ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ সমাগত। এ সময় যারা কোরবানির পশু ক্রয় করতে হাটে যান তাদের মধ্যে অধিকাংশেরই পশু পছন্দ বা দরদাম করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না বললেই চলে। অথবা থাকলেও খুব কম। কারণ বছরে শুধু এই ঈদকে কেন্দ্র করেই বেশির ভাগ মানুষের পশুর হাটে যাওয়া হয়। তাই পশু নির্বাচনের কিছু মৌলিক বিষয় আমাদের জানা থাকলে নির্বাচনের ভুলভ্রান্তি কম হবে এবং একটি উৎকৃষ্টমানের পশু ক্রয় করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে হাটের পাশাপাশি অনলাইনে গরু কেনাবেচাও বেশ জমে উঠেছে এখন। ইতোমধ্যে বেশকিছু পোর্টাল বা প্ল্যাটফরম অনলাইনে গরু কেনাবেচায় নজর কেড়েছে। সরাসরি হাট কিংবা অনলাইন যেখান থেকেই কোরবানির গরু কেনা হোক না কেন এ বিষয়ে আমাদের একটু যত্নবান হতে হবে।
স্বাস্থ্য ও বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানিতে বেশির ভাগ মানুষই চর্বিযুক্ত নাদুসনুদুস পশু নির্বাচন করে থাকেন। যা একটি ভুল ধারণা বা ব্যাপারটা এতটা গভীরে কখনো ভাবিনি আমরা। স্বাস্থ্যগত দিক চিন্তা করলে দেখা যায়, পশুর চর্বি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বৃদ্ধি করে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ ও শারীরিক ওজন বৃদ্ধিতে মুখ্য ভূমিকা রাখে। পশুর চর্বিতে প্রচুর পরিমাণে খারাপ কোলেস্টেরল বিদ্যমান থাকায় তা হৃৎপিন্ডে ব্লক তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সুস্থ গরু চেনার উপায়:
১. অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মোটাতাজাকরণ ওষুধ খাইয়ে স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত মোটাতাজা করে হাটে নিয়ে আসেন। এসব গরু অন্যসব গরুর চাইতে অপ্রত্যাশিত ফোলা থাকে। এমনকি খুব একটা নড়াচড়াও করে না, ঝিমাতে থাকে। লক্ষ্য করুন আপনার পছন্দের গরু চটপটে কি না? কারণ, স্টেরয়েড খাওয়ালে গরু নড়াচড়ার বদলে ঝিম মেরে থাকবে। এ ছাড়া স্টেরয়েড ট্যাবলেট খাওয়ানো গরুর ঊরুতে প্রচুর মাংস থাকে। তাই এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
২. শিং ভাঙা, লেজ কাটা, জিহ্বা, ক্ষুর, মুখ, গোড়ালি খত আছে কি না তা ভালো করে দেখে নিতে হবে। ৩. সুস্থ গরু চিনতে হলে পাঁজরের হাড়েও খেয়াল করতে হবে। সুস্থ গরুর পাঁজরের হাড়ে উঁচু নিচু থাকে এবং চোখে নড়াচড়া করবে।
৪. এ ছাড়া যদি গরুর নাকের ওপরটা ভেজা ভেজা থাকে তাহলে বুঝতে হবে গরু সুস্থ। এ ছাড়া গরুর মুখের সামনে খাবার ধরলে যদি সঙ্গে সঙ্গে জিহ্বা দিয়ে টেনে নেয় তাহলেও বোঝা যায় গরুটি সুস্থ কারণ অসুস্থ পশু খাবার খেতে চায় না।
৫. গরুর কুঁজ মোটা ও টানটান থাকলে বুঝতে হবে গরুটি সুস্থ। ৬. গরুর পাঁজরের হাড়ে যে তিন কোনা গর্ত থাকে যাকে ফ্লায়েন্ট জয়েন্ট বলে। তাতে কোনা রয়েছে কিনা সেটি খেয়াল রাখতে হবে।
৮. গরুর শরীরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে বুঝবেন গরুটি অসুস্থ।
৯. সুস্থ গরুর চামড়ার ওপর দিয়ে কয়েকটা পাঁজরের হাড় বোঝা যাবে। ১০. সুস্থ গুরু বাঁধা অবস্থায় প্রায়ই যেনতেনভাবে ছুটতে চাইবে। ঘন ঘন লেজ নাড়বে। হাঁকডাকে জোরালো হবে। এ দুরন্তপনার মধ্যেও পরক্ষণেই আবার সামনে রাখা খাদ্যে মুখ ডোবাবে। ১১. সুস্থ গরু চেনার আরেকটি উপায় হচ্ছে মুখে জাবর কাটবে। ১৩. অসুস্থ গরুর শরীরে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের ওপর তাপমাত্রা থাকবে। দেখা যাবে পাতলা পায়খানা হচ্ছে। মুখ দিয়ে লালা ঝরছে। সামনে খাবার থাকলেও খাচ্ছে না, এমনকি জাবরও কাটছে না। তাই গরু কেনার সময় এসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।