রশিক্ষণ পরে বিবেচনা করা হবে।’
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেণী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর আগে ও পরে ‘হরতাল’ ও ‘অবরোধ’ কর্মসূচি থাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেছানো হয়েছে।
পরবর্তীতে ৯ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সূচি প্রকাশ করা হয়। এই সূচি অনুযায়ীও প্রশিক্ষণ শুরু হয়নি। ওইদিন প্রথম পর্যায়ে ইআইআইএন (এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর)-ধারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
দু’জন থানা শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাস্টার ট্রেইনারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের পাশাপাশি ইসির প্রশিক্ষণের জন্যও তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ তাদের ভোট গ্রহণ এবং নতুন শিক্ষাক্রম-এই ধরণের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই দুই প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের অন্তত নয়দিন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে ১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।
এ কারণে নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণের ‘ফাঁকে ফাঁকে’ উপজেলাওয়ারি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলা ও থানা বা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা এখন নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করবেন।
রাজধানীর একটি থানার নির্বাচনী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল জানিয়েছেন, ‘ভোট গ্রহণকারী ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ২০ ডিসেম্বর থেকে হতে পারে। তবে এ সময়সূচি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’
জানতে চাইলে রাজধানীর তেজগাঁও নাজনীন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘নির্বাচন প্রশিক্ষণ এবং নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ কোনোকিছুর শিডিউলের (সূচি) নোটিশ আমরা এখন পর্যন্ত পায়নি।’
এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই স্বল্প সময়ে শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ কীভাবে দেয়া সম্ভব- তা বুঝতে পারছি না। এরপরও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।’